ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৪ আগস্ট ২০১৮

বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ

পর্ব-২ ॥ দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং স্বনামধন্য কোন আইনজীবীর মাধ্যমে কানাডার আদালতে যখন সরকারকে অভিযুক্ত করে এরকম একটি মামলা দায়ের করা হবে এবং সেই মামলা যখন আদালত সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নিয়ে মামলাটি চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত দেবেন, তখন এই মামলার পরিণতি কি হতে পারে তা কানাডা সরকার কিছুটা উপলব্ধি করতে পারবেন। সেই উপলব্ধি থেকেই কানাডা সরকার কোর্টের বাইরে বিষয়টি নিষ্পত্তি (আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট) করার উদ্যোগ নিতে পারেন। সঙ্গত কারণেই নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগই হতে পারে সেই সমাধানের একমাত্র উপায়। উল্লেখ্য, এ সকল দেশের আদালতে কোন মামলা চলা অবস্থায় আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি (আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট) খুবই জনপ্রিয় এক ব্যবস্থা। অনেক বড় বড় স্পর্শকাতর মামলাও আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি করার নজির আছে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি কানাডার সরকারের বিরুদ্ধে তালেবান সদস্য ও সন্ত্রাসী ওমর খাদিরের দায়ের করা মামলাটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। এই মামলার কথা আমি ইতোপূর্বে দু’একটি লেখায় উল্লেখ করলেও বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হওয়ায় এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরলাম। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সেই মামলায়ও কানাডার বর্তমান সরকার এক কানাডীয় নাগরিক ও তালেবান সদস্য ওমর খাদিরকে প্রায় দশ মিলিয়ন ডলার প্রদান করে তার দায়ের করা এক মামলা আদালতের বাইরে (আউট অফ কোর্ট) নিষ্পত্তি করে। ওমর খাদির তার বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে তালেবানে যোগদান করে আফগানিস্তানে চলে যায় এবং সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী যৌথবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে তার বাবা ও ভাই নিহত হলেও সে গ্রেনেড হামলা করে যুক্তরাষ্ট্রের এক সৈন্যকে হত্যা করে যৌথবাহিনীর হাতে আটক হয়। যুক্তরাষ্ট্র সেই ওমর খাদিরকে ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করে এবং বিচার শুরুর পূর্বে তাকে কিছুদিন বিতর্কিত নির্যাতন সেল গুয়ানতানামো বেতে রেখেছিল। সেই নির্যাতন ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় একজন কানাডীয় নাগরিক হিসেবে এখানকার চার্টার অব রাইট অনুযায়ী কানাডা সরকারের কাছ থেকে যে আচরণ পাওয়ার কথা, তা সে পায়নি। যাই হোক, বিচারে সেই ওমর খাদির আদালতে ইউএস সৈন্য হত্যা করার ঘটনা স্বীকার করে এবং বিচারের রায়ে তার কারাদণ্ড হয়। তার দণ্ডের অবশিষ্ট সাজা সে কানাডার জেলে খাটবে মনে করে সরকার তাকে কানাডা ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এসেই সে কানাডার সরকারের বিরুদ্ধে চার্টার অব রাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করে, যা নিষ্পত্তি করার জন্য সরকারকে দশ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করতে হয় একজন আত্মস্বীকৃত এবং আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীকে। উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে যৌথবাহিনী সন্ত্রাস দমনে নিয়োজিত ছিল, সেখানে কানাডার সেনাবাহিনীও অংশ নিয়েছিল এবং সেই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে কানাডার প্রায় দেড় শত সৈন্য এরকম ওমর খাদিরের মতো তালেবান সদস্যদের হামলায় নিহত হয়েছে। এরকম একজন আত্মস্বীকৃত তালেবান সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যকে হত্যা করেছিল এবং সুযোগ পেলে সে কানাডীয় সৈন্যকেও হত্যা করত, তাকেই কিনা প্রায় দশ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়ে আদালতের বাইরে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হয়েছে কানাডার বর্তমান সরকারকে। এরকম ঘটনায় সাধারণ মানুষের আদৌ কোন সায় নেই। তারপরও সরকার কাজটা করেছে শুধু আদালতে দায়ের করা মামলার সম্ভাব্য রায়ের ভয়ে, যা সরকারের বিপক্ষে যেতে পারত এবং গেলে তা খুবই ভয়ঙ্কর হতে পারত। