ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১ আগস্ট ২০১৮

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘হে মহান, মহাবীর/ গর্ব তুমি বাঙালী জাতির/ তুমিই তো জাতির পিতা/ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।/ তুমি রবে ততদিন/ বাঙালী জাতির হৃদয়ে/ যতদিন তোমার অর্জিত বাংলার পতাকার/ সেই লাল রক্তিম সূর্য উদ্দীপ্ত হবে/ বাংলার পূর্ব আকাশে।’ বাঙালীর জীবনে আগস্ট মানেই শোকের মাস, বেদনার মাস। বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালী জাতির ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা শোকাবহ আগস্ট। আজ বুধবার আগস্টের প্রথম দিন। শোকের মাসে প্রত্যয় ও শপথে শোককে শক্তিতে পরিণত করার অভয়মন্ত্রে আবার উদ্দীপিত হবে বাঙালী জাতি। দেখতে দেখতে জাতির পিতা হত্যার কালো অধ্যায়ের ৪৩ বছর পূর্তি হলো। কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি মাসব্যাপী নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বীর বাঙালীর ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে এ মাসেই। ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বাঙালী জাতি পিতৃ হন্তারকের বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলেও আমাদের প্রতিটি শিরা উপশিরা ও ধমনিতে তীব্র ঘৃণার উদ্রেক করে এ মাস। ইতিহাসে হয়তো এ মাসে অনেক বিজয়ের কাহিনী লেখা আছে। কিন্তু বিজয়ের সেসব কাহিনী রক্তের স্রোতধারায় মিশেছে আগস্টে এসে। এ মাস নতুন করে ভাবতে শেখায়। এ মাস প্রতিশোধের চেতনায় শানিত করে সবাইকে। ১৯৭৫ সালের এই মাসেই বাঙালী হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৫ আগস্ট কালরাতে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, একাত্তরের পরাজিত ঘৃণ্য নরপশুরা একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে। জঘন্যতম এই হত্যাকা- থেকে বাঁচতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন। পরাস্ত পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের ষড়যন্ত্রের নৃশংস শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার তথা মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনা। এই শোকের মাসেই বাঙালীর স্বাধীনতার স্থপতির বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল স্বাধীন শ্যামল বাংলার মাটি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ত্যাগ, দূরদর্শিতা এবং অকুতোভয় আপোসহীন নেতৃত্বে দেশ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল। বাঙালী জাতি পেয়েছিল হাজার বছরের আকাক্সিক্ষত প্রিয় স্বাধীনতা, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন মানচিত্র। বজ্রকণ্ঠে তিনি ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে রক্তনদী পেরিয়ে অর্জিত হয়েছিল মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। যে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে বন্দী রেখেও দেশে স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাঁকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। জাতির পিতাকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি ৪৩টি বছর বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরাধিকারিনী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। তাই শোকার্ত বাঙালী জাতি পুরো আগস্ট মাসজুড়ে গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবেন বাঙালী জাতির এই মহানায়ককে। বুধবার দিবাগত রাতের প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আলোক শিখা প্রজ্বলন, আলোর মিছিল ও শপথ গ্রহণের মাধ্যমে শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচী শুরু হয়। আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অজস্র সংগঠন মাসব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও কৃষকলীগের রক্তদান কর্মসূচীর মাধ্যমে শোকাবহ আগস্টের কর্মসূচী শুরু হবে। আজ বিকেলে ধানম-িস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় এই রক্তদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ দু দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। শোকের মাসের প্রথম দিন আজ বুধবার বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বিকেল সাড়ে চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আমরা সূর্যমুখী’ আজ বিকেলে জাতীয় জাদুঘর সিনেপ্লেক্স মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ঃ গণমানুষের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
×