ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ভোগের অবসান কাম্য

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৬ আগস্ট ২০১৮

দুর্ভোগের অবসান কাম্য

বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে রাজধানীর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, অন্যদিকে যানবাহন মালিকদের আকস্মিক ‘ধর্মঘটে’ জনদুর্ভোগ উপনীত হয়েছে চরম পর্যায়ে। শুক্রবার থেকে শুধু রাজধানীতেই নয়, বরং সারা দেশেই দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল নিছক নিরাপত্তার অজুহাতে। আকস্মিকভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখায় একদিকে যেমন, রাজধানীর লোকজন বাইরে যেতে পারেনি, অন্যদিকে বাইরের লোকও কার্যোপলক্ষে আসতে পারেনি ঢাকায়। এতে সমূহ সঙ্কটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। নিত্যপণ্যসহ ব্যাহত হয়েছে মালামাল পরিবহন। স্বভাবতই ট্রেনে চাপ পড়েছে বেশি। সমস্যা হলো, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেসব সমস্যা সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনের আশু কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের শুরুতে বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের দুজন শিক্ষার্থীর বাসচাপায় মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে এসে সড়ক অবরোধ করে। পরে এই ঘটনায় সান্ত¡না ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের পরিবর্তে নৌমন্ত্রীর অনাকাক্সিক্ষত এক মন্তব্যে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর প্রায় সর্বত্র। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগানসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে। কিছু যানবাহনে ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগও করা হয়। ফলে স্বভাবতই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সত্য বটে, উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের তরফে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রায় সবরকম চেষ্টা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, যা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলনসহ নিহতদের বাসায় গিয়ে সান্ত¡না প্রদান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেকে ক্ষতিপূরণ দেয়াসহ সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকেও শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম ও বাসায় ফিরে যেতে অনুরোধ জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নিতেও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সময়ক্ষেপণ ও কার্পণ্য করা হয়নি। জাবালে নূর পরিবহনের বাসচালক, হেলপার এমনকি মালিককে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। এত কিছুর পরও শিক্ষার্থীদের রাজপথে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ সড়ক অবরোধের আদৌ কোন যৌক্তিকতা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। এখানে সব শ্রেণীর অভিভাবক এবং স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের সবিশেষ দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শুনিয়ে ক্লাসরুমে এবং বাসায় ফিরিয়ে নেয়ার। দুঃখজনক হলো, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে ইতোমধ্যে মোবাইল-ফেসবুকে উস্কানিসহ তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। সত্য বটে, দেশে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনার হার বাড়ছে। ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চলাচল, অপ্রশিক্ষিত ভুয়া লাইসেন্সধারী চালক, ত্রুটিপূর্ণ সিগনাল, ট্রাফিক আইন না মানা, সর্বোপরি বেপরোয়া যানবাহন চলাচলের কারণে প্রায়ই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। বেড়েছে নিহত ও আহতের সংখ্যা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ব্যাপক। সেই অনুপাতে বেপরোয়া যানবাহন চালকদের শাস্তিসহ ক্ষতিপূরণ আদায় সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে প্রকারান্তরে তারাই পার পেয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুর্ঘটনাকবলিত পরিবার। এই অবস্থায় যানবাহন মালিকদের পক্ষ থেকে আহুত ধর্মঘট পালনের বিষয়টি মোটেও কাক্সিক্ষত নয়। এতে করে দুই পক্ষেরই মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণের সুযোগ রয়েছে, যা অনাকাক্সিক্ষত ও অগ্রহণযোগ্য। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শান্তিকল্যাণ প্রতিষ্ঠায় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জরুরীভিত্তিতে আলাপ-আলোচনায় বসতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনটি সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। যত তাড়াতাড়ি এটি আইনে পরিণত হয়, ততই মঙ্গল। শুধু রাজধানীতেই নয়, বরং দেশের সর্বত্র ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলতে চাই, সড়ক-মহাসড়কে আর কোন দুর্ঘটনাজনিত রক্তপাত দেখতে আমরা অনিচ্ছুক।
×