ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে ঘুরে বেড়ানো, প্রস্তুত বিনোদন কেন্দ্রগুলো

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২০ আগস্ট ২০১৮

ঈদের ছুটিতে ঘুরে বেড়ানো, প্রস্তুত বিনোদন কেন্দ্রগুলো

মোরসালিন মিজান ॥ কোরবানির ঈদ মূলত ত্যাগের। ভোগের ছবি সামনে থাকে। বেশি দৃশ্যমান হয়। হোক। ত্যাগের শিক্ষাটিই প্রকৃত। ঈদ-উল-আজহা সেকরিফাইস করতে শেখায়। অন্যের জন্য একটু সেকরিফাইস করতে পারার যে আনন্দ, না, অন্য কিছুতে পাওয়া যায় না। বিরল এ আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে আসে কোরবানির ঈদ। আগামী বুধবার সারা দেশে উদ্যাপিত হবে ঈদ-উল-আজহা। মুসলমান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহৎ উৎসব। এদিন নতুন করে মনের পশু বধ করার ব্রত গ্রহণ করবেন সবাই। ব্যস্ত থাকবেন। তবে পরের দিন থেকে ঈদের ছবিটা বিশেষ ফুটে ওঠবে। শুরু হবে বেড়ানো। ফাঁকা ঢাকায় নিজের মতো করে ঘুরে বেড়ানোর সে কী আনন্দ! আর এ আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় থিমপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ঈদের ছুটি চলাকালীন এসব জায়গায় ভিড় লেগে থাকে। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। সরকারী, বেসরকারী বিনোদনকেন্দ্রগুলো সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকা শিশুপার্ক ॥ শাহবাগে অবস্থিত শিশু পার্কের আবেদন এখনও ফুরোয়নি। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের দারুণ আকর্ষণ করে। ঈদে যারপরনাই মুখরিত থাকে শিশুপার্কটি। এ সময় প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার দর্শনার্থী শিশুপার্কে আসেন বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তাই সেভাবেই তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে পুরো পার্কটি ইতোমধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। রোজার ঈদের সময় রাইডগুলো রং করা হয়েছিল। সম্প্রতি মেরামত করা হয়েছে কিছু রাইড। আলোকসজ্জারও ব্যবস্থা করা হবে। এর পাশাপাশি পার্কের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ঢাকা শিশু পার্ক চার চারদিনের বিশেষ ঈদ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সাধারণ সময়ে বেলা ৩ থেকে রাত ৮ পর্যন্ত খোলা থাকে। ঈদের দিন শিশুপার্ক খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত। শিশুপার্কে বর্তমানে ১০টি রাইড রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩ মেরি-গো-রাউন্ড, লম্ফঝম্ফ, চাকা পায়ে চলা, টয় ট্রেন, উড়ন্তবিমান ও উড়ন্ত নভোযান। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি মাত্র ৮ টাকা টাকা। যে কোন রাইড উপভোগ করা যাবে ৬ টাকায়। ঈদে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিনা টিকেটে শিশু পার্কে প্রবেশ করতে পারবে। সব রাইড উপভোগ করতে পারবে। চিড়িয়াখানা ॥ ঈদের ছুটিতে রাজধানীবাসীর অন্যতম প্রধান গন্তব্য হয়ে ওঠে চিড়িয়াখানা। মূল শহর থেকে বেশ দূরে। মিরপুর। তাতে কী? ভিড় লেগে থাকে। পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে আনন্দঘন সময় কাটান অসংখ্য মানুষ। এবারও দর্শনার্থীদের ঢল নামবে। জানা যায়, প্রতিদিনের মতোই সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে চিড়িয়াখানা। প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। চিড়িয়াখানার কিউরেটর জানান, ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১ লাখ দর্শনার্থী চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেন। তাদের সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে একাধিক কমিটি। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের টহল থাকবে বলেও জানান তিনি। জাতীয় জাদুঘর ॥ ঈদ উপলক্ষে প্রস্তুত জাতীয় জাদুঘরও। শাহবাগে অবস্থিত জাদুঘরটিতে প্রচুর দর্শনার্থী সমাগম ঘটে। কিপার শিহাব শাহরিয়ার জানান, ঈদের দিন খোলা না থাকলেও, পরদিন সকাল ১১টা থেকে খোলা থাকবে জাদুঘর। অন্যান্য দিনগুলোতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত গ্যালারি ঘুরে দেখা যাবে। ঈদে শিশু কিশোর ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনা টিকেটে জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ থাকবে বলেও জানান তিনি। শিশুমেলা ॥ শ্যামলীতে অবস্থিত শিশুমেলার মালিকানা এখন সিটি কর্পোরেশনের। মিরপুর মোহাম্মদপুর আগারগাঁওসহ আশপাশ এলাকার শিশুকিশোরদের এটি প্রধান বিনোদন কেন্দ্র। এখানে আছে ৪০টির মতো রাইড। পরিবারের সকলের চড়ার মতো আছে ১২টি রাইড। শিশুমেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকবে। ফ্যান্টাসি কিংডম ॥ থিমপার্কগুলো ঢাকার বাইরে। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। তবে চাহিদা এত যে, সবাই সেদিকে ছুটে। ফ্যান্টাসি কিংডম দারুণ জনপ্রিয়। আশুলিয়ায় গড়ে ওঠা আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রটি ঈদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। থিমপার্কের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের প্রথম ৭ দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ফ্যান্টাসি কিংডম। বড়দের প্রবেশমূল্য ২৫০ টাকা। ছোটদের ১৫০ টাকা। প্রবেশসহ সব রাইডে চড়তে চাইলে বড়দের জন্য ৪৫০ এবং ছোটদের জন্য ২৫০ টাকার টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। বাড়তি ২৭০ টাকার টিকেট কেটে সাঁতার কাটা যাবে ওয়াটার কিংডমে। একই সঙ্গে ওয়েভপুল, লেজি রিভার, টিউব সøাইড, ওয়াটারপুলসহ বিভিন্ন রাইডে চড়া যাবে। তবে টিকেট মূল্য বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত হয়ে থাকে। নন্দন পার্ক ॥ নন্দন পার্কও ঢাকার অদূরে। এর পরও অসংখ্য মানুষের যাওয়া আসা। পার্কের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জুবায়েদ জানান, ঈদের দিন সকাল থেকেই খোলা থাকবে পার্ক। সাধারণ প্রবেশ মূল্য ২৪০ টাকা। সব রাইড উপভোগ করতে খরচ হবে ৮০০ টাকার মতো। ঈদে একটি বিশেষ প্যাকেজ অফার করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্যাকেজটির আওতায় ৫২০ টাকা মূল্যের তিনটি টিকেট কিনলে একটি ফ্রি পাওয়া যাবে। ওয়াটার ওয়ার্ল্ড ও ড্রাই পার্কের সব রাইডও উপভোগ করা যাবে এই প্যাকেজের আওতায়। ঈদের পরবর্তী দিনগুলোতে পার্কে লাইভ মিউজিক, ডিজে, ড্যান্স শো ইত্যাদির আয়োজন থাকবে বলে জানান তিনি। হেরিটেজ পার্ক ॥ ফ্যান্টাসি কিংডমের পাশেই হেরিটেজ পার্ক। এখানে দেখা যাবে বেশি কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা। রেপ্লিকা ধরনের হলেও নিদর্শনগুলো দেখে আনন্দ পাবেন দর্শনার্থীরা। পাশাপাশি চড়া যাবে জায়ান্ট ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, ড্রাই স্ণাইড, কফি কাপ, ব্যাটারি কার, ফ্যামিলি ট্রেনসহ বিভিন্ন রাইডে। এ সবের বাইরে খোলা থাকবে লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিলের মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলো। সিনেমা হলগুলোতে মুক্তি পাবে নতুন ছবি। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের স্টার সিনেপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টারে দেশী বিদেশী ছবি দেখার সুযোগ থাকছে যথারীতি। খোলা থাকবে এসব শপিং মলের ফুডকোর্ট। শহর ঢাকার অন্য অনেক রেস্তরাঁও খোলা থাকবে। এসব রেস্তরাঁয় প্রিয় খাবার যেমন থাকবে তেমনি চলবে আড্ডা। এসবের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, মানিক মিয়া এ্যাভিনিউসহ খোলামেলা জায়গাগুলাতে গল্প আড্ডা জমাবেন সাধারণ মানুষ।
×