ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবনী আক্তার সান

ওকস-এ্যান্ডারসনের অনন্য কীর্তি

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১৫ আগস্ট ২০১৮

 ওকস-এ্যান্ডারসনের অনন্য কীর্তি

দ্বিতীয় টেস্টে নাম্বার ওয়ান ভারতকে ইনিংস ও ১৫৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ৫ ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ব্যক্তিগত নৈপূণ্যেও দারুণ সব কীর্তি গড়েছেন ইংলিশ ক্রিকেটাররা। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে অনার্স বোর্ডে নাম লেখানো জেমস এ্যন্ডারসন দ্বিতীয় ইনিংসেই ইতিহাসের প্রথম পেস বোলার হিসেবে এক ভেন্যুতে (লর্ডস) ১০০ শিকারের রেকর্ড গড়েছেন। তার আগে সতীর্থ ক্রিস ওকস এমন এক কীর্তি গড়েছেন, যাতে এ্যান্ডারসনও ম্লান! মুলত বোলার, অথচ দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লিখিয়েছেন ব্যাটসম্যান ওকস! যে কীর্তি ব্রায়ান লারা-শচীন টেন্ডুলকরের মতো গ্রেটেরও নেই! কেবল শচীন-লারা নন, লর্ডসে সেঞ্চুরি নেই সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন জ্যাক ক্যালিস আর আধুনিক অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিংয়েরও। অথচ সেখানেই ইতিহাসের ২৩৭তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে সেঞ্চুরি তুলে নেন ‘বোলার’ ওকস! ১৭৭ বলে ২১ চারের সাহায্যে খেললেন অপরাজিত ১৩৭ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। এর আগে চার হাফ সেঞ্চরি পাওয়া ওকসের ২৫তম টেস্টে প্রথম সেঞ্চুর এটি। ইংলিশ এই পেসারের সঙ্গে লর্ডসের মন দেয়া-নেয়ার সম্পর্ক যে কাউকেই চমকে দেবে। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তেমনি প্রথম হাফ সেঞ্চুরিটাও এই মাঠে (২০১৬, শ্রীলঙ্কা)। আবার বল হাতে এক ইনিংসে তাঁর প্রথম পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তিও এই লর্ডসেই, এক টেস্টে প্রথম ১০ উইকেট নেওয়াও এখানে! মাঠের সঙ্গে প্রেমের নমুনা এমন হলে নামটা চিরস্থায়ী হবেই। ওকসের নামটাও তাই চিরস্থায়ী হয়ে গেল লর্ডসের অনার্স বোর্ডে। মূলত বোলার হয়েও ওকস লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম তুলেছেন ব্যাটসম্যান হিসেবে, যেখানে আছেন তামিম ইকবালও। এ ছাড়া এই মাঠে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া আর সেঞ্চুরি করা যে নয়জন ভাগ্যবান ক্রিকেটার ছিলেন তাঁদের পাশেও নাম লিখিয়েছেন ওকস। পাশাপাশি এখানে এক ম্যাচে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি তো আছেই। লর্ডসে পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে এক ইনিংসে ৫ উইকেট, এক ম্যাচে ১০ উইকেট আর সেঞ্চুরি তুলে নিলেন ওকস। অথচ লর্ডসের এই টেস্টে খেলারই কথা ছিল না তার! গত জুনে পাকিস্তান সিরিজে পাওয়া হাঁটুর চোটে ছয় সপ্তাহ মাঠের বাইরে ছিলেন। আদালতে বেন স্টোকসের শুনানির কারণে সুযোগ পান ওকস, ‘সত্যিই দারুণ একটি দিন। টেস্ট দলে ডাক পাওয়াটা চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো ছিল। এবং ফেরার টেস্টে সেঞ্চুরি পাব, তা আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি।’ অনুভূতি জানিয়ে বলেন তিনি। ওকস আরও যোগ করেন, ‘সেঞ্চুরি পাওয়াটা অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। সত্যি বলতে, নম্বইয়ের ঘরে গিয়ে আমি কিছুটা স্নায়ুচাপে ভুগছিলাম। লর্ডসে স্ট্যান্ডিং ওভেশন (দাঁড়িয়ে সম্মান) পাওয়াটা শৈশবের একটি স্বপ্ন।’ ওদিকে ওকসের ম্যারাথণ সেঞ্চুরি ও জনি বেয়ারস্টোর ৯৩, স্যাম কুরানের ৪০ রানে ভর করে ভারতের ১০৭ রানের জবাবে চতুর্থ দিন সকালে ৭ উইকেটে ৩৯৬ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিক ইংলিশরা। এরপরই দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারী ওপেনার মুরালি বিজয়কে ফিরিয়ে লর্ডসে ১০০ উইকেটের ল্যান্ডমার্কে পা রাখেন এ্যান্ডারসন। টেস্ট ইতিহাসের প্রথম কোন পেস বোলার হিসেবে একই ভেন্যুতে ১০০ উইকেটের অনন্য রেকর্ডের মালিক তিনি। দেড় দশক আগে এই লর্ডসেই টেস্ট অভিষেক, শুক্রবার সেই মাঠে (একক) ষষ্ঠবারের মতো পাঁচ উইকেট পেয়েছেন সুইং মাস্টার জেমস অ্যান্ডারসন। স্পিনার ও পেসার মিলিয়ে একক কোন ভেন্যুতে ১০০ বা এর বেশি উইকেট শিকারের কৃতিত্ব আছে শুধু আর একজনেরই- তিনি মুত্তিয়া মুরলিধরন। শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি আবার উইকেটের সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন তিন ভেন্যুতে! মুরালি সবচেয়ে বেশি ১৬৬ উইকেট নিয়েছেন কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে। ক্যান্ডির আসগিরিয়া স্টেডিয়ামে ১১৭টি ও গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পেয়েছেন ১১১ উইকেট। গলে ৯৯ উইকেট আছে আরেক লঙ্কান স্পিনার রঙ্গনা হেরাথেরও। লর্ডসে ষষ্ঠবারের মতো পাঁচ উইকেট পেয়েছেন এ্যান্ডারসন। এই মাঠে তার চেয়ে বেশিবার পাঁচ উইকেট আছে শুধু একজনের-ইয়ান বোথাম (আটবার)। ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে এ্যান্ডারসনের পাঁচ উইকেট কীর্তি হলো ২৬তম বারের মতো। ইংল্যান্ড ইতিহাসের রেকর্ড সর্বাধিক ৫৫১ উইকেটের মালিক ৩৬ বছর বয়সী পেসার আর একবার পাঁচ উইকেট পেলেই ছুঁয়ে ফেলবেন বোথামের ইংলিশ-রেকর্ড। তুখোড় অলরাউন্ডার বেন স্টোকসের আদলাতে শুনানির কারণে লর্ডসে সুযোগ পেয়েছিলেন ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা ওকস। ব্যাট হাতে অপরাজিত ১৩৭ রানের পাশাপাশি বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। ওকসকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন অধিনায়ক, ‘স্টোকসের অনুপস্থিতি ওকসের সামনে খেলার ও পারফর্ম করার সুযোগ করে দিয়েছিল। সে অসাধারণ খেলেছে। এটা দলের অন্যদের জন্য উদাহরণও।’ জো রুট আরও বলেন, ‘জয়ের জন্য বেশি কষ্ট করতে হয়নি। তার অন্যতম কারণ অবশ্যই আমাদের বোলারদের দুরন্ত পারফরর্মেন্স। ম্যাচের পরিবেশ আমাদের সাহায্য করেছে। তবু এই পরিস্থিতিতেও বোলারদের ঠিক জায়গায় বলটা রাখতে হতো। সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। বিশেষ কৃতিত্ব দিতে চাইব জনি (বেয়ারস্টো) ও ওকস (ক্রিস)-কে। ওকসের জন্য আমি সত্যিই গর্বিত। নিজের প্রতিভা আরও এক বার প্রমাণ করে দিয়েছে ও। প্রচ পরিশ্রম করতে পারে। ও যে দলের নিয়মিত সদস্য ছিল, সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে।’ ওকস বলেন, ‘আমি আপ্লুত। টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়া সত্ত্বেও চার দিনে খেলা শেষ করতে পেরেছি আমরা। লর্ডসে সেঞ্চুরি-সংগ্রাহকদের তালিকায় নিজের নাম তুলতে পেরে সত্যি খুব খুশি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ইনিংসের প্রথম দিকে ভয় পাচ্ছিলাম। বল খুব সুইং করছিল। তখন জনি (বেয়ারস্টো) আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। আমাকে বলে, উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকলেই রান আসবে। সেটাই করলাম। তার পর থেকে সহজে রান করতে শুরু করি। প্রত্যাবর্তনের টেস্ট ম্যাচ সারা জীবন মনে থাকবে।’
×