ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘জাতীয় জাদুঘর হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠতম জাদুঘর’

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ আগস্ট ২০১৮

‘জাতীয় জাদুঘর হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠতম জাদুঘর’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সংগ্রামের স্মারক নিয়ে ১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট যাত্রা শুরু করে জাতীয় জাদুঘর। কালের পরিক্রমায় ঢাকা জাদুঘর রূপান্তরিত হয় জাতীয় জাদুঘরের। মঙ্গলবার ছিল জাদুঘরের গৌরবময় ১০৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিকেলে জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেই আলোচনায় উঠে আসে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি পেরিয়ে জাদুঘরকে আরো সুসজ্জিত করার কথা। নিদর্শন সামগ্রী উপস্থাপনে ইতিহাসের পরম্পরা রক্ষার কথা। ব্যক্ত হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠতম জাদুঘরের পরিণত হওয়ার অঙ্গীকার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর : গৌরবময় ১০৫ বছর শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাদুঘরের ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের কিপার ড. স্বপন কুমার বিশ্বাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাদুঘরের সচিব শওকত নবী। জাদুঘরসজ্জায় অতীতকে আলিঙ্গন করে ভবিষ্যতের পথে ধাবিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে পথচলার ১০৫ বছর পূর্ণ করলো জাতীয় জাদুঘর। এই জাদুঘরকে সাজাতে হবে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়। অনেকেই মনে করেন, জাদুঘর মানে শুধুই অতীত ইতিহাসের উপস্থাপনা। প্রকৃত অর্থে অতীতকে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোই হচ্ছে একটি আধুনিক জাদুঘরের বৈশিষ্ট্য। তাই কেবল অতীতের প্রতœসামগ্রী দেখা নয়, অতীত ইতিহাসকে তুলে ধরতে হবে সমকালের আয়নায়। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বুলেন, যদিও একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ১৯৫২ সালে বাঙালীরা নিজেদের অস্তিত্ব বুঝতে শেখে। স্বাধীনতা যে অবধারিত ছিল একথা সর্বপ্রথম বুঝতে পারেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দেশ ভাগের পরপরই এ বিষয়টি উপলব্ধি করেন। তিনি আওয়ামী, মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ নামকরণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক দল গঠন করেন। সেই বিবেচনায় জাদুঘর ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে বাঙালী জাতির ইতিহাস তুলে ধরবে। সেই ভাবনায় বাঙালী জাতির সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতে হবে জাদুঘরকে। একইসঙ্গে ধারণ করতে হবে এই জাতির বৈচিত্র্যময় ইতিহাসকে। কারণ জাতিগত বৈচিত্র্য ধারণ করতে না পারলে সভ্যতা টিকবে না। তাই সমতলের মানুষের ইতিহাস রেখে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তাহলে হারিয়ে যাবে জাতিসত্তার বৈচিত্র্যময়তা। জাদুঘরের আধুনিকায়নের কথা উল্লেখ করে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে জাদুঘরে বিপুল পরিমাণে নিদর্শনসামগ্রী থাকলেও জায়গার অভাবে সেগুলো উপস্থাপন করা যাচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনায় নির্মিত হবে জাদুঘরের নতুন ভবন। প্রধানমন্ত্রী সেই নক্সাও দেখেছেন। সেই নতুন ভবনে অদেখা নিদর্শনগুলো দেখার সুযোগ পাবে দর্শকরা। আশা করা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠতম জাদুঘরের পরিণত হবে জাতীয় জাদুঘর। হাশেম খান বলেন, প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে পৃথিবী। তাই আধুনিকতাকে ধারণ করেই পথ চলতে হবে জাতীয় জাদুঘরকে। ১৯৯৭ সালে প-িত ব্যক্তি ড. আহমদ হাসান দানী কিউরেটর হিসেবে এই জাদুঘরের আধুনিকীকরণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই জাদুঘরে অনেক সমৃদ্ধ নিদর্শন থাকলেও সেগুলোর উপস্থাপনের ত্রুটি রয়েছে। হাশেম খান আরো বলেন, শুধু মৃত জিনিসের বিষয় নিয়ে জাদুঘর হবে না। জাদুঘরে বর্তমানে বিভিন্ন নিদর্শনও সংগ্রহ করতে হবে নতুবা অনেক কিছুই সময়ের গর্ভে হারিয়ে যাবে। প্রবন্ধ উপস্থাপনায় স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, জাতীয় জাদুঘর হচ্ছে ঢাকা জাদুঘরের উত্তরসূরী। ১০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ছিল ঢাকা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট। ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী ছিলেন ঢাকা জাদুঘরের প্রথম কিউরেটর। পরবর্তীতে বহুদিন জাদুঘরের কোন কিউরেটর ছিল না। পরবর্তীতে ড. আহমেদ দানী অবৈতনিক কিউরেটর হিসেবে যোগদানের পর জাদুঘর আবার পূর্বের রূপ ফিরে পেতে শুরু করে। নিদর্শন সংগ্রহ জাদুঘরের একটি মূল কাজ। অনেক সময় কিছু নিদর্শন সকলের অজান্তেই দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছে। আলোচনায় ফিরোজ মাহমুদ বলেন, জাদুঘর প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয় ১৯৬৬ সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জাদুঘরের পরিচালক ড. এনামুল হক আইসিওএমের সম্মেলনে বাংলাদেশ নামের ব্যাজ পড়েন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু এনামুল হককে হাজার বছরের বাঙালীর ইতিহাসের ধারাবাহিকায় জাদুঘরসজ্জায় তাঁর পরিকল্পনার কথা বলেন। এরপর এনামুল হক দেশের বাইরে চলে গেলে তাঁর অনুপস্থিতিতে আমি বঙ্গবন্ধুর কাছে যাই এবং জাদুঘর সাজানোর বিষয়ে তাঁর নির্দেশনা গ্রহণ করি।
×