ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাগ্রত অনুভূতি বনাম ষড়যন্ত্র সাবধান হতে হবে

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৬ আগস্ট ২০১৮

 জাগ্রত অনুভূতি বনাম ষড়যন্ত্র  সাবধান হতে হবে

যে কোন ভাল কাজকেও রাজনীতি বিপথগামী করে দিতে পারে। সেটাই দেখলাম আমরা। বাচ্চারা নেমেছিল ভাল উদ্দেশ্যে। তাদের সৎ ও আন্তরিক চেষ্টা শেষ অবধি মার খেতে যাচ্ছে রাজনীতির হাতে। এই রাজনীতি, এই দুষ্ট রাজনীতি এখনও বন্ধ হলো না দেশে। এতটাই ভয়াবহ যে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বার্তা পাঠিয়ে বলা হলো অপপ্রচারে কান না দিতে। এত অপপ্রচারের কী কারণ? ঘটনাটা তো রাস্তা ও যান নিয়ে। যেসব যান জান কেড়ে নেয় বা নিচ্ছে সেগুলো কি অন্য আমলে ছিল না? প্রথমেই বলে রাখি, ঘটনার ঘনঘটা বাড়িয়েছে সরকারের এক মন্ত্রী। ইনি জানেন না কোথায় হাসতে হবে আর কোথায় হাসি নিষেধ। সবচেয়ে বড় কথা, যে ঘটনার পর তিনি হাসলেন আর পাশের দেশের নজির টানলেন তাতে এটা প্রমাণিত আর যাই থাক তার কোন দিল নাই। থাকলেও দিলে কোন রহম নাই। তিনি সংযত আর সঠিক আচরণ করলে সামাজিক মিডিয়ায় এত ঝড় বইতে পারত না। তাছাড়া একজন মন্ত্রী কী করে এমন দুর্যোগে হাসেন? সেটাও বোধগম্য হলো না। যাই হোক, একটা লাভ হয়েছে। সারাদেশে যে প্রতিবাদ আর বাচ্চাদের যে অনুভূতি তাতে এটা বোঝা গেছে, আমাদের শুভবুদ্ধি এখনও লোপ পায়নি। মানুষ এখনও মানুষই আছে। শুধু বুদ্ধিবৃত্তি তার ভূমিকা পালনে ব্যর্থ। সেটা নিয়েও বলার নেই। যেসব দেশে বুদ্ধিজীবীরা দর্পণ তাদের ভূমিকা আয়নার মতো, সেসব দেশই সামনে এগোতে পেরেছে। আমাদের দেশে এখনও সে পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। তাদের ভূমিকা বা কাজের ওপর নির্ভর না করেই বাচ্চারা মাঠে নেমেছিল। সমর্থনও পাচ্ছিল। কিন্তু জনগণ কি এই দুর্ভোগ চেয়েছিল? হঠাৎ করে পরিকল্পিত দুর্ভোগ আর নৈরাজ্য কি বাচ্চাদের সৃষ্ট কিছু? তাদের যারা উস্কানিদাতা তাদের খুঁজে বের করতে হবে এখন। কারণ, আমি ছবিতে দেখলাম একটি বাচ্চার হাতে ধরিয়ে দেয়া এক পোস্টারে লেখা আছে : চ বর্গীয় শব্দ। ছি ছি ছি। যারা এই কাজটা করলেন তাদের রুচি আর মানসিকতাই বলে দেয় কতটা নীচ আর হীন তারা। যে কিশোরী কলাবেণী দুলিয়ে রাজপথে নেমেছিল তার শান্ত সৌম্য চেহারার সঙ্গে ‘এসব’ শব্দটা যায়? কাউয়া আর ... কোনটাই তার সঙ্গে যায় না। মানায় না। সে এগুলোর মানেও জানে না। তার হাতে তেমন সেøাগানের একটি প্ল্যাকার্ড ধরিয়ে দিল কারা? সরকারী দল এগুলোর মোকাবেলা না করে তাদের দমানোর যে চেষ্টা করেছে সেটা আরও মারাত্মক। এখানেই থিঙ্ক ট্যাঙ্কের দরকার। আর সেটার ব্যবহার নেই বলেই আজ এই হাল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরকারী দলকে সবসময় কোণঠাসা থাকতে হয়। আর তার সুযোগ নেয় বিরোধী দল। এ ঘটনার পর বয়োবৃদ্ধ এরশাদ সাহেবকে দেখলাম শোকসন্তপ্ত পরিবারের কাছে গিয়েছিলেন। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তিনি যখন বললেন, তিনি নাকি এগুলো দমনের জন্য আইন করেছিলেন, মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখেছিলেন আর সময় পেলে সব ঠিক করে ফেলতেন, তখন হাসি পেল। আমরা বি-স্মরণপ্রিয় জাতি। নয়ত মনে থাকত সে আমলে মানুষের গায়ে ট্রাক তুলে দেয়ার আইয়ুবীয় কায়দা। ভুলিনি আমরা। রাজনীতিবিদরাই ভুলে যায়। বিএনপি এখনও লেজে প্রাণ। তারা জীবন থাকতে সোজা হবে না। কারণ, এবারের ঘটনায় আবারও দেখা গেল মীর্জা ফখরুলরা আসলে কী চান? তাদের