স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বয়স ৩৪ পেরিয়ে গেছে, তবু স্বপ্ন দেখা শেষ হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে চলে যান অনেকে এবং কিছু খেলোয়াড় অবসর নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দেন। কিন্তু মোহাম্মদ আশরাফুল এই বয়সেই নতুন করে আশা করছেন পারফর্মেন্স দেখিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে ফিরতে। কিন্তু সেই পথটা একেবারেই বন্ধুর, দুর্গম ও কঠিন। প্রথমত যে পজিশনে তিনি খেলবেন সেখানে ফাঁকাও নেই, সুযোগও কম, দ্বিতীয়ত দীর্ঘ ৫ বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে নিজেকে পরিচ্ছন্ন ক্রিকেটার হিসেবে প্রমাণের বিষয় আছে, তৃতীয়ত দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দেখিয়ে তাকে ভুলে যাওয়া নির্বাচকদের ভাবতে বাধ্য করতে হবে, চতুর্থত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো আদর্শ শারীরিক সক্ষমতা ও যথাযথ ফিটনেস থাকা এবং পঞ্চমত ঘরোয়া আসরগুলোয় ভাল করে ‘এ’ দল কিংবা এইচপির হয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা। আর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু রবিবার যা বলেছেন তার মোদ্দা কথাগুলো এমনই। সোমবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও বললেন ঘরোয়া আসরে দুই মৌসুম খেলাই জাতীয় দলে ফেরার জন্য পর্যাপ্ত নয় আশরাফুলের জন্য।
ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি২০ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) ম্যাচ ফিক্সিং করে দোষ স্বীকার করেছিলেন আশরাফুল। সেজন্য তাকে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট থেকে সবধরনের ক্রিকেট থেকে প্রাথমিকভাবে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। শাস্তির বিপক্ষে আপীল করে সেটা ৫ বছরে কমিয়ে আনেন আশরাফুল। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট আসর (ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর ব্যতীত) খেলার অনুমতি পেয়েছেন। তার জাতীয় ক্রিকেট লীগ (এনসিএল) ও ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ (ডিপিএল) খেলেছেন দুই মৌসুম। গতবার ডিপিএলে টানা তিনটিসহ ৫ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের বিশ্বরেকর্ড গড়েন। এবার সোমবার থেকে তার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসরসহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার নিষেধাজ্ঞাও শেষ হয়ে গেছে। তাই যে কোন সময় যে কোন পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার উপযুক্ত হয়েছেন আশরাফুল। গত মৌসুমে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানো এবং বেশ কিছু পর্যায়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে ইতোমধ্যেই নিজের পারফর্মেন্সটা দেখিয়েছেন তিনি। এ কারণেই আলোচনা হচ্ছে আশরাফুলের জাতীয় দলে ফেরার বিষয়ে। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দল যেমন নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছেন তিন ফরমেটের ক্রিকেটে, তাতে করে আশরাফুলের জায়গা নেই খেলার। তাই নান্নু জানালেন, এখনও তাকে অনেক কিছুই প্রমাণ করতে হবে এবং সেটা অন্তত এক বছর প্রমাণ করতে পারলেই জাতীয় দলে তাকে ফেরানোর বিষয়টি বিবেচনায় আসতে পারে।
সার্বিক দিক বিবেচনায় এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় আশরাফুল সহজে জাতীয় দলে ডাক পাচ্ছেন না। অনেক কাঠখড়ই পোড়াতে হবে তাকে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সময়ে তিনি লন্ডনে অবস্থান করে সেখানে এক ঘরোয়া আসলে খেলায় ব্যস্ত। তবু ভিডিও বার্তায় নিজের চাওয়াটা জানিয়েছেন এ মেধাবী ক্রিকেটার। জাতীয় দলে ফিরতে চান এবং প্রধান নির্বাচকের মন্তব্যের পরও আশাহত না হয়ে নিজেকে প্রমাণ করারও প্রত্যয় জানিয়েছেন। বেশ কাঠখড়ই পোড়াতে হবে তাকে। দীর্ঘ সময় ক্রিকেট থেকে বাইরে, সেজন্য এক মৌসুমে নজরকাড়া নৈপুণ্যই যথেষ্ট নয় সেটা আশরাফুলও বুঝতে পারছেন ভালভাবে। আরও অনেকেই ঘরোয়া আসরে নিয়মিত পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন না। আর লম্বা বিরতির পর ৩৪ বছর বয়সে আশরাফুলের ফিরে আসার বিষয়টি অচিন্তনীয় ব্যাপারই। এ বিষয়ে জালাল ইউনুস বলেন, ‘দেখেন, আশরাফুল শুধুই একটি নাম। ১০ জন ক্রিকেটার যেভাবে জাতীয় দলে আসে তাকেও সেভাবে আসতে হবে। আপনারা জানেন ৫ বছর সে ক্রিকেটের বাইরে ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুইটি মৌসুম সে খেলেছে। এটা যথেষ্ট নয়। ফিটনেসের ব্যাপার আছে এটা একটা দিক। আমার মনে হয় আশরাফুলকে দলে আনতে হলে নির্বাচকদের ভাবনায় আছে কি না আমি জানি না। আমি কালকে দেখেছি প্রধান নির্বাচক বলেছে যে এখনই সেই ধরনের কোন ভাবনা তাদের নেই, তাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। তবে সামনে একটা ঘরোয়া মৌসুম আছে, সেখানে তাকে খেলতে হবে। সব ফরমেটে খেলতে হবে।’ এনসিএল খেলতে পারলেও এতদিন বিপিএল খেলার সুযোগ পাননি আশরাফুল। তাছাড়া ঘরোয়া আসরে খেলার যে ফিটনেস, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার মানটা আরও উন্নত হতে হয়। তবে এবার বিপিএল খেলারও সুযোগ পাবেন তিনি। দেশ-বিদেশের সেরা তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পাবেন। তাই আরও একটি মৌসুম অন্তত সব ফরমেটে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের বিষয় আছে। জালাল বলেন, ‘এতদিন সে টি২০ খেলতে পারছিল না। সেই ফরমেটেও সে খেলতে পারবে। নির্বাচকরা চাচ্ছেন তিন ফরমেটে তাকে আরেকবার দেখতে। তার শারীরিক ফিটনেসটা কেমন, এটা গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্যই আমার মনে হয় তাকে অপেক্ষা করতে হবে। সে এখন বিপিএলে খেলার জন্য উপযুক্ত। নির্ভর করছে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ওপর। যেহেতু তার সব উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে সে খেলতে পারবে।’