ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন

জঙ্গী গ্রুপগুলোর একজোট হওয়ার ছক, টার্গেট কিলিংয়ের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩০ জুলাই ২০১৮

  জঙ্গী গ্রুপগুলোর একজোট হওয়ার ছক, টার্গেট কিলিংয়ের আশঙ্কা

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, জেএমবি, নব্য জেএমবি হরকত-উল জিহাদ ও হিযবুত তাহ্রীরসহ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলো এক ছাতার নিচে শামিল হওয়ার ছক কষছে। জেল থেকে বসে লেখা এক জঙ্গীর চিঠি থেকে ফের জঙ্গী হামলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের তথ্য পাওয়ার পর নাশকতা আশঙ্কা রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। জঙ্গী গোষ্ঠী হিটলিস্টে আওয়ামী লীগ, প্রগতিশীল লেখক, চিন্তাবিদ, ব্লগার, সংখ্যালঘু, পুলিশ প্রশাসনের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা ও ভিআইপিরা। জঙ্গীরা গোপনে নতুন সদস্য সংগ্রহ, তহবিল সংগ্রহ, প্রচারণা ও টার্গেট নির্ধারণের কাজ করছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে এই ধরনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ বগুড়ায় তিন জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। এদের একজন হলো আবির। আবিরের কাছে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতাদের উদ্দেশে জেলে বসে অন্য এক জঙ্গীর লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার দুটি চিঠি পাওয়া যায়। চিঠি দুটি জেএমবির আমির সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে দাদা ভাইয়ের উদ্দেশে লেখা। চিঠিটি পৌঁছানোর আগেই তা গোয়েন্দাদের হাতে এসে পড়ে। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ খুন করে প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়া সালেহীন বর্তমানে ভারতে থেকে পুরনো জেএমবির নেতৃত্ব দিচ্ছে। পালিয়ে থাকা আরেক জঙ্গী জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান জামাতুল মুজাহিদিন ইন্ডিয়া (জেএমআই) নামে সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। চিঠিতে ওই জঙ্গী লিখেছে, এ্যামুনেশন সংগ্রহে তৎপর হওয়া দরকার। সামনে নির্বাচন। বিভিন্ন রকম সহিংসতা হবে। এই সুযোগ কাজে লাগানো দরকার বলেও উল্লেখ রয়েছে চিঠিতে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গী সংগঠনগুলো বড় ধরনের হামলায় সক্ষম না হলেও জঙ্গীঝুঁকি এখনো আছে বাংলাদেশে। রাজশাহী, গাইবান্ধা, বগুড়া, নাটোরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন দুর্গম চরে তারা আবারো জড়ো হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে সব নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী একাট্টা হচ্ছে। জেল থেকে বসে লেখা এক জঙ্গীর চিঠি উদ্ধার করার পর তা থেকে এমনই তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। জঙ্গীরা বড় ধরনের হামলা করার মতো এই মুহূর্তে সক্ষম নয় বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন দাবির মুখেও আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, জেএমবি, হরকত-উল জিহাদ ও হিযবুত তাহ্রীরসহ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলো এক ছাতার নিচে শামিল হচ্ছে মর্মে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে সব নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনকে এক ছাতার নিচে আনার পরিকল্পনা নিয়ে তৎপর ছিলেন নব্য জেএমবির প্রধান তামিম আহমেদ চৌধুরী। কিন্তু তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার কারণে তার সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গীবিরোধী অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দেশের জঙ্গী সংগঠনগুলো। খিলাফত রাষ্ট্র গঠন, দেশে ইসলামী শাসন কায়েমের লক্ষ্যে তারা তাদের মতভেদ ভুলে একজোট হওয়ার চেষ্টা করছে গোয়েন্দা সংস্থা এমন তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের দেয়া এক চিঠিতে দেশের থানা, চেকপোস্টসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে নাশকতা-হামলার আশঙ্কা করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো বড় ধরনের জঙ্গী হামলা করতে না পারলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘টার্গেট কিলিং’ চালাতে পারে। টার্গেট কিলিং ঠেকানো কঠিন বিষয়। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশে^র কোন দেশ এ পর্যন্ত টার্গেট কিলিং ঠেকাতে পারেনি। গুলশান হামলার পর প্রকাশ্যে আসে আইএস মতাদর্শী জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবি। এর আগে সবচেয়ে বেশি টার্গেট কিলিং ঘটিয়েছে আল কায়েদাপন্থি আনসার আল ইসলাম। এ দুটি সংগঠনই দেশে টার্গেট কিলিংয়ে যুক্ত। তবে জেএমবির পুরনো অংশটিও ভিন্ন মতাবলম্বীদের টার্গেট করে হত্যা করেছে। গত এক যুগে জেএমবি কিংবা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ বেশ কয়েকটি নিষিদ্ধ সংগঠন ভেঙে ভিন্ন ভিন্ন নামে তাদের উগ্রপন্থি মতবাদ নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে। এ ছাড়া জঙ্গিরা আঘাত হানতে পারে গুরুত্বপূর্ন স্থাপনায়। দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলে নির্বাচনের পরিস্থিতি অশান্ত ও অস্থিতিশীল করে তোলার ছক কষছে জঙ্গিরা। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো বিদেশের কাছে তাদের তৎপরতা তুলে ধরার জন্য নির্বাচনের সময়কে বেছে নিতে পারে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি। পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম শুক্রবার মুঠোফোনে জনকণ্ঠকে বলেছেন, ওরা ছক কষবে আর আমরা তাদের ধাওয়া করব। আমরাতো বসে থাকব। আমরা কাজ করছি-গুলশান হামলার পর থেকে আমরা নিরলসভাবে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে রয়েছি। ইতোমধ্যে তাদের নেটওয়ার্ক তছনছ হয়ে গেছে। এখন ক’দিন ধরে তারা আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে এটাও সত্য। কিন্তু সুবিধা করতে পারবে না। তিনি বলেন, ছোটখাটো ঘটনা ঘটানোর পাঁয়তারা করতে পারে।
×