ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরামের অভিষেক অনুষ্ঠানে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

খুনী গাড়িচালকদের ফাঁসি দিলে অন্যরা সতর্ক হয়ে যাবে

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৫ আগস্ট ২০১৮

খুনী গাড়িচালকদের ফাঁসি দিলে অন্যরা সতর্ক হয়ে যাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, দুই ক্রিমিনাল বাসচালক যে অপরাধ করেছে এর তুলনা হয় না। পাল্লা দেয়ার কারণে স্কুলছাত্রদের খুন করেছে। এটা ৩০২ ধারায় খুন। গত কয়েক বছরের ইতিহাস যদি টানি তাতে দেখা যায় অনেক নিরীহ মানুষ এই দস্যুদের হাতে মারা গেছে। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো গতি এবং পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো। আমি মনে করি আমাদের দেশে যেসব গাড়িচালক অন্যায় ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে মানুষ হত্যা করছে তাদের বিষয়ে মৃত্যুদ-ের আইন করা হোক। তাহলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। আজকে কয়েক জনকে ফাঁসি দিলে অন্য চালকগণ সতর্ক হয়ে যাবে। তাদের (চালকদের) বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে। অন্যদিকে যে সব ছাত্র লাইসেন্স চেক করার নামে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে তারাও রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করছে। এরা বিকল্প সরকার ও পুলিশের কাজ করছে। এটা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। আজ এরা রাস্তায় গাড়ি চেক করছে, ভবিষ্যতে আপনার বাড়ি যাবে। এর পর রাস্তায় পকেট চেক করবে। দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি জামায়াতের উস্কানিতে এরা এসব কাজ করছে। এদের অভিভাবক কারা ছুটির দিনেও তারা বাচ্চাদের রাস্তায় পাঠাচ্ছে। এদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সামনে নির্বাচন আন্দোলনের নামে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। তারা এ সরকারকে পতন ঘটাতে চায়। তাদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। শনিবার ডেইলি স্টার ভবনে সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরামের (এসএএলএফ) আয়োজিত নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আলোচনা সভায় এ্যাডভোকেট শেখ সালাউদ্দিন আহম্মেদে সভাপতিত্ব করেন। অন্যদের মধ্যে বত্তৃতা করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল রহমান হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতিময় বড়ুয়া, এ্যাডভোকেট বশির উদ্দিন, এ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন খান, হুমায়ুন কবির, এ্যাডভোকেট মোরশেদ আলম তালুকদার, এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, যে ছেলেটি হেলপার গোফ ওঠেনি অথচ সে গাড়িচালক। এতে করে রাস্তায় বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। আমি হাইকোর্টে থাকাকালীন স্পিড গবর্নর (ঝঢ়ববফ এড়াবৎহড়ৎ) চালু করেছিলাম। সেটা অবশ্যই চালু করতে হবে। প্রত্যেক পথে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাফিক বসাতে হবে। অন্যায়ের প্রতিযোগিতা অবশ্যই রোধ করতে হবে। আইনেও পরিবর্তন আনা উচিত। আগামী সংসদে সেই সব বিষয়ে আলোচনা হবে। ৩০২ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-। যারা মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে কথা বলে তারা স্বীকার করে অন্যায় প্রতিহত করতে হবে, যাতে আরেক জন না করে। যুক্তরাষ্ট্রে কোন কোন প্রদেশে মৃত্যুদ- আছে। যেখানে মৃত্যুদ- নেই সেখানেও মৃত্যুদ- ফিরে আসছে। আমি নিজেই তিনজনকে মৃত্যুদ- দিয়েছি। সাঈদী, কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সাঈদীর রায়টি হলো না। ক্ষেত্র বিশেষে এখনও মৃত্যুদ- প্রয়োজন। সৌদি আরবে অন্যায় করলে হাত কেটে দেয়। এতে সেখানে সন্ত্রাস খুন অনেকাংশে কমে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আরও কঠোর হবেন। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়াটাও মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রতিবাদ করার অনেক ধরনের পথ রয়েছে। মানববন্ধন, সভা সেমিনার করেও প্রতিবাদ করা যায়। প্রথম দুুইদিন আন্দোলন ভাল ছিল। তৃতীয় দিন থেকে পরিবর্তন হয়ে গেল। এসব ছেলেমেয়েদের উপদেশ দিচ্ছে কারা। এদের মধ্যে রাজনীতি ঢুকে গেছে। ছাত্রদের মাঝে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়ে। কোট আন্দোলনের সময় যেমন তারা ঢুকে পড়েছিল এবারও তাই হয়েছে। তারা নানা কৌশলে এ সরকারকে পতন ঘটাতে চায়। দুটি রাজনৈতিক দলের উস্কানিতে এসব কাজ করছে। প্যাকেট প্যাকেট বিরিয়ানি কোত্থেকে আসছে সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। বিচারপতি মানিক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তোমরা ঘরে ফিরে যাও। এর পরও তারা রাস্তায় লাইসেন্স চেক করছে। এর আগে সফল আন্দোলন হয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চের। তাদের আন্দোলন শাহবাগ চত্বরেই সীমাবদ্ধ ছিল। তারা কোন রাস্তা অবরোধ করেনি। কাদের মোল্লার ফাঁসির বিষয়ে তারা আন্দোলন করেছিল। আমরা সবাই চাই এই সব দস্যু যারা প্রতিযোগিতা করে মানুষ হত্যা করছে তাদের প্রতিহত করতে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিক সেটা হবে না। সব মন্ত্রীকেও সতর্ক হতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়াটাও সংবিধানের শাসনের পরিপন্থী। এ বিষয়টি সরকারকে মনে রাখতে হবে। বিশ্বের ইতিহাসে জঘন্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল এ মাসে। এ মাসেই বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শিশু রাসেল ও সুকান্ত বাবু নামে দুই শিশুকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ মাসেই বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তা ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণেই এ মাসটি অর্থবহ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ধর্মের নামে রাজনীতি হতে পারে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কত প্রজ্ঞার মানুষ ছিলেন ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যার পরে আমরা নিমজ্জিত হয়েছিলাম অতল জলে। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার এখন ক্ষমতায়। আশা করছি গণতান্ত্রিক ও মানিবাধিকারের অগ্রযাত্রা চলবেই। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আরও বলেন, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেমকে আদালতে তলব করে সারাদিন দাঁড় করে রেখেছিলাম। একাত্তর সালে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিলেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি দেশ ছেড়েছেন। নাৎসিরা যে অপরাধ করেছিল তাকে ছাড়িয়ে যায় ১৯৭১ এর ঘটনা। ৭৫-এর পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা ছিল পাকিস্তানপন্থী। জয় বাংলাকে দীপান্তরে পাঠিয়েছিল। শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়েছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশু পার্ক করেছিল তারা। তারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে তাদের বিচার করেছে। কয়েকজনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। এখনও বিচার চলছে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আইন পেশা নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। এটা রাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে আঞ্চলিক পরিসীমায় বিস্তৃত। আইনজীবীরা শুধু মামলা করবে ওই দিনটা শেষ হয়ে গেছে। তাদের কাজের ব্যাপ্তি প্রসারিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কোন কাজে আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। কিছু আমলা মন্ত্রী তার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়গুলো দেখতে হবে।
×