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকেও ফিরিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে কানাডার আদালতে এখানকার সরকারের বিরুদ্ধে এরকম একটি মামলা দায়ের করা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, এই মামলা কে বাদী হয়ে দায়ের করবে। নিশ্চয়ই বাংলাদেশ সরকার বা সরকারের পক্ষে কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষে বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করা সম্ভব নয়। যদি এবং আইনগতভাবে সম্ভব হয়ও, সেক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। একজন কানাডীয় নাগরিক যিনি নিয়মিত কর প্রদান করে আসছেন, তারই আইনগত অধিকার আছে এখানকার সরকারের বিরুদ্ধে প্রদত্ত করের অর্থ নূর চৌধুরীর পিছনে ব্যয় করে অপচয় করার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করার। সম্ভব হলে অধিক সংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে তাদের প্রদত্ত করের অর্থের যে অপচয় হচ্ছে তাই নয়, সভ্য দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের আত্মসম্মানেও লাগছে, এমন অভিযোগ এনে একটি যৌথ মামলা দায়ের করতে পারলে আরও ভাল ফল পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, এই ধরনের যৌথ মামলা দায়ের করাকে এখানকার আইনের ভাষায় ক্লাস এ্যাকশন কেস বলা হয়ে থাকে এবং প্রতিটা ক্লাস এ্যাকশন কেস আদালতে আইনের দৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। এখানে আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ করা খুবই প্রাসঙ্গিক যে, ইউরোপের এক তরুণ আইনজীবী ফেসবুকের নানান অপব্যবহারের কারণে সর্বাধিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্লাস এ্যাকশন কেস দায়ের করার প্রস্তুতি নিয়ে চলেছেন বেশ কিছুদিন ধরে। সেই আইনজীবী এখন শুধু নির্দিষ্ট সংখ্যক বাদী বা ভুক্তভোগীর জন্য অপেক্ষা করছেন, কেননা ক্লাস অ্যাকশন কেস দায়ের করতে হলে নির্দিষ্ট সংখ্যক বাদী ভুক্তভোগীকে একত্রিত হতে হয়। তাছাড়া বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক দ্বৈত নাগরিক সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তাই একজন কানাডীয় হিসেবে এরকম একজন দ-প্রাপ্ত খুনী, যার কোনভাবেই বৈধভাবে কানাডা থাকার আইনগত ভিত্তি নেই, তাকে ফেরত না পাঠানোর অভিযোগ এনে কানাডা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতেই পারেন। এই মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ থাকতে পারে যে, খুনী নূর চৌধুরীকে এভাবে অবৈধভাবে আশ্রয় দেয়ার কারণে কানাডার নাগরিকদের প্রদত্ত করের যে শুধু অপচয় হচ্ছে তাই নয়, সেইসঙ্গে কানাডার মতো সভ্য দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের মাথাও লজ্জায় হেঁট হয়ে যায়। এমনকি এদেশে জন্ম নেয়া বা বেড়ে ওঠা আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছেও বিষয়টি যথেষ্ট বিব্রতকর এবং লজ্জাজনক। মাঝেমধ্যেই এসকল কোমলমতি ছেলেমেয়ের পক্ষ থেকে কেউ কেউ তাদের উদ্বেগ ও লজ্জিত হবার বিষয়টি উল্লেখ করে এই খুনী নূর চৌধুরীকে ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে এখানকার প্রধানমন্ত্রীর নিকট পত্রও লিখেছে এবং সে সংবাদ এখানকার স্থানীয় পত্রপত্রিকায় ছাপাও হয়েছে। এমনকি সম্প্রতি ন্যাশনাল পোস্টে নূর চৌধুরীকে ফেরত দেয়ার বিষয়ে যে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছিল, তা পাঠ করে আমার গ্রেড সিক্সে পড়া ছোট্ট মেয়েটিও প্রচণ্ড ঘৃণা প্রকাশ করে আমার কাছে জানতে চাইল যে, কানাডা সরকার কেন এরকম একজন খুনীকে শাস্তি দিচ্ছে না? আমি যখন তাকে বুঝালাম যে, সে কানাডার নাগরিক নয় এবং ঘটনাস্থলও কানাডা নয়, তাই কানাডা সরকার তার বিচার করতে পারে না। এতে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলে উঠল যে, ‘দেন হি মাস্ট বি সেন্ট ব্যাক, হি মাস্ট গেট পানিশমেন্ট, হোয়াই জাস্টিন ট্রুডো ইজ নট ডুইং দ্যাট।’ এরকম অনুভূতি বা ঘৃণা প্রকাশ আমার মেয়ের একার নয়, বরং এখানে বেড়ে ওঠা হাজার হাজার ছেলেমেয়েদের একই অভিমত। তাই এরকম স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সঠিকভাবে তুলে ধরে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে না দেয়ার দায়ে কানাডা সরকারকে অভিযুক্ত করে কানাডার আদালতে মামলা দায়ের করাই হতে পারে এই খুনীকে ফিরিয়ে নেয়ার যথাযথ পদক্ষেপ। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কানাডার কোন নাগরিক এখানকার আদালতে মামলা দায়ের করলে সেই মামলার চূড়ান্ত পরিণতি পর্যন্ত অপেক্ষা করার আগেই কানাডার সরকার নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমনটা তারা তালেবান সদস্য এবং সন্ত্রাসী ওমর খাদিরের ক্ষেত্রে করেছিল। উত্তর আমেরিকার কমপ্লায়েন্স এ্যাসোসিয়েশনের একজন সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সময়ে অনেক বিষয়ে প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নিতে গিয়ে আমার অনেক আইনজীবীর সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগ হয়ে থাকে। আলোচনার মাঝে সুযোগ বুঝে নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আইনগত বিষয় জানার চেষ্টা করি। যেহেতু তারা সকলেই বাণিজ্যিক আইনে পারদর্শী, তাই এ বিষয়ে তারা যথাযথ আইনী পরামর্শ দিতে পারে না। তথাপি তাদের সাধারণ আইনী মতামত হলো যে, কানাডার আদালতে মামলা দায়ের করাই এই খুনীকে ফিরিয়ে নেয়ার একমাত্র কার্যকর