ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৯ জুলাই ২০১৮

নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

বরিশাল খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ রাত পোহালেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ইতোমধ্যে নগরীর ভোটাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কাকে বসাবেন নগরপিতার আসনে। এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ঘুরে। বরিশালবাসীর কাছের মানুষ, তাদের ভরসার ঠিকানা আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে ভোটের মাধ্যমে চতুর্থ পরিষদের মেয়রের আসনে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সর্বস্তরের ভোটাররা। অল্পসময়ে বরিশালের রাজনীতিতে একচ্ছত্র হয়ে উঠছেন সাদিক আব্দুল্লাহ। নিজের কর্মগুণে তিনি সাধারণ ভোটারদের মনে শক্ত স্থান করে নিয়েছেন। সাদিকের পিতা জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পর এখন তিনিই (সাদিক) বরিশালের আলোচিত নেতা। তাকে ঘিরেই নতুন স্বপ্ন দেখছেন বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ। তরুণ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ যেভাবে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তাতে বলাই যায়, বরিশালের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। আর এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের কার্যক্রম দেখে সাদিক আব্দুল্লাহকে নগরপিতার আসনে বসাতে সর্বত্র গণজোয়ার উঠেছে। নগরীর সাধারণ ভোটারদের মতে, উন্নয়নের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাদিক আব্দুল্লাহর ফুফু। তাকে (সাদিক) বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত করা হলে বরিশালবাসী উন্নয়নের জোয়ার দেখবে। আর উন্নয়নের জোয়ার দেখার জন্যই সাদিক আব্দুল্লাহকে ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নগরপিতার আসনে বসাতে চাচ্ছেন নগরবাসী। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও চারবারের সংসদ সদস্য বর্তমানে সিটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ মার্কার মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ বয়সে তরুণ ও নির্বাচনের মাঠেও নতুন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন, সাদিক আব্দুল্লাহর তারুণ্য আর বাবা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অভিজ্ঞা; মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে সরোয়ারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ সাদিক আব্দুল্লাহ। বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ ও নারী ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০। ভোট কেন্দ্র ১২৩টি ও ভোট কক্ষ ৭৫০টি। এরমধ্যে ১১২টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট মেয়র প্রার্থী ছয়। প্রচারে মেয়র প্রার্থীদের সহধর্মিণীরা ॥ প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে প্রচারে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর সহধর্মিণী লিপি আব্দুল্লাহ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর সহধর্মিণী নাছিমা সরোয়ার। পাশাপাশি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে অনেকের সন্তানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও ভোট চাইতে প্রার্থীর পক্ষে নেমেছেন। প্রচারের মাঝামাঝি সময় থেকে মাঠে ছিলেন বিএনপির ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের সহধর্মিণী নাছিমা সরোয়ার। তিনি তার স্বামীর পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়িয়েছেন গোটা নগরীতে। তার সঙ্গে ছাত্রদল ও মহিলা দলের নারী নেত্রীরা ছিলেন সহায়ক হিসেবে। আর এ ভোট চাইতে গিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে এসেছেন আলোচনায়। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু মজিবর রহমান সরোয়ারের সহধর্মিণীই নয় তার পুত্র নাফিস সরোয়ারও ছিলেন মাঠে। কখনও বাবার সঙ্গে আবার কখনও মায়ের সঙ্গে সে প্রচার করেছেন। অপরদিকে বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সহধর্মিণী লিপি আব্দুল্লাহ শেষ সময়ে হলেও কয়েকদিন ধরে নগরীর অলি-গলি চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের কাছে গিয়ে স্বামী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর জন্য ভোট চাচ্ছেন। তার সঙ্গে নারী নেত্রীদের পাশাপাশি জেলা ছাত্রলীগের সদস্য মনির হোসেন ও প্রার্থীর বংশীয় ভাই ছাত্রলীগ নেতা সাগর সেরনিয়াবাত উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সাদিক আব্দুল্লাহর মা শাহনারা বেগম, ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহ শুরু থেকেই নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। বিশেষ করে কলোনির বর্ধিত এলাকায় তাদের পদার্পণ ছিল চোখে পড়ার মতো। অপরদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়রপ্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের সহধর্মিণী ইসমাত আরা ইকবালও প্রথম থেকেই চষে বেড়িয়েছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকা। নারী ভোটার শাকিলা ইসলাম বলেন, প্রার্থীদের সহধর্মিণীদের মাঠে নেমে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ায় ফলাফলে প্রভাব পরবে। কারণ প্রার্থীর চেয়েও তাদের স্ত্রীরা বেশ কাছে যেতে পেরেছেন নারী ভোটারদের। নাশকতার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ ॥ সিটি নির্বাচনে সিলেটের মতো বিএনপির সন্ত্রাসীরা বরিশালেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়াসহ নাশকতামূলক কর্মকা- ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ জন্য পুলিশ প্রশাসনকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়ে নেতৃবৃন্দরা বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের নয়টি অভিযোগ দেয়া হলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার ইতোপূর্বে সিটি মেয়র, এমপি এবং হুইপ ছিলেন। তিনি এমন কোন উন্নয়ন দেখাতে পারবেন না, যার কারণে জনগণ তাকে ভোট দেবেন। বরং সিটি মেয়র থাকাকালীন সময় বরিশালের মানুষ তাকে ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’ হিসেবেই জানত। সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোটের নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে এনালগ যুগের মানুষ মজিবর রহমান সরোয়ার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। নগরীর সদর রোডের দলীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইছাহাক আলী খান পান্না। বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে বরিশালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বলেন, তাদের কর্মীরা নৌকার পোস্টার ছিঁড়েছে, প্রকাশ্য মিছিল করেছে, শোডাউন করেছে। উঠান বৈঠকের নামে প্রকাশ্যে জনসভা করেছে সরকারী অফিসের সামনে এবং জনগণের চলাচল বিঘœ করে রাস্তার পাশে নির্বাচনী অফিস করেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস একটি সংবাদ সম্মেলন করে সেখানে তিনি চরম মিথ্যাচার করেছেন। এ ধরনের মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। তিনি বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সুষ্ঠু পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। বিএনপি নেতার অভিযোগ ॥ বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান বলেছেন, বরিশালে আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের পরাজয় বুঝতে পেরে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে চাইছে। শনিবার নগরীর হাসপাতাল রোড এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন। সুজন’র পদযাত্রা ॥ ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চতুর্থ পরিষদের নির্বাচন অবাধ, নিরপক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সৎ, যোগ্য জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের সর্বস্তরের ভোটাররা যাতে নির্বাচিত করেন সেই আহ্বানে শনিবার বেলা এগারোটায় নগরীতে মানববন্ধন ও শান্তি পদযাত্রা কর্মসূচী পালিত হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র জেলা ও মহানগর কমিটির আয়োজনে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোডে এ কর্মসূচী পালন করা হয়। মোবাইল মেসেজে ভোট প্রার্থনা ॥ সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। সামাজিক যোগাযোগের অন্যমত মাধ্যম মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে ভোট চাইছেন তারা। ডিজিটাল প্রচারে পিছিয়ে রয়েছে অন্য চার মেয়র প্রার্থী। ভোটারদের মোবাইলে পাঠানো নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থীর মেসেজটিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পিছু ফিরে তাকানোর দিন শেষ। এবার সমৃদ্ধির পথ ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। আসুন আপনি, আমি এবং আমরা সবাই মিলে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে গড়ে তুলি সমৃদ্ধির বরিশাল’। অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে পাঠানো মোবাইল বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ‘মেয়র পদে এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিন’। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজের মতো করে ওয়ার্ডের ভোটারদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে নিজেদের জন্য ভোট প্রার্থনা করেছেন। বিএনপির প্রচার গাড়িতে হামলার অভিযোগ ॥ সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রচার গাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলাকারীরা প্রচার কাজে নিয়োজিত দুই কর্মীকে মারধর করে প্রচার মাইক ও একটি অটোরিক্সা ভাংচুর করেছে। বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচন প্রচারে উপ-কমিটির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট আকতার হোসেন মেবুল অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কালিজিরা ব্রিজ এলাকায় ধানের শীষ মার্কার প্রচারের প্রাক্কালে নৌকা প্রতীকের ২০/২৫ সমর্থক একত্রিত হয়ে হামলা চালায়। কোতোয়ালি মডেল থানার এএসআই রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে পুলিশ অবগত নয়। তাছাড়া কেউ তাদের কোন কিছু অবহিতও করেননি। আবাসিক হোটেলে রেড এ্যালার্ট ॥ ৩০ জুলাইর সিটি নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে শুক্রবার রাতে নগরীর সব আবাসিক হোটেলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে বোর্ডার বের করে দিয়েছে পুলিশ। এমতাবস্থায় বলা চলে আবাসিক হোটেলগুলোতে একধরনের রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার স্বাক্ষরিত এক নোটিসে উল্লেখ করা হয়, আগামী ২৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে ৩০ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় লঞ্চ, স্পিডবোট, ইঞ্জিনচালিত যেকোনো ধরনের নৌযান এবং ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জীপ, পিকআপ, বাস, ট্রাক, টেম্পো, বেবিট্যাক্সি, অটোরিক্সা, ইজিবাইক ও নসিমন, করিমন, ভটভটি, টমটমসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া ২৮ জুলাই রাত ১২টা থেকে ৩১ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এদিকে কর্মজীবী ও নিয়মিত বসবাসকারীরা ব্যতীত নির্বাচনী এলাকায় অন্য কেউ যাতে না থাকতে পারে সেজন্য নগরজুড়ে ব্যাপক মাইকিং করা হয়েছে। ১৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ॥ সিটি কর্পোরেশেন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চার শ’ সদস্যর ১৯ প্লাটুন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। শনিবার সকাল থেকে বিজিবির সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছেন। পাশাপাশি র‌্যাব-পুলিশের সদস্যরাও তাদের টহল অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ মুজিবুর রহমান। এছাড়াও ৯ বিচার বিভাগীয় (জুডিসিয়াল) হাকিম ও ৫৪ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৫ প্লাটুন বিজিবি মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। চার প্লাটুন স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে, তারা বিশেষ প্রয়োজনে বের হবেন। র‌্যাব-৮ এর উপ-পরিচালক মেজর সোহেল রানা প্রিন্স জানান, তাদের প্রায় তিন শ’ সদস্য নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করবেন। এরমধ্যে ৩০টি টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে এবং চারটি টিম রিজার্ভ রাখা হবে। এরইমধ্যে র‌্যাবের টহল নগরজুড়ে অব্যাহত রয়েছে, পাশাপাশি নগরীর প্রবেশদ্বারে তিনটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে পুলিশের দুই হাজারের ওপর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। মোট সদস্যের মধ্যে দুই হাজার ১৩ পুলিশ ও ১৫৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের সদস্য রয়েছেন। এছাড়াও আনসারের দুই হাজার ১৫৯ সদস্য কাজ করবেন। এদের মধ্যে ৪৩৭ ব্যাটালিয়ান আনসার রয়েছে। জাপা থেকে মেয়র প্রার্থী তাপস বহিষ্কার ॥ সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে নৌকার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে সমর্থন না দিয়ে নিজেই মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনড় থাকায় তাপসকে বহিষ্কার করা হয়। দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়া ও পার্টির শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইকবাল হোসেন তাপসকে জাতীয় পার্টির সব পদ ও পদবি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজশাহী মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাত পোহালেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। শনিবার মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। শেষ দিনের প্রচারের শুরুতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সংবাদ সম্মেলন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য তিনি সবার সহায়তা কামনা করেছেন। তবে একইদিন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে হুঙ্কার দিয়েছেন। বুলবুল বলেন, সিটি নির্বাচনকে ঘিরে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ভোটে ষড়যন্ত্র করে ফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনে ভোট কেন্দ্র দখল, থানা ঘেরাও এমনকি নির্বাচন কমিশন অফিসের ইট খুলে নেয়ার হুমকিও দিয়েছেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী। শনিবার সকালে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নির্বাচনের প্রচার শুরু থেকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এমনকি আজও মেয়র প্রার্থী বুলবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, ফল তাদের (বিএনপির) অনুকূলে থাকলেই তারা বলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে আর হেরে গলে বলে কারচুপি হয়েছে। বিএনপিকে লক্ষ্য করে লিটন বলেন, এমন মানসিকতা ঝেড়ে ফেলুন। নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ তৈরি করুন। মনগড়া গুজব না ছড়িয়ে নির্বাচনের ফল মেনে নেয়ার মানসিকতা রাখুন। সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। লিটন বলেন, আমি অতীতেও বলেছি, এখনও বলছি, নির্বাচনের ফল যাই হোক না কেন, আমি মেনে নেব। প্রতিপক্ষ প্রার্থীরও জনগণের রায় মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। লিটন বলেন, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারের প্রথম দিন থেকেই বিএনপি বলে আসছে, নির্বাচন স্বচ্ছ হবে না, সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা নেই। এটি বিএনপি বাংলাদেশের সবখানে বলে, যেকোন নির্বাচন এলেই তারা এসব বলে। ১০ বছর ধরে শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। তাদের এসব কথায় রাজশাহীর মানুষও বিরক্ত হয়ে গেছে। খেলতে নেমেই তারা বলছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এটি বলা তাদের মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছে। লিটন বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নাকি নদীর ধার ও রেললাইনের বস্তি উচ্ছেদ করব, এমন মিথ্যাচার করছে বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকরা। যেখানে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ছিন্নমূল-ভূমিহীন মানুষের জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছেন সেখানে আমরা কেন বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করব? অতীতেও এমন কিছু করিনি, আগামীতেও করব না। বরং আমরা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করব। জনগণের কল্যাণে কাজ করব। আগামীতে রাজশাহীর আয়তন বাড়ানো হবে। বর্ধিত অংশে যে গ্রামগুলো থাকবে, সেখানকার মানুষও নগর জীবনের সুযোগ-সুবিধা পাবে। লিটন আশা প্রকাশ করে বলেন, নগরবাসী এবার নৌকার পক্ষে রয়েছেন। নৌকায় ভোট দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাই তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার। তিনি সেটাই চান। শুরু থেকেই রাজশাহীবাসী উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটের প্রচারে শামিল হয়েছেন। এখন উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা দরকার। মানুষ যাতে সহজে ঘর থেকে বেরিয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আবার বাসায় ফিরে আসতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন লিটন। এ সময় লিটন রাজশাহী নগর গড়ার পরিকল্পনাও তুলে ধরেন। লিটন বলেন, তিনি মেয়র হলে রাজশাহী সিটির আওতা বাড়িয়ে মেগাসিটিতে রূপান্তর করতে চান। একলাখ মানুষের কর্মসংস্থান তার স্বপ্ন উল্লেখ করে বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি এশিয়ার উন্নত নগরে পরিণত করবেন রাজশাহীকে। এদিকে নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ৩০ তারিখের আগে কোন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হবে। রাজশাহীতে মডেল নির্বাচন না হলে থানা ঘেরাও এমনকি নির্বাচন কমিশন অফিসের ইট খুলে নেয়া হবে। ভোটের দিন অস্বাভাবিক পরিস্থতি দেখলে আমরা কেন্দ্র দখল থেকে শুরু করে