ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চামড়া পাচার, ডাকাতি, জালনোট, যানজট নিরসনসহ ঈদে সব কিছু বন্ধ করা হবে

ঢাকাসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২০ আগস্ট ২০১৮

 ঢাকাসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর নির্দেশ

শংকর কুমার দে ॥ এবারের পবিত্র ঈদ-উল-আজহা (কোরবানির ঈদ) সামনে রেখে পথে পথে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চামড়া পাচার, ডাকাতি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, জালনোটের ব্যবসা, প্রতারণা বন্ধে ও যানজট নিরসনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী ব্যাপক নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ঈদ কেন্দ্রিক অপরাধী কার্যক্রম বেড়ে চলায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ঈদের সময় সব ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধে প্রয়োজনীয় ওয়াট টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা ও চেক পোস্ট স্থাপন, টহল টিম গঠন করে মহাসড়ক পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও আনসার তাদের টহল জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত চব্বিশ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির ৫৭, জাল নোট চক্রের ৮, ৬ মাদক ব্যবসায়ী ও ৮ জন ছিনতাইকারীকে আটক করেছে। এসব অপরাধীদের কাছ থেকে ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের জাল নোট, ৬১ হাজার ১৫৯ ইয়াবা, ১২টি ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, প্রতি বছরই ঈদের আগে ডাকাতি, ছিনতাই-মলম পার্টি, জাল নোটের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। বেড়ে যায় পথে ঘাটের চাঁদাবাজি ও যানজট। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে ঈদ কেন্দ্রিক অপরাধী কার্যক্রম প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্দেশ পেয়ে ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছে। নির্বিঘেœ, নিরাপদে, নিশ্চিন্তে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উদযাপনের নিশ্চিত করার জন্য এ সময়ে বাস টার্মিনাল, নৌবন্দর, ফেরিঘাট ও রেলস্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র‌্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মোতায়েন দেয়া হয়েছে। পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, এবারের ঈদে পশুবাহী ট্রাকগুলো যাতে বাধা ছাড়াই নির্বিঘেœ নিজ গন্তব্যে যেতে পারে সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। কোরবানির পশুবাহী গাড়ি নিয়ে কোন বিশৃঙ্খলা হলে এবার ছাড় দেয়া হবে না। শুক্রবার বিকেলে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে যানজট পরিদর্শনে এসে আশুলিয়ার বাইপাইলে সাংবাদিকদের একথা বলেন পুলিশ প্রধান। আইজিপি বলেন, প্রতিবছর পশুবাহী গাড়িগুলো হাটে যাওয়ার সময় রাস্তায় জোর করে তাদের অন্য হাটে নেয়া হয়। কিন্তু এ বছর পুলিশের তৎপরতায় সড়কের কোথাও পশুবাহী ট্রাক আটকানো হচ্ছে না। বেপারিরা প্রয়োজনে নির্দিষ্ট হাটের ব্যানার গাড়িতে লাগিয়ে নিতে পারবেন, প্রয়োজনে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও জানান আইজিপি। এছাড়া ঈদে বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিক যাতে তাদের ন্যায্য মজরি পান ও কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে কারখানার মালিকদের প্রতি অনুরোধ করেন পুলিশের এই মহাপরিদর্শক। র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ঈদ-উল-আজহার দিন, এর আগে ও পরে দেশজুড়ে দুই সপ্তাহের নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে র‌্যাব। জনসাধারণের ঈদযাত্রা নির্র্বিঘœ করতে র‌্যাবের ফেসবুক পেজে দেশব্যাপী সব পথের নিয়মিত আপডেট দেয়া হবে। রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সবাইকে এ সুবিধা গ্রহণেরও আহ্বান জানান তিনি। শনিবার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পবিত্র ঈদ-উল-আজহাকে সমানে রেখে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন র‌্যাব ডিজি। পুলিশের পাশাপাশি আসন্ন ঈদ-উল-আজহায় মসজিদ, ঈদগাহ, মহাসড়ক, টার্মিনাল ও পশুর হাটে নির্বিঘœ নিরাপত্তার