ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপাদনে যাবে এ মাসেই

বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থানে গড়ে উঠছে ওষুধ কারখানা

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থানে গড়ে উঠছে ওষুধ কারখানা

নিখিল মানখিন, গোপালগঞ্জ থেকে ফিরে ॥ অবশেষে সেপ্টেম্বরে সরকারী উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ওষুধ কারখানা। এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারী ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) এই থার্ড প্ল্যান্ট প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। এই প্রকল্পের চারটি ইউনিটের মধ্যে পেনিসিলিন ইউনিটটি সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে এটি পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যাবে। তাছাড়া অন্য ইউনিটগুলোর পূর্ণ উৎপাদনে যেতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। বর্তমানে ইডিসিএল সরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মোট ওষুধের চাহিদার ৭২ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে। এই কারাখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়া পূর্ণমাত্রায় শুরু হলে শতভাগ ওষুধ সরবরাহ এখান থেকে সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গোপালগঞ্জের ওই ওষুধ কারখানা সরেজমিন ঘুরে এই তথ্য জানা গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠকে বলেন, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন ওষুধ সেক্টরে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিবে। বেসরকারীভাবে উৎপাদিত বাংলাদেশের ওষুধ বর্তমানে বিশ্বের শতাধিক দেশে রফতানি করা হচ্ছে। আর সরকারী উদ্যোগে এ প্রকল্প চালু হলে দেশের সকল সরকারী হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সরকারী ওষুধ বিনামূল্যে ওষুধ জনগণের মাঝে বিতরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বর্তমানে ইডিসিএল সরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মোট ওষুধের চাহিদার ৭২ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে। এই কারাখানা উৎপাদন প্রক্রিয়া পূর্ণমাত্রায় শুরু হলে শতভাগ ওষুধ সরবরাহ এখান থেকে সম্ভব হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। উদ্বোধন করার প্রস্তুতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ২৮ আগস্ট প্রকল্পটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। কারখানার পুরো ক্যাম্পাস সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল আয়তনের ক্যাম্পাসটির চারপাশে রয়েছে সুরক্ষিত সীমানা দেয়াল। ভবনসমূহের মূল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কক্ষসমূহের সাজানোর কাজ চলছে। নির্মাণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে কয়েক শ’ শ্রমিক। বিভিন্ন গাছপালা দ্বারা ক্যাম্পাসটির শোভাবর্ধন করা হয়েছে। ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অধ্যাপক ডাঃ এহসানুল কবির জনকণ্ঠকে জানান, দেশের সকল সরকারী হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সরকার বিনামূল্যে প্রায় সব প্রকার ওষুধ জনগণের মাঝে বিতরণ করে থাকে। আর এই ওষুধের প্রায় ৭২ শতাংশ যে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করে সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের শতভাগ মালিকানাধীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন একমাত্র রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি লোক এই ওষুধ বিনামূল্যে সেবন করে থাকে। ইডিসিএল এর রয়েছে ঢাকা ও বগুড়ায় দুটি প্ল্যান্ট এবং খুনায় একটি ল্যাটেক্স প্ল্যান্ট। সরকারের চলমান স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আরও বেশি গতিশীল এবং জোরদার করার লক্ষ্যে এবং সরকারী অর্থ সাশ্রয় করে বিদেশে ওষুধ রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) এই থার্ড প্ল্যান্ট প্রকল্পটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি গোপালগঞ্জ জেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১৫ সালে এটির নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু হয়। দশ একর জমির ওপর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সরকারী এই ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এই পুরো ব্যয় বহন করা হচ্ছে সরকারী অর্থায়নের মাধ্যমে। অধ্যাপক ডাঃ এহসানুল কবির আরও জানান, এই ইউনিটে পেনিসিলিন জাতীয় ১২ ধরনের এন্টিবায়োটিক ওষুধ উৎপাদন করা হবে। ইডিসিএল’র নতুন এই কারখানায় ৭৭৮ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। বর্তমানে ইডিসিএল সরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মোট ওষুধের চাহিদার ৭২ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে। এই কারাখানা উৎপাদন প্রক্রিয়া পূর্ণমাত্রায় শুরু হলে শতভাগ ওষুধ সরবরাহ এখান থেকে সম্ভব হবে। ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ এহসানুল কবির জনকণ্ঠকে আরও জানান, কারখানাটি চালু হলে উৎপাদন করা হবে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ও ইনজেকশন, আইভি ফ্লুইড, পেনিসিলিন ও আয়রন ট্যাবলেট। এই কারখানার মাধ্যমে বছরে ৩ হাজার ৩শ’ মিলিয়ন জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন, ৩ হাজার ২ মিলিয়ন পিল, ১৮১ মিলিয়ন পেনিসিলিন ট্যাবলেট, ২১৭ মিলিয়ন পেনিসিলিন ক্যাপসুল উৎপাদন হবে। প্রকল্পটির প্রকৌশলীরা জানান, প্রকল্পটির স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। সেগুলো হলো প্রকল্পটির অবস্থান ঢাকা-খুলনা বিশ্বরোডের একেবারে পাশে এবং পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে এর সময়ের দূরত্ব হবে মাত্র ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। এছাড়া স্বাধীনতার পর দক্ষিণবঙ্গে সরকারী কোন বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। অবহেলিত এই জনপদকে মূল ধারার সরেঙ্গ সম্পৃক্ত করতে এবং এই অঞ্চলের জনসাধারণের অর্থনেতিক কর্মকা-ে গতিশীলতা আনতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
×