যা যা করা প্রয়োজন তাই করব। সকালে নগরীর জেলগেট থেকে গণসংযোগ শুরু করে সিপাহীপাড়া, ফায়ার সার্ভিসের মোড়, সাহেববাজার এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। বুলবুল বলেন, ধানের শীষের গণজোয়ার দেখে সরকার দলীয় প্রার্থী নিশ্চিত পরাজয় জেনে ভীত হয়ে ভোট কারচুপি ও জাল ভোট প্রদান করার জন্য ঢাকা থেকে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার আনার ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনকে ঘিরে কালো গাড়ির দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ১০টি কালো গ্লাসওয়ালা গাড়ি সিটিতে ঘোরাফেরা করছে। ট্রাফিক দেখেও না দেখার ভান করছে। বুলবুলের অভিযোগ, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নেতাকর্মীসহ নারী নেত্রীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। গণগ্রেফতার ও পুলিশী অত্যাচার বন্ধ করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানান তিনি। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশন কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। এ সময় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের জন্য পুনরায় দাবি জানান বুলবুল। বুলবুল দাবি করেন, সরকার দলীয় প্রার্থীর কাছে পোলিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারদের গেজেট পাঠালেও বিএনপিকে গেজেট দেয়া হয়নি। নির্বাচনের দিন সব ধরনের বাধা ও অনিয়ম বিএনপি কঠোর হাতে দমন করবে। প্রয়োজনে রাজশাহীকে অচল করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির এই নেতা। গণসংযোগকালে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফা, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শেষদিনের প্রচারে উত্তাল রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিন শনিবার সকাল থেকেই রাজশাহীতে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। শ্রাবণের আকাশে সারাদিনই ছিল কালো মেঘের ঘনঘটা। বৈরী এই আবহাওয়াও বাধা হতে পারেনি রাসিক নির্বাচনের শেষ দিনের প্রচারে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জমজমাট প্রচারের মধ্য দিয়েই শেষ হলো রাসিক নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার। শেষ মুহূর্তে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোট আনতে ব্যস্ত থেকেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বৃষ্টিতে ভিজেই কর্মী-সমর্থকরা নগরীর ওয়ার্ড ও মহল্লার সড়কগুলোতে মিছিল ও শোডাউন করে প্রার্থীদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছেন। এখন অপেক্ষা শুধুই ভোটের। শনিবার সকাল থেকেই ওয়ার্ড-মহল্লায় খ- খ- মিছিল ও শোডাউন করেছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। দুপুরের পর নগরীজুড়ে শুরু হয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়ে মাইকিং। মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের অনর্গল মাইকিংয়ে পথচলতি মানুষের কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। শেষ দিনের প্রচারে কোন প্রার্থীই যেন ছাড় দিতে রাজি নয়। অন্যান্য দিনের মতোই শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মেয়র পদে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নামেন ভোটের প্রচারে। এছাড়া শেষ দিনে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে শেষ মুহূর্তের প্রচারে নামেন অন্য তিন মেয়র প্রার্থীও। সারা শহর ভোটারের কাছে ধর্ণা দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ভোটের মাঠে চাঙ্গা থাকলেও প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে অনেকটায় নিঃসঙ্গ দেখা গেছে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহী ছাড়ার পরপরই একা হয়ে পড়েন বুলবুল। দলীয় কোন্দলের কারণে রাজশাহী বিএনপির হেভিওয়েট নেতারা ভোটের মাঠে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে প্রচার শেষ করেছেন বুলবুল। তবে ভোটের প্রচার শেষ হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরব করে রেখেছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। সকালের দিকে দলীয় অফিসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শেষ দিনের প্রচার শুরু করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বিকেলের পর তিনি নগরীর বিনোদপুর, কাজলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের প্রচার ও গণসংযোগ করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও বিপুল সাধারণ মানুষ অংশ নেন। এদিকে শেষদিনে শনিবার সকালে বিএনপি ও ২০ দলীয় মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নগরীর জেলগেট থেকে গণসংযোগ শুরু করে সিপাহীপাড়া, ফায়ার সার্ভিসের মোড়, সাহেববাজার এলাকার মনিচত্বর, কাঁচাবাজার, মাছবাজার, মাস্টারপাড়া, পাইকারি বাজার ও সোনাদীঘির মোড়ে গণসংযোগ করেন। ভোটারদের বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করছেন বুলবুল সমর্থকরা! রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মাঠে লড়াই শেষে ভোটের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ সূত্র জানায়, ভোটের হিসাব পাল্টাতে বিপুল অঙ্কের কালো টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন বুলবুল। ইতোমধ্যে সাধারণ ভোটারদের মোবাইল ও বিকাশ নম্বর সংগ্রহ শুরু করছেন তিনি। তার কর্মীদের মাধ্যমে নগরীর ওয়ার্ড ও মহল্লা পর্যায়েও সাধারণ ভোটারদের বিকাশ নম্বর সংগ্রহ চলছে। উদ্দেশ্য বিকাশের মাধ্যমে কালো টাকা পাঠিয়ে দেয়া। টাকা পাঠিয়েই ফোনের মাধ্যমে তাদের ধানের শীষে ভোট দেয়ার কথা বলা হবে। এমন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। নাম প্রকাশ না করা বিকাশ নম্বর নিয়েছেন এমন সাধারণ ভোটার জানান, বুলবুল এবার বিকাশের মাধ্যমে ভোট কেনার পরিকল্পনা শুরু করেছেন। তাদের বিশ^স্ত কর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার সাধারণ ভোটারের বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করা হচ্ছে। শনিবার রাত থেকেই বিকাশের মাধ্যমে এসব কালো টাকা পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি বিভিন্ন গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অবগত হয়েছেন বলে জানা গেছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের তথ্য তারাও পেয়েছেন। বিষয়টির খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বিকাশের মাধ্যমে হোক আর নগদ অর্থ বিতরণ হোক; টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার বিষয় প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বুলবুল বলেন, বিএনপি কোন প্রকারের কালো টাকা ব্যবহার করছে না। গুজব ছড়ানোর ঘটনায় দুই মামলা ॥ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গুজব ছড়ানোর দায়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম মামলা দুটি দায়ের করেন। এর একটিতে আসামি করা হয়েছে ছাত্রদলের পাথরঘাটা শাখার সভাপতি হাসান আল বাকের মেসাল এবং অপর মামলার আসামি বদিউজ্জামান সাহেদ। মামলার বিবরণে জানানো হয়, ২৬ জুলাই বিকেল ৬টার দিকে বদিউজ্জামান সাহেদ তার ফেসবুক আইডিতে ‘দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার প্রহসনের প্রতিশ্রুতির নমুনা’ শিরোনামে ‘রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভাইয়ের পায়ে গুলি করেছে পুলিশ’ ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পাথরঘাটা পৌরসভা শাখার সভাপতি হাসান আল বাকের মেসাল তার ফেসবুক আইডিতে ‘রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভাইয়ের পায়ে গুলি করেছে পুলিশ’ শিরোনামে তার ফেসবুক আইডিতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের একটি ছবিসহ স্ট্যাটাস দিয়ে অপপ্রচার এবং গুজব ছড়ায়। এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন এবং মনিরুজ্জামান শেখ রাহুলকে। দুই সাক্ষী ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেখে বাদীকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বিকেলে জানান। স্ট্যাটাসটি দেখে বাদী চরমভাবে আহত হন এবং তার অনুভূতিতে আঘাত লাগে। কারণ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ নগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও একজন মেয়র প্রার্থী। মিথ্যা স্ট্যাটাস আপলোড করে সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ জনগণের অনুভূতিতে আঘাত করেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমানুল্লাহ জানান, মামলার আবেদন দুটি তিনি পেয়েছেন। এ বিষয়ে নির্বাচনি আইনে মামলা রেকর্ডে প্রস্তুতি চলছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। র‌্যাব-বিজিবির টহল শুরু ॥ রাসিক নির্বাচনে প্রার্থীীদের প্রচার শেষ হয়েছে শনিবার। কালকেই (সোমবার) ভোট গ্রহন। এজন্য পুরো রাজশাহী নগরীতে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শনিবার সকাল থেকেই ১৯ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব ও পুলিশও টহল শুরু করেছে। সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহলসহ নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামীম মাসুদ আল ইফতেখার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ প্লাটুন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন এবং চার প্লাটুন রিজার্ভ রাখা হবে। তারা বিশেষ প্রয়োজনে বের হবেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামীম মাসুদ আল ইফতেখার বলেন, সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা টহল ও স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তার দিকে সতর্ক নজর রাখবেন। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন বলেও জানান এই বিজিবি কর্মকর্তা। র‌্যাব-৫-এর উপ-অধিনায়ক আশরাফুল ইসলাম বলেন, চার শতাধিক র‌্যাব সদস্য এর মধ্যে টহল দিতে শুরু করেছেন। ৩১ জুলাই পর্যন্ত তাঁদের মাঠে থাকার কথা। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে তা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত র‌্যাব মাঠে থাকবে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সদর) ইফতে খায়ের আলম বলেন, জননিরাপত্তার দিকে লক্ষ রেখে রাজশাহীতে তিন হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। পুলিশ সদস্যর পাশাপাশি আনসার বাহিনী কাজ করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে ভঙ্গ না হয়, এ বিষয়ে সর্বাত্মক সতর্ক অবস্থানে পুলিশ থাকবে বলেও জানান তিনি। রাজশাহীতে ১৩৮টি কেন্দ্রের ১১৪টিই ঝুঁকিপূর্ণ ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ১৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৪ টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ (অধিক গুরুক্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। আগামী সোমবার ভোটগ্রহণের জন্য এরই মধ্যে ভোট সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিসার ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান বলেন, সাধারণ একটি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা রক্ষার কাজে সাতজন পুলিশ সদস্য ও ১৪ আনসার সদস্য থাকেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে ১৬ জন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আতিয়ার রহমান বলেন, শনিবার থেকে থেকে ৩০ জুলাই (সোমবার) পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। আর সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের জন্য ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তারা ভোটের দুদিন আগ থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করবেন। