ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ সভাপতির অফিসে হামলা পূর্ব পরিকল্পিত ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৫ আগস্ট ২০১৮

আওয়ামী লীগ সভাপতির অফিসে হামলা পূর্ব পরিকল্পিত ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে। পাথরের নমুনা দেখে আমরা বলতে পারি, এই হামলা পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পাথরগুলো সচরাচর রাস্তায় পাওয়া যায় না, এগুলো শিলা পাথর। হামলার পর শনিবার বিকেলে ধানম-ি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হামলাকারীরা ব্যাগে করে এই পাথর নিয়ে এসেছে। তাদের কারও কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। এই হামলার স্টাইল দেখে আমি বলতে পারি, এটা সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা করতে পারে না। কারণ, এটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। ছাত্রদের আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী ও মতলববাজ বিএনপি-জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা এসব কর্মকা- করছে। দুর্র্র্বৃত্তদের হামলায় আওয়ামী লীগ অফিসের ১৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি পাথর দেখিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই পাথর আজকে স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে যা আছে, তার চেয়ে বেশি আছে ওই বিএনপি এবং তাদের সাম্প্রদায়িক দোসরদের হাতে। তারা নতুন নতুন স্কুল ড্রেস তৈরি করছে। মিরপুর থেকে নকল আইডি কার্ড তৈরি করছে। এরপর তারা স্কুল ও কলেজের ড্রেস পরে আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির অফিসের দিকে তেড়ে আসছে। এত দুঃসাহস। এরা স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী নয়। এরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত। যারা আজকে দেশকে অশান্ত করতে চায়, সেই জন্য তারা আমাদের পদত্যাগ চায়। বাংলাদেশে কোন দিনও অশান্তি দূর হবে না যদি বিএনপি নামক এই দলটির অস্তিত্ব থাকে। দেশের অশান্তি দূর করার জন্য টপ টু বটম বিএনপি নেতাদের পদত্যাগ করা উচিত। এরা না সরলে দেশ শান্ত হবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার প্রশ্ন কারা ছাত্রছাত্রীদের ড্রেস ও আইডি ব্যবহার করে কারা সঙ্ঘাতের উসকানি দিচ্ছে? কারা নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের ওপর ভর করছে? কারা নাশকতার পরিকল্পনা আঁটছে? উসকানি দিচ্ছে? রক্তপাত ঘটাতে তৎপরতা চালাচ্ছে? এটাই আমাদের প্রশ্ন। বিএনপি তাদের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকতে সব সময় আন্দোলনের অপেক্ষায় থাকে এমন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি অপেক্ষা করে কোথাও থেকে কোন মোক্ষম একটা ইস্যু খুঁজে পাওয়া যায় কি না। অবশেষে একটি দুর্ঘটনায় দুই ছাত্রের মৃত্যুতে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নয় দফা দাবিতে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে তখনই এই মহলটি ষড়যন্ত্র শুরু করে। সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দ-িত হয়ে কারাগারে। তাঁর মুক্তির জন্য পাঁচ হাজার লোকের এটা সমাবেশ বিএনপি বাংলাদেশে করতে পারেনি। তারা একটা হরতাল, বিক্ষোভ বা ধর্মঘট করতে পারেনি। তাদের নেত্রীর জন্য আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতা ঢাকতে তারা ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে অনুপ্রবেশ ঘটাতে চাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ফোনালাপ আপনারা শুনেছেন। তিনি কুমিল্লা নেতাদের বলেছেন, ‘আগে ঢাকা অবরোধ করতে হবে। কুমিল্লা বসে আন্দোলন করে কোন লাভ হবে না। আন্দোলন সফল করতে হলে ঢাকা দখল করতে হবে। তাই কুমিল্লা থেকে কমপক্ষে পাঁচশ’ নেতা ঢাকায় চলে আস।’ ‘আমরা আন্দোলনকে সহনশীলভাবে মোকাবেলা করছি’ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশবাসীসহ সবাই দেখছে কিভাবে একটা অরাজনৈতিক আন্দোলনকে নোংরা রাজনৈতিক রূপ দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত ও সাম্প্রদায়িক শক্তি। ছাত্রদের ভয় পাচ্ছে না। এখানে আমাদের অফিসের সামনেও গোলাগুলি হয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানাব তোমরা শান্ত থাক এবং ঘরে ফিরে যাও। প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন। শেখ হাসিনা আমাদের সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন কোমলমতি ছাত্রদের ওপর কোন প্রকার বল প্রয়োগ না করতে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সতর্ক থাকার আহ্বান ॥ এর আগে দলের সম্পাদকম-লীর সঙ্গে বৈঠক শেষে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে যারা শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায় তাদের ব্যাপারে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য বিএনপি এখন স্কুলের কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দেশে একটা বিশৃঙ্খলা করতে চাইছে। দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে সচেতন ও শুভবুদ্ধির সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী সুলতান সোলায়মান নামের ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের এক সহ-সভাপতির ছবি দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ধ্যার পরে এই কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা যখন বেশি থাকে না, তখন এদের মধ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে তাদেরকে বাস ভাংচুরের উসকানি দেয়া হয়। রাজনৈতিক ঘৃণ্য মতলব নিয়ে আজকে এই আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী এদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক ধারায় প্রবাহিত করতে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। তাই অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায় তাদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করছি। ছাত্রছাত্রীদের সব দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের শুভ বুদ্ধিমান অনেকেই বলেছেন সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। এমাজ উদ্দিন সাহেব, আবুল মকসুদ, ইলিয়াস কাঞ্চন সবাই ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলে যেতে বলেছেন। আর দাবি অনুযায়ী শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে আন্ডারপাসের অর্থ বরাদ্ধ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন। ডিজাইন সম্পন্ন হয়ে গেছে। দ্রুততার সঙ্গে আন্ডারপাসের কাজ সম্পন্ন করার জন্য টেন্ডার ছাড়াই সেনাবাহিনীকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ যেগুলো করতে হয় সেগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয়। যাতে করে কোন জটিলতা না থাকে, দ্রুত কাজগুলো শেষ হয়ে যায়। সরকার অনুপ্রবেশকারীদের কেন আইনের আওতায় আনছে না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ধৈর্যের সঙ্গে আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি, তাদের ভূমিকা অবলোকন করছি। আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে তাদের ছবিও পুলিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সংগ্রহ করছে। তাদের গতিবিধিগুলো আমরা রাজনৈতিকভাবেও দূর থেকে দেখছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোন দমনমূলক পদক্ষেপ এই ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর নেয়া যাবে না। এ কারণে পুলিশ নানান অপমান, অপদস্ত এবং হয়রানির শিকার হয়েও যে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে ধৈর্যের প্রায়শ দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক অপশক্তির মদদ যে আছে সেটা আমরা লক্ষ্য করছি। কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরছি। কেননা আমাদের বিশ্বাস কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে। দু’এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। দু’দফা সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, আবদুস সাত্তার, সুজিত রায় নন্দী, আফজাল হোসেন, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×