ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ওই চক্র জড়িত

কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শোকজ হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শোকজ হয়নি

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া ১০ সদস্যের সিন্ডিকেটকে শোকজ করার কথা বললেও তিন দিনেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তা করেনি। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শোকজের বিষয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। অথচ গত মঙ্গলবার অভিবাসন বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশী মাইগ্রেন্টস (আরবিএম) সভাপতি ফিরোজ মান্নার সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় মিট দ্য প্রেসে মন্ত্রী ঘোষণা দেন ওই দিনই সিন্ডিকেটকে শোকজ করা হবে। সে সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা। মন্ত্রী বলেন, অভিযুক্ত ১০ এজেন্সির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের আজই শোকজ করা হবে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে আইন ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সংশ্লিষ্ট ১০ এজেন্সিকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করিনি। মালয়েশিয়ার সরকার ১০ এজেন্সিকে দিয়েছে, আমরা দেইনি। আমাদের কাছে সবাই সমান। যে আসুক... আপনি নিয়ে আসেন। কেউ ডিমান্ড (চাহিদাপত্র) নিয়ে আসুক, আমরা দিতে পারব। ১০ জনের বিরুদ্ধে আমি সব সময় ছিলাম, এখনও আছি। আমি সিন্ডিকেশনে বিশ্বাস করি না। আপনারা কেউ আমার কাছে দরখাস্ত করেন, দেখেন আমি তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেই। সিন্ডিকেটের বিষয়টি নিয়ে এর আগেও অনেক কথা হয়েছে। তারা কি করেছে বিষয়টি আমি অবগত নই। শোকজের জবাব পেলেই আমি মালয়েশিয়া সফরে যাব। ইতোমধ্যে হাই কমিশনের মাধ্যমে সে দেশের মানবসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গের আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মালয়েশিয়া সফরের আগে ১০ এজেন্সি সম্পর্কে আমাকে ভালভাবে জানতে হবে। তা না হলে আমি মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারব না। মালয়েশিয়ায় ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে কি না আমার জানা নেই। অভিযুক্ত দশ এজেন্সি হলো ইউনিক ইস্টার্ন, ক্যারিয়ার ওভারসিজ, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, প্যাসেজ এ্যাসোসিয়েটস, আমিন ট্যুরস এ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস এ্যান্ড টুরিজম ও আল ইসলাম ওভারসিজ। সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, উভয় দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার পর এ বিষয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসপিপিএ সিস্টেমে অনলাইন পদ্ধতিতে চলমান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এতে করে দেশের ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনা বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ১০ এজেন্সি আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নোটিস জারি করেছে মালয়েশিয়া সরকার। দেশটিতে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সিন্ডিকেট নিয়ে আলোচনা হয়। পরে গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার মন্ত্রী পরিষদের এক বৈঠকে ১০ এজেন্সির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশী এক নাগরিক ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের ১০ এজেন্সিকে নিয়োগের সুযোগ দেয়। কর্মী নিয়োগ করে গত দেড় বছরে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনা তদন্তে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারার কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার খবর সঠিক নয়। শ্রমবাজার খোলা আছে এবং আগামীতেও থাকবে। জিটুজি প্লাস চুক্তির আলোকে সে দেশের বেসরকারী কোম্পানি সিনারফ্ল্যাক্সে-র অনলাইন সিস্টেম এসপিপিএর মাধ্যমে যেভাবে কর্মী যাচ্ছিল শুধুমাত্র এই সিস্টেমটি (পদ্ধতি) বাতিল করেছে মালয়েশিয়া সরকার। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই পদ্ধতিতে আর কোন লোক যাবে না। তবে পাইপলাইনে থাকা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কর্মী এসপিপিএ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়া যেতে কোন বাধা নেই। জিটুজি প্লাস পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে ২ লাখ ৬৯ হাজার কর্মীর চাহিদা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে ২ লাখ ৩৫ হাজার কর্মীর ভিসা সত্যায়ন করেছে মালয়েশিয়া হাইকমিশন। মালয়েশীয় ৮৬ কোম্পানির ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে প্রায় ৩২ হাজার ভিসা সত্যায়ন করা হয়নি। এর মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ২ লাখ কর্মীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সদ্যবিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বলেন, মালয়েশিয়া ১০ এসেন্সিকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিয়েছিল তারা শুধুমাত্র গেটওয়ে হিসেবে কাজ করেছে। তারা কর্মীদের কাছ থেকে সরকার বেঁধে দেয়া টাকার বাইরে কোন টাকা নেয়নি। টাকা যদি কেউ বেশি নিয়ে থাকে তাহলে এই ১০ এজেন্সিকে যে সব প্রতিষ্ঠান কর্মী সরবরাহ করেছে তারাই নিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা বলা হলেও আসলে এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। মালয়েশিয়ায় সরকার বদল হয়েছে তারা আগের সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। তার অংশ হিসেবে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্তও রয়েছে। এখানে আমাদের দোষারোপ করা কোনভাবেই উচিত নয়। মন্ত্রণালয় নাকি আমাদের শোকজ করবে। করুক, আমরা জবাব দেব। আমাদের মধ্যে কোন ভয় নেই।
×