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা ও জরিমানাসহ সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য পুলিশের একটি করে মোবাইল টিম কাজ করবে। আর পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত দুইটি করে ওয়ার্ডের জন্য একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। অর্থাৎ ১৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ৩০টি ওয়ার্ডের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। আতিয়ার রহমান বলেন, রাসিক নির্বাচনে এবার মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২১৭জন। এর মধ্যে মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন পাঁচজন। আর ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আছেন ১৬০ জন প্রার্থী। এছাড়া ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থী ৫২ জন। এবার সিটি করপোরেশনের ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। মোট ভোটারের মধ্যে এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন নারী ভোটার এবং পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৮টি। রাজশাহীতে এবার দুটি কেন্দ্রে ইভিএম ম্যাশিনে ভোট গ্রহণ করা হবে। নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিবি হিন্দু একাডেমীতে এ দুটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। একই কেন্দ্রে একদিকে নারী ও অন্যদিকে পুরুষ ভোটাররা মেশিনে ভোট প্রদান করবেন। নির্বাচন দফতর জানিয়েছে, এখানকার পুরুষ ভোট কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন এক হাজার ৬৩৭ জন। আর নারী ভোট কেন্দ্রে ভোটার এক হাজার ৭৪৫ জন। পুরুষ কেন্দ্রে ৫টি এবং নারী কেন্দ্রে বুথ রয়েছে ৬টি। ইভিএম কেন্দ্রেএকজন প্রিজাইডিং অফিসার ছাড়াও দায়িত্বপালন করবেন ১১ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ২২ জন পোলিং অফিসার। রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, ৩০ জুলাই নির্বাচনের দিন এবার মোটসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ থাকবে। ভোটার ব্যতীত অন্য কোনো এলাকার বাসিন্দা নির্বাচনী সীমানার ভেতরে অবস্থান করতে পারবেন না। তবে এ নির্দেশনার আওতায় যারা ব্যবসা বা কোন বিশেষ প্রয়োজনে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন তাদের ছাড়তে হবে না। এছাড়া নিরাপত্তাসহ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা। সিলেট সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ সোমবার রাত পোহালেই ভোট। ভোট কেন্দ্র ও নগরবাসী প্রস্তুত। সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার মতো কোন বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে শুরু করে প্রতীক বরাদ্দ ও প্রচারের শেষদিন পর্যন্ত শান্তির নগরী সিলেটে ছিল নির্বাচনকালীন শান্তির পরিবেশ। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী কামরানÑআরিফ দুজনেই ঐতিহ্যের দাবিদার সিলেটের শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে নিজেদের অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেছেন। সিলেট সিটিতে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে কোন শঙ্কা নেই। নগরবাসী শৃঙ্খলা বজায় রেখে ভোট প্রদান করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। অতীতের নির্বাচনগুলোতেও এর প্রমাণ রয়েছে। শনিবার দিনভর উত্তাল ছিল নগরী। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের শেষ নির্বাচনী মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীর জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ে। প্রতিটি সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথযাত্রীদের। প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে মেয়র প্রার্থী কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরী শেষ মুহূর্তে মিছিলে মিছিলে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়ার চেষ্টা করেন। ২৭টি ওয়ার্ডে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আরও চার প্লাটুন বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে। তারা নির্বাচনের দিন স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম হিসেবে কাজ করবে। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ অলিমুজ্জামান জানিয়েছেন, নির্বাচনে বিজিবির সঙ্গে র‌্যাবের ২৭টি টিম কাজ করবে। এছাড়া পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরাও থাকবেন। এবার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ ভোটার ১৩৪ ভোট কেন্দ্রে তাদের ভোট প্রদান করবেন। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের এসব ভোট কেন্দ্রে ৯২৬ টি ভোট কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। ১৩৪টি ভোট কেন্দ্রের ৮০টিই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। এ কেন্দ্রগুলোতে ২৪ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। বাকি কেন্দ্রগুলোতে থাকবেন ২২ জন করে। সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানান, ১৩৪টি ভোটকেন্দ্রে দুই হাজার ৯৪৮ পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এদিকে শেষ মুহূর্তে এসে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ ও জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের একদিন আগে কামরানকে সমর্থন দেয়ায় মোট ফলাফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সচেতন সমাজ মনে করছে। শনিবার বেলা পৌনে ৫টার দিকে নগরীর তালতলা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মিসবাউর রহমান চৌধুরীর নির্দেশে এ ঘোষণা দেন দলের ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ কারি সালামত উল্লাহ। সমর্থন পেয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আওয়ামী লীগের নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ। এর আগে শনিবার সকালে কামরানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেয় জাতীয় পার্টি। শনিবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর তালতলার একটি অভিজাত হোটেলের হলরুমে সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির এ টি ইউ তাজ রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়া এমপি। এ সময় জাপা নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বর্তমান মহাজোটের একটি শরিক দল হিসেবে আসন্ন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কার্যকরী