পদক্ষেপ। কানাডায় বসবাসরত অসংখ্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক সরাসরি আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রতিটা অঙ্গ সংগঠনের কানাডা শাখা এখানে আছে এবং তাদের কর্মকাণ্ডও যথেষ্ট চোখে পরার মতো। দেশে দলের প্রতিটা অনুষ্ঠানের সমান্তরাল কর্মসূচী এখানে পালন বা উদযাপন করা, নেতা নির্বাচন, দলাদলি সবই আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সফরের সময় তাদের তৎপরতা এবং কর্মকাণ্ড ছিল যথেষ্ট চোখে পড়ার মতো এবং বেশ প্রশংসনীয়। তাদের কেউ কেউ বা অনেকে চাইলে এরকম একটি মামলা কানাডার আদালতে দায়ের করতে পারেন। এ ব্যাপারে প্রথমেই তাদের উচিত, এই ধরনের বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং পারদর্শী নামকরা আইনজীবীর সঙ্গে দ্রুত পরামর্শ শুরু করা। সম্ভব হলে ওমর খাদিরের মামলা যে আইনজীবী পরিচালনা করেছে, তার সঙ্গেও পরামর্শ করা যেতে পারে এবং তাদের সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। এখানে আরও একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে, এই ধরনের মামলা পরিচালনায় পারদর্শী এবং খ্যাতিমান আইনজীবীর পারিতোষিক মাত্রাতিরিক্ত, যা কারও একার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। ওমর খাদিরের মামলার ক্ষেত্রে যেহেতু আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয় জড়িত ছিল, তাই সেই আইনজীবী বীণা পারিতোষিকে শুধুমাত্র মামলায় জিতলে ব্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ ভাগাভাগির শর্তে মামলা পরিচালনায় রাজি হয়। এই পদ্ধতিতে মামলা পরিচালনা আমেরিকা কানাডায় খুবই জনপ্রিয় ব্যবস্থা। নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে না দেয়ার অভিযোগে কানাডা সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোন বিষয় জড়িত নেই। তাই এই মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োজিত আইনজীবীর পারিতোষিকসহ সমস্ত আইনী খরচ বাদী পক্ষকেই বহন করতে হবে। সে জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে, তা কারও একার পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। আর কোন বিশেষ ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও কেউ সেটা বহন করবে না। এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে কানাডায় বসবাসরত অসংখ্য বাংলাদেশী আছেন, যারা মনেপ্রাণে চান যে, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে তার সাজা কার্যকর করা হোক। তারা চাইলে এই ধরনের মামলা পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের জন্য সকলে মিলে প্রয়োজনীয় আর্থিক তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। কানাডায় এরকম অর্থ সংগ্রহ বা ফান্ড রাইজিং শুধু আইনগতভাবে বৈধ নয়, বেশ জনপ্রিয়ও বটে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারও চাইলে এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারে। এদিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে যে, এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ যেন ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ না নেয় বা নতুন করে যেন দলাদলির সৃষ্টি না হয়। আমরা জানি, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে অনেক দিন ধরে। রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক উভয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা আমরা এখনও শুনিনি। অব্যাহত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কানাডার বাংলাদেশী হাইকমিশনার মিজানুর রহমান এ বছরের শুরুর দিকে কানাডার অভিবাসন মন্ত্রীর কাছে এক পত্র পাঠিয়ে নূর চৌধুরীর বর্তমান অবস্থান বা স্ট্যাটাস জানতে চান। অভিবাসন মন্ত্রী ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত একটি দেশের হাইকমিশনারের এমন আবেদন প্রত্যাখ্যাত হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমি নিশ্চিত, কোন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে এরকম একটি আবেদন জানানো হলে সেই অভিবাসন মন্ত্রী এত সহজে তা প্রত্যাখ্যান করতে পারতেন না। এসব দেশে এতদিন বসবাস করে একটি বিষয়ে অন্তত নিশ্চিত হয়েছি যে, এখানকার সরকার একমাত্র আইন ও আদালতকে ভয় পায়, আর কাউকে নয়। এমনকি জনগণকেও এতটা ভয় পায় না। তা না হলে কানাডার প্রায় নব্বই শতাংশেরও বেশি লোকের সম্মতি না থাকা সত্ত্বেও কানাডার সরকার তালেবান সদস্য ও সন্ত্রাসী ওমর খাদিরকে দশ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। সেই বিবেচনায় কানাডার আদালতে খুনী নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে না দেয়ার অভিযোগে কানাডা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরই হতে পারে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে নেয়ার যথাযথ উদ্যোগ। (সমাপ্ত) লেখক : ব্যাংকার, টরনটো, কানাডা [email protected]
×