ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গফরগাঁওয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ আগস্ট ২০১৮

গফরগাঁওয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ, ১৮ আগস্ট ॥ গফরগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় গৃহহীনদের ‘যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব পরিকল্পনায় নির্মিত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নে দরিদ্রদের নামে বরাদ্দকৃত ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ১৬১টি ঘর নির্মাণ কাজের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একটি প্রভাবশালী মহল এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে এই অনিয়ম হয়েছে বলে অসহায় ভুক্তভোগী হতদরিদ্ররা অভিযোগ করেছেন। গত শনিবার ও রবিবার উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে জমি আছে ঘর নেই নির্মাণ প্রকল্পের কাজের ব্যাপক অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে একটি করে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ‘যার জমি আছে ঘর নাই’ তার নিজ জমিতে একটি ঘর নির্মাণ। এই প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার জন্য ১৬১টি পরিবারের নামে এক লাখ টাকা করে ১৬১টি ঘরের অনুমোদন আসে। সূত্র মতে নিয়মানুযায়ী এই প্রকল্পের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহ্বায়ক ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে পাঁচ সদস্যের কমিটি থাকার কথা থাকলেও তা শুধু কাগজে কলমে বাস্তবে কোন কমিটি নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্র জানায়, তালিকা প্রেরণের আগে ৫ সদস্যের কমিটি করে উপজেলায় মাইকিং করে গফরগাঁও পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নে জানানো কথা থাকলেও তা না করে কাগজে কলমে কমিটি দেখিয়ে চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। গফরগাঁও পৌরসভা, রসুলপুর, বারবাড়ীয়া, চরআলগী, সালটিয়া, যশরা, রাওনা, মশাখালী, গফরগাঁও, পাঁচবাগ, উস্থি, লংগাইর, পাইথল, দত্তেরবাজার, নিগুয়ারীসহ ১৫টি ইউনিয়নের ১০টি করে ঘর নির্মাণের ১৬১টি ঘরে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। নিয়মানুসারে ১৬ ফুট লম্বা ও সাড়ে ১৫ ফুট প্রস্থ (বারান্দাসহ) ১টি দরজা, ৬টি জানালাসহ একটি পাকা ঘর এবং একটি পাকা টয়লেট নির্মাণ করে দেয়ার কথা। কিন্তু একটি ঘর নির্মাণ করলেও পাকা টয়লেটের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। তালিকা তৈরির সময় হয়েছে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম আর অসচ্ছতা। দরিদ্রদের নামের ঘর বিত্তবানদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া একজনের নামের ঘর অন্যজনের নামে এবং অন্য গ্রামেও দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে মশাখালী ইউনিয়নের কান্দি গ্রামের বেনুয়ারা বিধবা কোটায় ঘর পান তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত তিন মাস আগে ঘর তৈরি করলেও পাকা করেছে ২০ দিন আগে, পাকা পায়খানাও করে দেয়নি অফিসারেরা। বরং টিন, খাপ, পালা, বালু আনতে আমার সাড়ে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শেখ হাসিনা ঘর দিছে হেরা বানাইয়া দিতে সমস্যা কি। উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের বাগুয়া গ্রামের মৃত মোতালেবের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৪৩) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত এপ্রিল মাসে টিন দিলেও রোজার এক মাস আগে ঘর তৈরি করেছে। আজ পর্যন্ত পাকা পায়খানা পাকা ঘর তৈরি হয়নি। জানি না এই ঘরে শুয়ে মরতে পারব কি না। এ ব্যাপারে উপজেলা যশরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম রিয়েল বলেন, আমরা ঐ কমিটির সদস্য শুনেছি তবে কোন মিটিংয়ের জন্য ডাকেনি এখন পর্যন্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, শুনেছি আমরা ঐ কমিটির সদস্য কিন্তু কোন মিটিং আমাদের নিয়ে করা হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, আমি এই কমিটির সদস্য শুনেছি তবে এখন পর্যন্ত কোন মিটিং বা কাগজে আমার স্বাক্ষর নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডাঃ শামীম রহমান কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, উপকারভোগী সিলেকসান আমি দেইনি। আমি এখানে আসার আগেই প্রকল্প ঠিক করা হয়। তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পে কোন অনিয়ম হয়নি বরাদ্দকৃত প্রতিটি ঘরের জন্য ১ লাখ টাকা কাজ চলমান রয়েছে। তবে কোথাও অভিযোগ পেলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
×