ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জলঢাকাজুড়ে তোলপাড়

শিবির ক্যাডারকে কাজী নিয়োগে এমপির সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১ আগস্ট ২০১৮

শিবির ক্যাডারকে কাজী নিয়োগে এমপির সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ছাত্র শিবিরের এক নেতাকে জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জন্য সরকারীভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) নিয়োগের সুপারিশ করেছে সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। তথ্য প্রমাণস্বরূপ ঘটনাটি মঙ্গলবার ছড়িয়ে পড়ায় জলঢাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ মতে সংসদ সদস্য যাকে নিকাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ রেজিস্ট্রার নিয়োগে সুপারিশ করেছেন সেই মনছুর আলী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের দায়েরকৃত নাশকতা মামলার চার্জশীটভুক্ত (মামলা নম্বর জিআর ২৫/১৩) তিন নম্বর আসামি। উক্ত মনছুর আলী জলঢাকা উপজেলার হাড়োয়া শিমুলবাড়ী গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে। জলঢাকা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১১জন ও জলঢাকা পৌরসভা এলাকার জন্য ৪ জনসহ মোট ১৫ জন নিকাহ রেজিস্ট্রারকে (কাজী) সরকারীভাবে নিয়োগের সার্কুলার দেয়া হয়। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ, যাচাই, বাছাই ও প্যানেল তৈরির জন্য গঠিত ৫সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য। যে সকল ইউনিয়ন বা পৌরসভায় নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) নিয়োগ সংক্রান্ত কোন প্রকার মামলা নেই শুধুমাত্র সেই সকল এলাকায় স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়ার নিয়ম বা বিধান রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় এমপি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সেই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মোটা অঙ্কের অর্থবাণিজ্যের মাধ্যমে একটি পদের বিপরীতে একাধিক ডিও লেটার দেয়ার অভিযোগ করেছেন অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ভুক্তভোগী একাধিক নিকাহ রেজিস্ট্রার। তথ্য প্রমাণস্বরূপ অভিযোগকারীরা হাজির করে জানায়, চলতি বছরের ৫ এপ্রিল নীলফামারী-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নে সরকারীভাবে স্থায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য হাড়োয়া শিমুলবাড়ীর মতিয়ার রহমানের ছেলে ওই এলাকার দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার ২০১৩ সালে হরতাল চলাকালে উত্তর বেরুবন্দ বড়বাড়ী এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটতরাজ মামলার চার্জশীটভুক্ত ৩ নম্বর আসামি মনছুর আলী। জামায়াত শিবিরের এই নেতা মনছুর আলীকে সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা স্বাধীনতার পক্ষের পরিবারের সদস্য উল্লেখ করে আইন মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার প্রেরণ করেন। যার প্রেক্ষিতে মনছুর আলীর নামে প্যানেল তৈরির জন্য চলতি বছরের ১৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব বুলবুল আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারকে প্রেরণ করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে ওই এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে নাশকতা মামলার বাদী রনজিত কুমার রায় ক্ষোভের সঙ্গে জানায়, জীবনবাজি রেখে আমরা তাকে ভোট দিয়ে এমপি করেছি, আর তিনি জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে বানায় স্বাধীনতার পক্ষের পরিবার। আশ্চর্য হতে হয় এমপির কর্মকা- দেখে। মনছুর আলীর বিষয়ে শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুনীল কুমার রায় বলেন, তার গোটা পরিবার জামায়াত শিবিরের সঙ্গে জড়িত এবং শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের নাশকতার মামলার আসামি। এমপি তাকে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ বলে ডিও লেটার দেয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাই ও এমপির সুপারিশের ডিও লেটার বাতিলের দাবি করছি। এ সকল বিষয় নিয়ে জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এমপি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় জলঢাকার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জামায়াতের রোকন এমন নেতাদের অস্থায়ীভাবে তিন মাসের জন্য কাজী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। তারা দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কাজীগিরি করছে। সেটি আমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বাতিল করে নতুন করে কাজী নিয়োগের চেষ্টা করছি। এখনও কাজী নিয়োগ করা হয়নি। তিনি বলেন, এ নিয়ে যদি কোথাও কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকে সেটি যাচাই বাছাই কমিটি দেখবে। তবে নিয়ম অনুযায়ী কাজী নিয়োগ করা হবে। নাশকতা মামলার আসামি শিবিরের নেতা মনছুর আলীকে কাজী হিসেবে শিমুলবাড়ি ইউনিয়নে নিয়োগে ডিও লেটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন ডিও লেটার দিলেই যে নিয়োগ হবে তা নয়।
×