ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বিশ্ব ব্যর্থ ॥ এ্যামনেস্টি

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ২৫ আগস্ট ২০১৮

রোহিঙ্গা সঙ্কট  সমাধানে বিশ্ব ব্যর্থ ॥ এ্যামনেস্টি

বিডিনিউজ ॥ রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটের একবছর হয়ে গেলেও বিশ্বনেতাদের ব্যর্থতায় রাখাইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানো মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মনে করে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গত আগস্টেই শুরু হয়েছিল বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়া শরণার্থী সঙ্কটের। কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে সশস্ত্র সংগঠন আরসার কয়েকদফা হামলার প্রেক্ষাপটে রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে নামে বর্মী সেনাবাহিনী। দমন-পীড়নের মুখে ওই বছরের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয়। এরপর থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, যা এখনো চলছে। মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। তবে মিয়ানমার সরকার তা অস্বীকার করে বলে আসছে, ওই অভিযান চালানো হয়েছে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে’। রাখাইনে মিয়ানমার বাহিনী কিভাবে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালিয়েছে তারও তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে এ্যামনেস্টি। শুক্রবার এ্যামনেস্টির এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়া ছাড়াও সেখানে স্থলমাইনও ব্যবহার করেছে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, জোরপূর্বক অনাহারে রাখা এবং দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনাও সেখানে ঘটানো হয়েছে। এ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান বিবৃতিতে বলেন, ‘এই বর্ষপূর্তি লজ্জাজনক একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। মানবতাবিরোধী সেসব অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিপজ্জনক যে বার্তা দিয়েছে, তা হলো বর্মী সেনাবাহিনী শুধু দায়মুক্তিই ভোগ করবে না, তারা ফের এ ধরনের নৃশংসতা চালাতে পারবে। আমাদের অবশ্যই আর এমন ঘটনা ঘটতে দেয়া উচিত হবে না।’ তিনি বলেন, একবছর হলো লাখ লাখ রোহিঙ্গা পরিকল্পিত হামলার মুখে পালিয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে অমানবিকভাবে বসবাস করছে। পাশাপাশি তাদের নির্যাতনকারী মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ স্বেচ্ছায় ঘরে ফেরার বিষয়টি উপহাসে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ খুলতে গত জুনে জাতিসংঘ এবং মিয়ানমার সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হলেও এর খসড়া ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তা আর আলোর মুখে দেখেনি। তবে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর আগে সেখানে ব্যাপক সংস্কারকাজ চালাতে হবে বলে জানিয়েছে এ্যামনেস্টি। গত জুনে এ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দমন অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ১২ জনের নাম উঠে আসে। এদের মধ্যে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লায়িং রয়েছেন। এদের আটক করে জবাবদিহিতার আওতায় আনার সুপারিশ করেছে এ্যামনেস্টি। বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হাজির করা এবং ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য তাদের অপরাধের তথ্যপ্রমাণ সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি খুঁজে বের করার সুপারিশ করেছে।
×