ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় দিনে ট্রাফিক সপ্তাহ আরও জোরদার, বহু মামলা

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ৮ আগস্ট ২০১৮

তৃতীয় দিনে ট্রাফিক সপ্তাহ আরও জোরদার, বহু মামলা

আজাদ সুলায়মান ॥ তৃতীয় দিনে এসে ট্রাফিক সপ্তাহ আরও জোরদার করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশব্যাপী একযোগে চলা এই কর্মসূচীতে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক গাড়ি আটক, জরিমানা ও মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এসব শাস্তি এড়াতে রাজধানীতে যানবাহন তুলনামূলক কম চলাচল করছে। তবে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে হঠাৎ ট্রাফিক সপ্তাহের ঘোষণা দেয়া হলে নগরবাসী আরও সতর্ক হতো। এটা এখন রুটিন চেকে পরিণত হয়েছে। গাড়ি আটক, মামলা দায়ের ও জরিমানার মাঝেই সীমিত হয়ে পড়ছে চলমান ট্রাফিক সপ্তাহ। এতে পুলিশ ছাড়া অন্য কারোর সম্পৃক্ততা ছিল না। বিশেষ করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে শুরু করা ট্রাফিকের বিশেষ সপ্তাহে নতুন কোন পরিকল্পনা নেই পুলিশের। যদিও ট্রাফিকের বিদ্যমান আইন কোন শিথিলতা ছাড়াই প্রয়োগের সিদ্ধান্তে পুলিশ অনড় থাকবে। এবারই প্রথম ট্রাফিক সপ্তাহে পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে সারাদেশে। এর বাইরে আর তেমন কিছুই করা হয়নি। এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অন্য সময় সাধারণত ব্যাপক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়েই এ ধরনের সপ্তাহ পালন করা হয়। কিন্তু এবার শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় আকস্মিক সিদ্বান্ত নেয়া হয় ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের। যে কারণে এখানে শুধু পুলিশকেই কাজ করতে দেখা যায়। রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ট্রাফিক আইন অমান্য ছাড়াও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে সরকারী-বেসরকারী সব ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ট্রাফিক সপ্তাহের প্রথম দিনে সারাদেশে বিভিন্ন যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে ২২ হাজার ৭৯৬টি মামলা করা হয়েছে। পরের দিন হয়েছে তার চেয়ে সামান্য বেশি। মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ট্রাফিক সপ্তাহের প্রথম দিনে সারাদেশে বিভিন্ন যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে ২২ হাজার ৭৯৬টি মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা মহানগরীতেই প্রথম দিন ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাত হাজার ৮১টি মামলা করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। দ্বিতীয় দিনেও ঢাকা মহানগরীতে অভিযানে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তিন হাজার ২৪০টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। আটক করা হয়েছে ৫২টি মোটরসাইকেল। উল্লেখ্য, গত রবিবার ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করুন- ট্রাফিক শৃঙ্খলা একটি জাতির সভ্যতার প্রতীক’ সেøাগান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হয়। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছিলেন, পুলিশ সপ্তাহের মতো প্রতিবছর আমরা ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করি। এর ধারাবাহিকতায় সরকারের নির্দেশে রবিবার ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হবে। সাধারণ মানুষকে ট্রাফিক আইন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন করাটাই এই ট্রাফিক সপ্তাহের মূল উদ্দেশ্য। একটি দেশের সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে চারটি বিষয়ের ওপর। ট্রাফিক এ্যাডুকেশন, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রাফিক এনভায়রনমেন্ট ও ট্রাফিক ইনফোর্সমেন্টের ওপর। যা আমাদের দেশে সঠিকভাবে নেই। আইজিপির এ বক্তব্য অনুযায়ী রাজধানীর কোথাও চোখে পড়েনি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নেয়া পদক্ষেপ। জসীম উদ্দীন ও বিমানবন্দর এলাকায় শুধু মাইকিং করে জনসচেনতা সম্পর্কে অবহিত করতে দেখা গেছে। পথচারীরা আইন অমান্য করায় জরিমানা করা হয়েছে বেশ কজনকে। বাসও আটক করা হচ্ছে। এর বাইরে অন্যত্র তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। বিশেষ করে আইজিপির বক্তব্য অনুযায়ী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নগরবাসী কিছুই অবহিত হতে পারেনি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে এখনও তেমন কিছুই জানতে পারেনি নগরবাসী। এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন সহকারী কমিশনার জানান, সাধারণত বছরে একাধিকবার পুলিশ সপ্তাহ পালন করা হয়। ট্রাফিক পুলিশ সপ্তাহও একাধিকবার পালন করা হয়। সেজন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি নেয়া হয়। ব্যাপক আগাম প্রচার চালানো হয়। বিশেষ কর্মপরিকল্পনাও থাকে। কিন্তু চলমান ট্রাফিক সপ্তাহে নতুন কোন পরিকল্পনা নেই। যাত্রী, পথচারী ও যানবাহন চালক ও শ্রমিকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করা, ট্রাফিক আইন মানা, অমান্য করার শাস্তি নিশ্চিত করাই ট্রাফিক সপ্তাহের মূল উদ্দেশ্য। এ জন্য যা করা দরকার, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যেমন -ফিটনেস, রুট পারমিট, গাড়ি ও চালকের লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাদের নেই, মোটরসাইকেলে তিনজন ও হেলমেট ছাড়া যারা সড়কে নামেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান শক্তভাবে শুরু করেছি। আমরা আইনের কঠোর প্রয়োগ করছি। পাশাপাশি ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করার জন্য লিফলেট দিচ্ছি। এ সম্পর্কে ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন-এটা নতুন কিছু নয়। আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি অনেক বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। চেকপোস্টগুলোতে কাজ করার জন্য রাজারবাগ ও মিরপুর পুলিশ লাইন থেকে রিজার্ভ ফোর্স থেকে অতিরিক্ত পুলিশ নেয়া হয়েছে। নিয়মিত চেকপোস্টের পাশাপাশি আরও নতুন চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিকের ৪৮টির মতো চেকপোস্ট রয়েছে। প্রত্যেকটি চেকপোস্টেই ট্রাফিক ও রিজার্ভের ১০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। তারপরও বিমানবন্দর এলাকায় বেশ কয়েকজনকে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করতে দেখা যায়। এ জন্য শাস্তি পেতে হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি মোঃ সোহেল রানা বলেন, ‘ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জনসচেতনতা বাড়ানো ছাড়াও ট্রাফিকের বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করার উদ্দেশেই ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। জানা মতে এ নিয়ে নতুন কোন পরিকল্পনা নেই। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পথচারীরা যেন রাস্তা পারাপারের সময় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে শৃঙ্খলার সঙ্গে যানবাহন চলাচল করে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ছাড়াও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা সড়কে টহল দিচ্ছেন। যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করছেন। সোমবার রাজধানীর বনানীতে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। বিমানবন্দর এলাকার ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান জানান, বৃহত্তর উত্তরা জোনের চারটি পয়েন্টে ১২ জন করে মোট ৪৮ জন ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের ডিউটি করছেন। পালা বদল করে চলছে মাইকিং। পথচারীকে বাধ্য করা হচ্ছে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার শুধু বিমানবন্দর পয়েন্টেই সকাল শিফটে ১৫৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে । রেকার লাগানো হয়েছে ২৬টি গাড়িতে। আব্দুল্লাহপুর বিটে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে পথচারীদেরকে। রাজধানীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইমরুল হাসান বলেন-রুট পারমিট, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন মোটরযানের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। যারা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন না, তাদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। শাস্তির পরিবর্তে চালক ও পথচারীদের আইন মেনে চলতে ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করছি। এজন্য আরও ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হলে ভাল হতো।
×