ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ান গেমসের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৮ আগস্ট ২০১৮

এশিয়ান গেমসের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন আজ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ভিয়েতনাম শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়িয়েছিল। তারাই এবার বিডিং প্রসেস অনুসারে আয়োজক হয়েছিল এশিয়ান গেমসের। তড়িঘড়ি করে নতুন কোন দেশকে খোঁজা হচ্ছিল এবং সে সময় এগিয়ে আসে ইন্দোনেশিয়া। কোন ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই তারা এগিয়ে এসেছিল এবং নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত থাকলেও ১৮তম এশিয়ান গেমস আয়োজক হিসেবে তাদের মেনে নেয়া ছাড়াও উপায় ছিল না। তবে সব সমস্যা পেছনে ফেলে ‘ফিল দ্য এনার্জি ফর এশিয়া’ স্লোগান নিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা ও সুমাত্রার বন্দর নগরী প্যালেমবাং। এ দুটি জায়গাতেই এবার ১৬ দিনে ৪০ ক্রীড়ার মোট ৪৬৫ ইভেন্ট নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ার সর্ববৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞ এশিয়ান গেমস। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ অলিম্পিকের পর সবচেয়ে বড় আসর হিসেবে স্বীকৃত এ আসরটির আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় ঝলমলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এ আসরের। প্রতিযোগিতার মূল ভেন্যু জাকার্তার গেলোরা ব্যাং কারনো স্পোর্টস কমপ্লেক্সে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিরাচরিত নিয়ম অনুসারেই আয়োজক দেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি তুলে ধরার পাশাপাশি থাকবে নৃত্য-গীত, ডিজিটাল ডিসপ্লে ও আতশবাজির চোখ ধাঁধানো মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগেই ২ ঘন্টাব্যাপী একটি প্রোগ্রাম শুরু হবে। সেটি অবশ্য আন্তর্জাতিকভাবে টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করতে পারবে না। তবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে মূল অনুষ্ঠানের শুরু হবে। প্রথমেই উদ্বোধন ঘোষণা করবেন ইন্দোনেশিয়ার সরকার প্রধান। আয়োজন সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ছাড়াও কিছু ভিডিও ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হবে। এই পর্বটি চলবে ৪৫ মিনিট। এরপর আরও ৪৫ মিনিট ৪৫ দেশের এ্যাথলেটদের প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে। এর মূল আকর্ষণ হবে দুই কোরিয়ার এক সঙ্গে প্যারেডে নামা। এছাড়া তারা মহিলা বাস্কেটবল, ক্যানুয়িং এবং রোয়িংয়ে সম্মিলিত দল গঠন করেছেÑ এটি হবে প্রতিযোগিতার আরেক আকর্ষণ। ১৫ মিনিট রাখা হয়েছে প্রটোকল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক আয়োজন শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে। এটি চলবে ৭৫ মিনিট। এবারের গেমসের অফিসিয়াল থিম সং, ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবকিছু ফুটিয়ে তোলা হবে এই অনুষ্ঠানে। দেশের নামী দামী সেলিব্রেটি, তারকা, গায়ক, অভিনেতা, মডেলরা উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন পর্বে। ৭৫ মিনিটের (১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট) এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে মঞ্চে উঠে গান পরিবেশন করবেন ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত শিল্পীরা। