ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী জ্বর- ভাইরাল ভাইরাস আর শামুক-ইঁদুর

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৬ আগস্ট ২০১৮

  নির্বাচনী জ্বর- ভাইরাল ভাইরাস আর শামুক-ইঁদুর

সমুদ্র হক ॥ নিকটে নির্বাচনী জ¦র (ইলেকশন ফিভার)। কাঁপুনি এখনি শুরু। এবারের এই জ¦র ভাইরাস হতে পারে। এমন কথা সুধীজনের। সাবধান থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল জীবাণু আক্রমণ করেছে। ছড়িয়ে পড়তে কতক্ষণ। যে ফেসবুক ছিল প্রীতিকর তা এখন ভীতিকর। ভাইরালের কুশলীবরা শামুকের মতো কৌশলী হয়েছে। দ্রুত মাথা লুকাতে পারে। নিশাচর ইঁদুরের মতো দিনভর গর্তে লুকিয়ে রাতে বের হচ্ছেন। তারা জানে দিনে কিভাবে লুকিয়ে থাকতে হয়। শিয়াল জানে এক কুমির ছানা ক’বার দেখাতে হয়। ‘তারাও’ তাই করছে। দাসেরা জানে কি ভাবে পিঠ বাঁচিয়ে চলতে হয়। এদিকে দুয়ারে কোরবানির ঈদ। সম্ভাব্য প্রার্থীদের দিকে তাকিয়ে পাবলিক। এলাকায় কে কত বড় গরু কোরবানি দেন। ইলেকশনের খরচ বলে কথা! নির্বাচন কমিশন হিসেব বেঁধে দেয়ার আগে যতটা পারা যায় খরচ করা। যে ভাবেই হোক ভোটারদের মনে ঢুকতেই হবে (!)। ‘এবার বুঝি এতটা সহজ হবে না...’ মন্তব্য সাধারণের। সরকারী ও বিরোধী দলগুলোর কাছে হিসাব চাইবে সাধারণ জনগণ। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারী দল অনেকটাই এগিয়ে আছে উন্নয়নের মাপকাঠিতে। উন্নয়নের পরিকল্পনা আরও আছে। তারপরও নির্বাচনের আগে সাধারণের মুখোমুখি হতে হবে জনপ্রতিনিধিদের। বাদ যাবে না বিরোধী দলগুলোও। বক্তৃতায় জনগণ জনগণ বলে যত কথা তারা বলেন তারা কি করেছেন এবং এখন কি করছেন তারও জবাবদিহিতা চাইবে মানুষ। এই সময়ের রাজনীতিকদের দেখে সাধারণের দর্শনেও ভাটা পড়ছে। জীবনের পেছনে ছুটতে থাকা মানুষ এখন ক্লান্ত। সব কিছুই মনে হয় এলেবেলে। প্রায় তিন বছর আগে (২০১৫) বিরোধী রাজনীতিকদের অজানা আন্দোলনের চরম মাশুল দিতে হয়েছে। সে সময় দুর্ভোগের ফেরে পড়ে প্রতি মুহূর্ত থাকতে হয়েছে শঙ্কায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই শঙ্কা আজও দূর হয়নি। সেই আন্দোলনকারীরা এখন তো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নানা গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনের ইস্যু খুঁজছে। তর সইছে না। ভার্চুয়াল জগতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার শুরু হয়েছে। মিথ্যা ঘটনার নাটক বানিয়ে ভাইরাল করে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবে তারা বিপাকেও পড়ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতির উদ্ভব হয়েছে। গোয়েবল্সীয় কায়দায় মিথ্যাকে কথিত সত্য বলে চালানোর দিন ফুড়িয়েছে। রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষ এখন ভাবছে। কি শহর কি কথা, হচ্ছেটা কি! নেতাদের কথা শুনে ‘আতি নেতা পাতি নেতা ফুঁচকে নেতা’ নেতার হাতারা পালাগানের কোরাসের মতো করে বলতে থাকে আহা বেশ বেশ বেশ....। হাটে মাঠে ঘাটে দোকান-বাসাবাড়িতে অফিসে চায়ের আড্ডায় একটাই কথা এরপর কী! বিরোধী রাজনীতিকদের একটা ধারা হয়েছে, কথায় কথায় জনগণকে টেনে আনা। তাদের একটি কমন কথা, জনগণ মেনে নেবে না। কি মেনে নেবে না জনগণ! তা বলা হয় না। মানুষের সহনীয় পর্যায়ের সীমারেখাটা জানা ও বোঝা দরকার রাজনীতিকদের। টিভি চ্যানেলগুলোও দর্শকদের ধরে রাখতে পারছে না। ক’জন দর্শক ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন টিভি চ্যানেল খুললেই ওই একই চিত্র-ওখানকার অবস্থা কি। আপনি কিছু শুনেছেন। দুর্ভোগ কতটা তা বলুন (ছবিতে তো দেখাই যাচ্ছে)......।’ টিভির সচিত্র সংবাদের দিকে তাকিয়ে মানুষ আঁচ করতে পারে না আসলেই হচ্ছেটা কি। এমনও শোনা যায় টিভি ক্যামেরা চলে গেলে আর কিছু নেই। টিভি চ্যানেলগুলোর টক শো নামের অনুষ্ঠানের প্রতি দর্শক-শ্রোতার আকর্ষণ অনেক কমেছে। অংশগ্রহণকারীদের পরিচিতি দেখলেই বুঝতে পারে তারা কি কথা বলবেন! কোন একটি ঘটনা ঘটার সঙ্গেই টক শো ওয়ালারা রেডি হয়ে যান। কে যে কি বলছেন, কিছুই আঁচ করা যায় না। অনেক সময় দেখা যায় প্রকৃত ঘটনার কাছে না গিয়ে স্তুতি আর স্তাবকতায় কালক্ষেপণ করছেন। এই অবস্থায় যারা এসব বিজ্ঞজনের কাছে কোন গঠনমূলক কথা ও সমালোচনা আশা করেন তারা তা পান না। মিডিয়ার অনেক রকমফের ঘটেছে। সংবাদপত্রের পাশাপাশি অনেক অনলাইন নিউজ এজেন্সি চালু হয়েছে। তবে সংবাদপত্রের যে বিশ্বাসযোগ্যতা আছে অনলাইনগুলোতে তা নেই। কত যে অনলাইন নিউজ এজেন্সি তার হিসাবও নেই। হাতে গোনা কয়েকটি অনলাইন ছাড়া বাকিগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত দু’তিন বছরে মুদিখানার দোকানের মতো অনলাইন চালু হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে দেশের প্রতিটি স্থান থেকে। খবর যদি পাঠকের পণ্য হয় তাহলে কত নকল পণ্য (ভুল ও মিথ্যা খবর) এসব অনলাইনে বিপণন হচ্ছে সেই হিসাব রাখা হয় না। সুধীজন বলেন, শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয় অনলাইনগুলোর লাগাম টেনে রাখা দরকার। এই অনলাইনগুলো থেকেও ভাইরাল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এরাও শিয়ালের মতো- কোন দিনের কার কুমির ছানা (খবর ও ছবি) কখন দেখাচ্ছে তা বুঝে ওঠা কঠিন। নিশাচর ইঁদুররাও এদের সঙ্গে আঁতাত করতে পারে। সিনিয়র সিটিজেন মশিহুল আলম বললেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাইরাল নির্বাচনী জ¦রে যেন ভাইরাস হয়ে না আসে সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।
×