মনের ইচ্ছা একটাই- শেখ হাসিনার অপসারণ। পথের কাঁটা না সরানো পর্যন্ত তারা এক গান এক কথা গাইতে আর বলতে থাকবে। তাদের সহানুভূতি আর ভালবাসা কতটা মেকি সেটা ঘটনাতেই দেখা গেছে। এই বদরাজনীতিই আমাদের কিছু ধ্বংস করে দেয়। এখন চেহারাটা এমন- গাছের পাতা পড়তে দেরি হলেও সরকার দায়ী। সবাই জানেন সরকারের গাফিলতি বা কোথায় তারা পারছেন না। সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে গঠনমূলক কোন ব্যবস্থা বা সতর্কতার পরিবর্তে সরকার পতনের হাতিয়ার বা প্লট খোঁজা বিএনপি এবারও তাই ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত, যার সর্বশেষ উদাহরণ বিলেতের প্রতিক্রিয়া। গত কদিন দেশের পরিবেশ আর উত্তপ্ত রাজপথ আমাদের বিদেশেও শঙ্কিত করে তুলেছে। সত্যি বলতে কি, বাচ্চাদের সাহস আর শক্তি দেখে বিস্মিত হয়েছি। আর দশটা বিষয়ের মতো রাজনীতি বিশেষত দলীয় রাজনীতি এখানে নিদারুণ ব্যর্থ। আমাদের সঙ্কট বা সম্ভাবনায় রাজনীতি যে আসলে কোন পজিটিভ ভূমিকা রাখছে না এ ঘটনাই তার বড় প্রমাণ। মূল ঘটনা ছিল দুটি তাজাপ্রাণ। তাদের এই অকাল চলে যাওয়া সহপাঠীর পরে দেশের তারুণ্য ও বাচ্চারা মানতে পারেনি। পারার কথাও না। এবিষয় কি দেশে নতুন? প্রায় প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। বলা ভালো জান নিয়ে বেঁচে থাকাটাই এখন ভাগ্যের ব্যাপার। মানুষের জীবনবোধ আর সংগ্রামে সরকার কিংবা বিরোধী দলের রাজনীতি যে কত ঠুনকো আর ব্যর্থ সেটাই দেখলাম গত ক দিনে। তারেক জিয়া এর আগেও অনেকবার অপচেষ্টা করেছেন। তার রাগ ব্যর্থতা আর হিংসাই বিএনপিকে এতটা নীচে নামিয়ে এনেছে। এটা তার দলের নেতারা বোঝে। কিন্তু মুখ খুলতে পারে না। ফলে তার একচ্ছত্র আধিপত্য আর পারিবারিক রাজনীতি চলছে। সাবধান হতে হবে। বাংলাদেশের ঘটনা ঢাকা চট্টগ্রাম সিলেট খুলনার ঘটনা আমাদের দেশের মানুষই সামাল দেবেন। তারা সব জানেন আর বোঝেন। বিলেতে বসে সমস্যার আগুনে ঘর পুড়িয়ে আলুপোড়া খাবার দিন নাই আর। এটা খাম্বারাজ বোঝে না। আমরা দেশের বাইরে মানুষের উদ্বিগ্নতা আর আশংকা টের পাই। এটাও বুঝি মানুষ একটা শান্তিপূর্ণ দেশ আর সমাজ চায়। ভালো করে বিবেচনা করুন। এই সরকার এ অবদি দেশকে কতটা দিয়েছে। তাদের সবকাজ ভালো না। ঘুষ দুর্নীতি লুটপাট সব মিলিয়ে আর্ধিক খাতে যে অন্ধকার সে নিবে কিন্তু আন্দোলন নাই। রাজপথে মারামারি বা হানাহানি করে দেশের মঙ্গল নাই জেনেও তারা যেকোন ইস্যুতে সরকার হটানোকেই আসল কাজ বলে মেনে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছেন। শোকাহত পরিবারও বাচ্চাদের ঘরে ফিরে যাবার ডাক দিয়েছেন। তবু কিন্তু ঘটনা দুর্ঘটনা কোনটাই থামছে না। কেন থামছে না তার জবাব সরকারকেই খুঁজতে হবে। বলবো, বুদ্ধিজীবী বা সচেতন সমাজও মুখ খুলুন। আপনারা সরকারকে সজাগ করুন নিজেদের বিবেক দিয়ে সমস্যা অনুধাবন করুন। তবেই ষড়যন্ত্রকারীরা পথ পাবে না। মনে রাখতে হবে যেকোন বিপদে বিএনপি আর জামাত বা জঙ্গিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামে। সাথে আছে টাকা অস্ত্র আর উস্কানি। একদিন বেপরোয়া যান আর মানুষের জান নিয়ে যত ঘটনা তাতে মনে হয়েছে আমরা এখনো সভ্য হতে পারিনি। দীর্ঘমেয়াদী এই সমস্যার সমাধান একদিনে হবে না। এটা জানার পরও যারা মাতম করছে তারা যেমন দুশমন তেমনি যারা নীরব তারাও কি বন্ধু? এভাবনা এখন জরুরি। দেশ ও সরকারকে বিপদ ফেলে কিছুই অর্জিত হবে না। তাই বাচ্চাদের ঘরে ফেরার পাশাপাশি আমরা চাই সুষ্ঠু সমাধান। সেটা কি আমরা পাবো? [email protected]
×