ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় পতাকার আদলে পানির ফোয়ারা উদ্ভাবন

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৬ আগস্ট ২০১৮

    জাতীয় পতাকার আদলে পানির ফোয়ারা উদ্ভাবন

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ও জাফরুল হাসান, কালকিনি ॥ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে পানির ফোয়ারা উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মাদারীপুরের কালকিনির রমজানপুর ডক্টর আবদুস সোবহান গোলাপ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই খুদে বিজ্ঞানী নিউটন ও সাকিব। এ কৃতী দুই শিক্ষার্থীর স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া। তারা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উদ্ভাবন করতে চায় নতুন কিছু। তাই দেশপ্রেম ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান জানাতে তারা দুই বন্ধু নিউটন হাওলাদার ও সাকিব ইসলাম পানির সাহায্যে উদ্ভাবন করেছে লাল সবুজের পতাকা। কালকিনি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণের প্রত্যন্ত গ্রামের এক ইউনিয়ন রমজানপুর। এ ইউনিয়নের উত্তর রমজানপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ডক্টর আবদুস সোবহান গোলাপ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। সম্প্রতি এই ইনস্টিটিউটের মাঠের এক প্রান্তে গিয়ে দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। এর মধ্যে ঝলমল করছে লাল সবুজের পতাকা। যা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত দর্শনার্থী। দুই খুদে বিজ্ঞানী নিউটন ও সাকিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় যায় এ দুই শিক্ষার্থী। সন্ধ্যার পর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কয়েকটি ফোয়ারার দৃশ্য দেখে। তখনই তাদের মনে পানির ফোয়ারা দিয়ে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উদ্ভাবনের চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। তাই তারা তাদের মনের গভীরে উদ্ভাবনী চিন্তা ধারণ করে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। বাড়িতে ফিরেই কিভাবে জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করা যায় তা নিয়ে ভাবতে থাকেন। ইনস্টিটিউটের শিক্ষক আর সহপাঠীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পাঁচ মাস ধরে নিজেদের অর্থ আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে কাজ শুরু করে। শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, দৃষ্টিনন্দন এই পতাকা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে চারটি ইলেকট্রনিক্স পাম্প মোটর, লাল ও সবুজ রংমিশিত পানি, ১৫০টি গেট বল, ১৫০টি তামার এসিড পাইপ, ইলেকট্রনিক্স সার্কিটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। এসব সরঞ্জামের দ্বারা প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এটা উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে তারা। তাদের উদ্ভাবিত ফোয়ারা চার ফুট দৈর্ঘের একটি লাল সবুজের পতাকা। যার নাম দেয়া হয় ‘ডিজিটাল ওয়াটার বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্লাগ’। সরকারের অনুমতি ও সহযোগিতা পেলে জাতীয় পতাকার আদলে উদ্ভাবিত এই ফোয়ারা আরও আধুনিক করে গণভবন ও বঙ্গভবনে স্থাপন করতে চায় এই দুই খুদে বিজ্ঞানী। উদ্ভাবক নিউটন হাওলাদার ও সাকিব ইসলাম বলছে, ‘আমরা প্রথমত লাল সবুজের জাতীয় পতাকার আদলে ফোয়ারা উপস্থাপন করি। এখন এটি একেবারেই অগোছালো। তবে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে এই পতাকা নতুন আকার নেবে। আপাতত আর্থিক সমস্যার করণে আমরা এর চেয়ে উন্নত করতে পারছি না। তবে, সরকারের অনুমতি ও সহযোগিতা পেলে এটি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সম্মুখে স্থাপন করতে চাই। আর এটাই আমাদের স্বপ্ন। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখি বিভিন্ন ধরনের ফোয়ারা। পানির এই ফোয়ারায় যদি জাতীয় পতাকা থাকে তাহলে ছোট-ছোট শিশুরা এসব দেখে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং আমাদের জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানাবে। ডক্টর আবদুস সোবহান গোলাপ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রতিষ্ঠান। নিউটনরাই ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রথম ব্যাচ। আমরা দেখেছি ওরা নিজেদের অর্থায়নে ঝর্ণার আকারে দেশের জাতীয় পতাকা উদ্ভাবন করেছে। আমরা ওদের কাজে সহযোগিতা করেছি। তবে, এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার জন্য সরকার বেশি অর্থ বরাদ্দ দিলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। ফলে নতুন কিছু উদ্ভাবনে আমরা শিক্ষার্থীদের আরও উৎসাহ দিতে পারব।’
×