পরিকল্পনা নিয়েছে র‌্যাব। দেশজুড়ে এ বাহিনীর ২৪৫টি পেট্রোল টিম কাজ করবে এবং ৫৬টি স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে রাজধানীর এন্ট্রি পয়েন্টগুলোতে ২০টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। পশুর হাটের বেচাকেনা ও নিরাপত্তার স্বার্থে বড় বড় বাজারগুলোতে র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প থাকবে। যেসব বাজারে ক্যাম্প নেই সেখানে র‌্যাবের পেট্রোল টিম থাকবে। অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টির দৌরাত্ম্য রোধে র‌্যাব তৎপর রয়েছে। রাজধানীতে প্রধান জামাতসহ অন্যান্য ঈদ জামাতে র‌্যাবের নজরদারি থাকবে। ঈদ উপলক্ষে থ্রেট না থাকলেও সব ধরনের থ্রেটের বিষয় আমাদের মাথায় রয়েছে। আন্ডারগ্রাউন্ড বা সক্রিয় জঙ্গী সংগঠনগুলোর প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়কে বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট থাকবে। যানবাহনের ওভারস্পিড, নিয়ন্ত্রণহীন ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের নজরদারি করা হবে। ঈদের সময় হেলপারের হাতে গাড়ি না দিতে মালিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে। জঙ্গী, মাদক ও সাইবার অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও র‌্যাবের আলাদা ইউনিট কাজ করছে। দেশের বিভিন্নস্থানের পথে ঘাটে পশু বহনকারী ট্রাক ও যানবাহনগুলোতে চাঁদাবাজি ঘটার অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। যেখান থেকে যখনই অপরাধী কার্যক্রমের অভিযোগ আসবে তখনই দ্রুত অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশু ব্যবসায়ীদের দিনরাত অতিবাহিত হয় পথে বা গরুর হাটে। এসব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকে মূল্যবান পশু কিংবা বড় অঙ্কের নগদ অর্থ। তাই তারা এখন সবখানে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, ডাকাত, অজ্ঞান পার্টিসহ নানা ধরনের অপরাধী চক্রের টার্গেটে পরিণত হন। প্রতিবছরই দেখা যায় পশু ব্যবসায়ীরা সড়ক-মহাসড়কে নানাভাবে বিড়ম্বিত ও বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। পশু পরিবহনে চাঁদাবাজি ছিনতাই ডাকাতি পশু ব্যবসায়ীদের সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে পশুবাজারকেও প্রভাবিত করে এমন অপরাধী কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পথে পথে চাঁদা দিতে গিয়ে পশুর দাম বেড়ে যায়, যার মাশুল দিতে হয় ক্রেতাকে। এজন্য ঈদের আগে বিশেষ নিরাপত্তা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদের প্রাক্কালে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও কারখানা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মানুষজন যাতে নির্বিঘেœ ও শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উদযাপন করতে পারে সেজন্য সরকার দেশব্যাপী বিশেষ নিরপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চাঁদাবাজি বন্ধে এবং চামড়া ছিনতাই ও পাচার রোধে প্রয়োজনীয় ওয়াট টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা ও চেক পোস্ট স্থাপন করা হবে। ঈদের সময় সব ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধে মহাসড়ক পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও আনসার তাদের টহল জোরদার করবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা মহাসড়কের পাশে কোন ধরনের পশুর হাট বা হাট-বাজার বসতে দেবে না। যানজট এড়াতে ঈদের তিন দিন আগে থেকে ওষুধ, খাবার ও পশুবাহী ট্রাক ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে অন্য কোন যানবাহন চলাচলসহ বালুবোঝাই জলযানও চলাচল করতে দেয়া হবে না। অজ্ঞানপার্টিও সদস্যদের শনাক্ত করতে ও ছিনতাই প্রতিরোধে অস্থায়ী পশুর হাটগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। জালনোট শনাক্তকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মেশিন সরবরাহ করবে পশুর হাটগুলোতে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য লঞ্চ ও বাসগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মুসলিম ধর্মালম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ যাত্রা ও নিরপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
×