ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ভারি যান চলছে না

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৪ আগস্ট ২০১৮

 শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ভারি যান চলছে না

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ও নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ নাব্য সঙ্কটে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে সোমবার তৃতীয় দিনের মতো ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ছোট ৭টা ফেরি দিয়ে সীমিত আকারে সার্ভিস সচল রাখা হয়েছে। ফেরি কেতকি, কাকলী, কস্তরি, কপোতি, ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর দিয়ে পার করা হচ্ছে ছোট আকারের হালকা যান। নাব্য কাটাতে ৭টি ড্রেজার দিয়ে দিনরাত ড্রেজিং করা হচ্ছে লৌহজং চ্যানেল এবং বিকল্প চ্যানেল। মূল চ্যানেল লৌহজং চ্যানেলের পাশে বিআইডব্লিউটিএর মার্কিং করা ন্যাচারেল চ্যানেল দিয়ে এখন ফেরিগুলো চলাচল করছে। এর আগে সোমবার ভোর ৪ টায় বিকল্প চ্যানেলের মুখে ফেরি কুমিল্লা, কাকলী ও কিশোরী আটকে যায়। এতে ফের বন্ধ হয়ে যায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুট। পরে ফেরিগুলো আবার শিমুলিয়া ঘাটে যানসহ ফেরত আসে। পরে সোমবার সকালে ফেরি কুমিল্লা শিমুলিয়া ঘাট থেকে যান নিয়ে আবার রওনা দেয়। এই ফেরিটি চ্যানেল পাড়ি দেয়ার পর এ্যাম্বুলেন্সসহ ছোট আকারের যান নিয়ে ফেরি চলাচল করছে। এছাড়া শনিবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় নাব্য সঙ্কটে সম্পূর্ণ ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওইদিন রাত ১০ টায় সীমিত আকারে ফেরি সার্ভিস সচল করা হয়। ওইদিন থেকে এই রুটে বাস, ট্রাকসহ সকল ধরনের ভারি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এই নৌরুটের যাত্রীরা। উভয় ঘাটে এখনও পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ৫ শতাধিক ছোট বড় যানবাহন। এসব তথ্য দিয়ে বিআইডব্লিউটিসির এজিএম খন্দকার শাহ খালেদ নেওয়াজ জানান, ফেরি চলাচলের জন্য উপযোগী পানির গভীরতা না থাকায় বারবার বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে ফেরিগুলো। এতে এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা পড়েছে বিপাকে। ৭টি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করার পরও বিকল্পে চ্যানেলে পানির গভীরতা আছে ৪-৫ ফুটের মতো। কিন্তু ফেরি চালাতে কমপক্ষে প্রয়োজন সাড়ে ৭ ফুট পানি। গত ১২ জুন থেকে ব্যবহার করে আসা এই চ্যানেলটিতে বর্তমানে পলি জমে নাব্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাক ও ভারি যানবাহনগুলোকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। প্রচারের কারণে দুদিন থেকে ঘাটে গাড়ি আসছে অনেক কম। এই রুটে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে তিন হাজার গাড়ি পার করা হয়। এরপরও ঘাট এলাকায় ৬ শতাধিক যানবাহন পারের অপেক্ষায় আছে। তিনি আরও বলেন, নাব্য সঙ্কট নিরসনে ড্রেজিং চলছে চ্যানেলে। আরও দুইদিন সময় নেয়া হয়েছে ফেরি চলাচল উপযোগী করতে। তিনি আরও বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে নৌরুটের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের মুখে একটি ডুবোচরের সৃষ্টি হয়। উজান থেকে পাহাড়ী ঢলের পানির সঙ্গে ক্রমাগত পলি পরে ডুবোচরটি দিন দিন বড় হতে থাকে। এতে চ্যানেলের মুখে বড় রকম একটি ডুবোচরের কারণে ফেরি চালকরা প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলত। ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকত। ডুবোচরে আটকে ফেরির প্রপেলারসহ ইঞ্জিনের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছিল। বিআইডব্লিউটিএকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা চ্যানেলটি কিছুতেই চালু করতে পারেনি। বর্তমানে সাড়ে পাঁচ ফিট ড্রাফের বেশি লোড নেয়া হচ্ছে না ফেরিগুলোতে। তাই এ রুটে চলাচলরত ভারি যানবাহন, পণ্যবাহী ট্রাক ও পরিহনগুলোকে অন্য বা বিকল্প পথে যাতায়াতের জন্য বলা হয়েছে । মাদারীপুর ॥ কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আটকেপড়া ট্রাকের চালকরা বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা ঘাটে এসে পদ্মা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। ফেরি পার হতে পারছি না। আর কবে যে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে তা কেউ বলতে পারে না। তবে শুনছি সব বড় বড় রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রেখে পদ্মানদী লৌহজং চ্যানেলের মুখে ও বিকল্প চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে।’ কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে নাব্য সঙ্কট কাটিয়ে আসন্ন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা নির্বিঘেœ প্রিয়জনের সঙ্গে বাড়ি ফিরে ঈদ উদ্যাপন করতে পারে এ জন্য একযোগে ফেরি বন্ধ করে ড্রেজিং করা হচ্ছে বলে মন্তব্য ট্রাকচালক ও এলাকাবাসীর। স্থানীয়রা বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিংয়ে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ মোঃ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘নাব্য সঙ্কটের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য সঙ্কট দূর না করা পর্যন্ত ফেরি চালানো সম্ভব নয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।’
×