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন- আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আংগুন, রাইসা, তুলুস, শেরিল শেইনাফিয়া, মারুলি ট্যাম্পোবোলন, সাকরা খান, রায়ান ডি’ম্যাসিভ, এডো কনডোলোজিট, পুত্রি আয়ু, ফাতিন, জিএসি, কামাসিয়ান এবং ভায়া ভ্যালেনরা। এই আনন্দময় পরিবেশকে ভিন্নমাত্রা দিতে যে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে সেটিরও আছে বিশেষত্ব। ১২০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৩০ মিটার প্রস্থ ও ২৬ মিটার উচ্চতার এ মঞ্চটির পেছনে পর্বত সদৃশ পটভূমি তৈরি করা হয়েছে। সেই পর্বতে ছড়ানো-ছিটানো থাকবে শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই হওয়া কিছু লতা-গুল্ম, সুন্দর ফুলসহ গাছ-গাছালি। অর্থাৎ সবুজের একটি সমারোহে হবে জাঁকালো অনুষ্ঠানটি। এই মঞ্চটি বান্দুং ও জাকার্তার ইন্টেরিয়র শিল্পীদের দিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা। একটি পর্বে সবমিলিয়ে ৪০০০ নৃত্যশিল্পী এই মঞ্চে নাচ-গান করে মাতিয়ে তুলবেন। এ সময় প্রায় হাজারখানের বাদক বাজাবেন অর্কেস্ট্রা যার নেতৃত্বে থাকবেন দুই বিখ্যাত মিউজিশিয়ান এডি এম.এস ও রোনাল্ড স্টিভেন। পুরো অনুষ্ঠানের নাচ-গানের কোরিওগ্রাফি করেছেন দেশের শীর্ষ কোরিওগ্রাফার ডেনি মালিক ও একো সুপ্রিয়ান্টো। অলিম্পিকের পর এশিয়ান গেমসেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ বহুমাত্রিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এবার ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হতে যাওয়া এ আসর নিয়ে আছে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা, পরিবেশ দূষণ নিয়ে ভাবনা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে মাথাব্যথা। কিন্তু আয়োজনের ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া কোন ত্রুটিই রাখেনি। জাকার্তার কেমাইয়োরানে স্থাপন করা হয়েছে ১০ হেক্টর জমির ওপর এ্যাথলেটদের ভিলেজ যেখানে আছে ১০টি বিল্ডিংয়ে মোট ৭,৪২৪টি এ্যাপার্টমেন্ট। সবমিলিয়ে এর ধারণক্ষমতা ২২,২৭২ জনের। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুসারে ১৪০০০ এ্যাথলেটের আবাসন থাকলেই হয়। এছাড়া জাকাবারিং স্পোর্ট সিটি ও প্যালেমব্যাংয়ে স্থাপিত ভিলেজে আরও ৩০০০ এ্যাথলেট ও কর্মকর্তা থাকতে পারবেন। অলিম্পিকের সবগুলো ক্রীড়া ছাড়াও এশিয়ান গেমসে কিছু আঞ্চলিক ক্রীড়া ইভেন্টও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সে কারণে মোট ক্রীড়া ৪০টি। এবারের এশিয়ান গেমসে মাস্কট তিনটি। বড় মাস্কটের নাম কাকা, বাকি দুটির নাম ভিনভিন ও আতুং। অবশ্য এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এশিয়ান গেমসের ১৮তম আসরের যাত্রা আনঅফিসিয়ালি গত ১০ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে। ফুটবল শুরু হয়েছে সেদিন থেকে। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও উদ্বোধনীর মাধ্যমে আজই শুরু হবে এবারের আসরটি। ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৬ দিনে এবার ৪০টি ক্রীড়ার মোট ৪৬৫ ইভেন্টে প্রতিযোগিতা হবে। প্রতিযোগিতার মূল ভেন্যু জাকার্তার গেলোরা ব্যাং কারনো স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হবে ১৩টি ক্রীড়ার প্রতিযোগিতা। এবারের প্রতিযোগিতায় মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার। ইন্দোনেশিয়াকে এর আয়োজন করতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। বিশেষ করে মাস তিনেক আগে গত ১০ বছরের মধ্যে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আত্মঘাতী বোমা হামলায় দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী সুরাবায়াতে ১৩ জন নিহত হয় সে ঘটনায়। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এশিয়ান গেমসের সমস্ত আয়োজন সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন করেছে ইন্দোনেশিয়া। অবশ্য অতীতে বিভিন্ন ক্রীড়া আসর আয়োজনের রেকর্ড তেমন সুখকর নয় দেশটির। ২০১১ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস আয়োজন করেছিল যাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ ছিল। তবে এবার আয়োজক কমিটির প্রধান এরিক থোহির দাবি করেছেন ইন্দোনেশিয়া এবার সবকিছু কাটিয়ে উঠে ঠিকঠাক মতোই মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে। ভালভাবে শেষ করে এখন সব সমালোচনাকে ঢেকে ফেলার সুযোগ এবার ইন্দোনেশিয়ার জন্য।
×