ভূমিকা পালন অত্যন্ত জরুরী। তারই আলোকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশে সিলেট সিটি নির্বাচনে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে সমর্থন জানাচ্ছে। একই সঙ্গে দলের সকল নেতাকর্মী এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ এবং সিলেট নগরবাসীকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কামরানকে সমর্থন জানানোয় জাতীয় পার্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইশরাকুল ইসলাম শামিমের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গঙ্গেভাকেট গিয়াস উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব উসমান আলীসহ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেছেন, যখনই নৌকার বিজয় হয় তখনই মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করে। সারাদেশের ন্যায় সিলেটকেও এগিয়ে নিতে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। নৌকার বিজয় হলে সিলেট হবে মডেল নগরী। এসময় তিনি ৩০ জুলাই নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান। আম্বরখানা পয়েন্টে নৌকার সমর্থনে আয়োজিত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আশফাক আহমদের সভাপতিত্বে এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল ও সিলেট যুবলীগের আহবায়ক আলম খান মুক্তির যৌথ পরিচালনায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিছবাহ উদ্দীন সিরাজ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী, পাবনা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, সৌদি আরব জেদ্দার সাবেক চেয়ারম্যান ফয়ছল গেরগরি, সৌদি আরবের শেখ হামাদা জামে মসজিদের ইমাম হারবী, মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা জুবায়ের খান, তপন মিত্র, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান মতি, যুক্তরাজ্য আ’লীগের সভাপতি সেয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম তুষার প্রমুখ। কামরানের সাফল্য কামনায় দোয়া মাহফিল ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সাফল্য কামনায় হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাদ্রাসায় দোয়ার আয়োজন করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাদ্রাসার খতিব ও মুহাদ্দিস মাওলানা মুহিববুল হক গাছবাড়ি। দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের বক্তব্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, হযরত শাহজালাল (রহ.) এর পুণ্যভূমি সিলেট শান্তি ও সম্প্রীতির জনপদ। শাহজালাল (রহ.), শাহপরান (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়া এই ভূমিতে ঘুমিয়ে আছেন। এই ওলি আউলিয়াদের কারণে দেশ-বিদেশে সিলেটের পরিচিতি ও মর্যাদা অনেক উপরে। রাজনীতিতেও সিলেটের গুরুত্ব অনেক বেশি। তিনি বলেন, এই পুণ্যভূমিতে যার বিজয় পতাকা উড়ে সে-ই অনেকদূর এগিয়ে যায়। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সমর্থন ও সহযোগিতায় এবারের সিটি নির্বাচনেও নৌকা বিজয়ী হবে ইনশা আল্লাহ। কামরান বলেন, আওয়ামী লীগ ও জননেত্রী শেখ হাসিনা ইসলাম ও মানবতার কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বে মানবতার নেত্রী হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। এর মাধ্যমে অতীতে শেখ হাসিনার সরকার নিয়ে যেসব অপপ্রচার হয়েছে তা মিথ্যা প্রমাণিত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.) ও সিলেটের প্রথম মুসলিম হযরত বোরহান উদ্দিন (রহ.) এর মাজারসহ বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন। আমি বিগত সময়ে মেয়র থাকাকালে নগরীর মসজিদ, মাদরাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। ভবিষ্যতেও এভাবে ইসলাম ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। ৩০ জুলাই নগরবাসী আমাকে সে সুযোগ করে দেবেন বলে আমার বিশ্বাস। দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাইফুজ্জামান শেখর, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আজিজুস সামাদ ডন, জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাদ্রাসার খতিব ও মুহাদ্দিস মাওলানা মুহিববুল হক গাছবাড়ি, মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবুল কালাম জাকারিয়া, মাওলানা আসাদ, মাওলানা আব্দুল মালিক, মাওলানা আব্দুল জব্বার প্রমুখ। এর আগে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান দরগাগেট এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নৌকা মার্কার সমর্থনে নগরীর টিলাগড় পয়েন্টে সিলেট জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং চট্ট ৭০৭ এর উদ্যোগে গণসংযোগ ও প্রচার করা হয়। শুক্রবার রাতে গণসংযোগ শেষে টিলাগড় পয়েন্টে এক নির্বাচিত পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং চট্ট ৭০৭ এর সভাপতি জাকারিয়া আহমদের সভাপতিত্বে ও সদস্য রাজা আহমদ রাজার পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন। এ সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষকে শান্তিতে বসবাস করার ব্যবস্থা করা দিয়েছে। নৌকা শান্তির প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক। সিলেট সিটিতে নৌকার পক্ষে মানুষ ঐক্যবদ্ধ। নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাই সিলেটের উন্নয়ন বজায় রাখতে ৩০ তারিখ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী। আরিফুল হক চৌধুরী ॥ বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, সিলেট নগরের মানুষের প্রতি আমার অগাধ আস্থা। তারা যে কাউকে যেমন বুকে টেনে নিতে পারেন তেমনি আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে দিতে পারেন। গত ৫ বছর আমার ওপর যে অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে এবং আমার কর্মীদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে তার বিচারের ভার আমি নগরবাসীর ওপরই ছেড়ে দিলাম। শনিবার নির্বাচনে শেষ দিনের গণসংযোগে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, কোন ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনকে বানচাল করা যাবে না। সিলেটের মানুষ অন্যায় সহ্য করে না। আপামর জনতা যদি ষড়যন্ত্রের বিষয় টের পেয়ে যায় তবে ষড়যন্ত্রকারীরা পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। তিনি প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার আহ্বান জানান। বেলা ১১টায় তিনি নগরীর ঝেরঝেরিপাড়া এবং মিরাবাজার আবাসিক এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমার কর্মী-সমর্থক প্রচার চালাতে পারছে না। তারা বাড়িঘরে থাকতে পারছে না। এজেন্টদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় নগরবাসীকে সোচ্চার ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই নগরের মানুষই আমার বড় ভরসা। পুণ্যভূমি সিলেটে কোন ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না এখানকার মানুষ এ বিশ্বাস আমার আছে। তিনি বলেন, আমি নোংরামি পছন্দ করি না, অপপ্রচারে বিশ্বাস করি না। যারা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব বলছে তাদেরকে ব্যালটের মাধ্যমে নগরবাসী সমুচিত জবাব দেবেন বলে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আরিফুল হক আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। জনগণের রায় ছিনিয়ে নিতে মরিয়া সরকার ও প্রশাসন। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতারা সিলেটে অবস্থান করে পুরো পরিস্থিতিকে ভিন্ন মোড় দেয়ার চেষ্টা করছেন। নিজেরা হামলার ঘটনা ঘটিয়ে আমার নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ আমাকে ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু যখনই আমি নগরের উন্নয়নে হাত দেই তখনই একটি অশুভ শক্তি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের রোষানলে পড়ি আমি। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে তিন বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়। প্রথমে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় আমাকে জড়ানো হয়। যখন আইনী মোকাবেলা করে জামিনে বেরিয়ে আসব তখনই ১০ বছর পর জড়িয়ে দেয়া হলো সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হত্যাচেষ্টা মামলায়। এভাবে প্রায় তিন বছর আমাকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে থাকতে হয়েছে। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে আমি জামিন পাই। আরিফ বলেন, কেন আমার প্রতি এই অবিচার? আমার অপরাধ কি? সিলেটের মানুষ আমাকে ভালবাসে এটাই কি আমার অপরাধ? যদি তাই হয় এর বিচারের ভার আমি নগরবাসীর কাছেই ছেড়ে দিতে চাই। আরিফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, সিলেটে নির্বাচনের জন্য মনোনীত কয়েকজন প্রিসাইডিং অফিসার পরিবর্তন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্ন করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে বানচাল করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আমি আবারও বলছি, দয়া করে সিলেটের মাটিকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করবেন না। হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরান (র.) এর পুণ্যভূমি সিলেটে অন্যায় করে ধ্বংস হয়ে গেছে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি আছে। এ পুণ্যভূমি অন্যায়, অবিচার কখনও সহ্য করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। তারপরও কেউ কোন অপচেষ্টা চালালে তার পরিণতি কোনভাবেই শুভ হবে না। এই নগরীর মানুষের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলা করার চেষ্টা করবে না। একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন, আপনারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আরিফুল হক চৌধুরী সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় সচেতন থাকার জন্য সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। দুপুরে আরিফুল হক চৌধুরী দরগাহ মাদরাসায় আলেম উলামা এবং মাদরাসার ছাত্রদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন। দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবুল কালাম যাকারিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আরিফুল হক চৌধুরী। সাবেক এমপি মাওলানা এ্যাডভোকেট শাহিনূর পাশা চৌধুরীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আলেম উলামাদের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। আলেম উলামাদেরকে আমি অনেক ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি। তারাও আমাকে অনেক ভালবাসেন। তাদের দোয়ার বরকতে আল্লাহ আমাকে একবার কাউন্সিলর এবং একবার মেয়র হিসেবে বিজয়ী করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। সুজনের শান্তি পদযাত্রা ॥ সিলেটে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সৎ, যোগ্য এবং জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থী নির্বাচনের আহ্বানে নগরীতে মানববন্ধন ও শান্তির পদযাত্রা করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। শনিবার সকাল ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ইভিএম-ভোট ॥ সিলেট সিটির এক কেন্দ্রের দুটি বুথে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দিয়ে ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এসে প্রার্থী ও ভোটারদের প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে এই যান্ত্রিক ভোটগ্রহণ পদ্ধতি। বিএনপি বলছে, ইভিএমের মাধ্যমে ভোটে ডিজিটাল কারচুপি হবে। আর আওয়ামী লীগের দাবি সময় বাঁচাতে ও দুর্ভোগ কমাতে সব কেন্দ্রেই ইভিএম ব্যবহার করা প্রয়োজন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নেই। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, ইভিএম পদ্ধতিতে কম সময়ে ভোট গ্রহণ ও নির্ভুল গণনা সম্ভব হওয়ায় নির্বাচনী সহিংসতা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। এমন আলোচনা আর অভিযোগের মধ্যে, ভোটারদের অবহিত করতে শনিবার নগরীর আম্বরখানা গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের দুটি বুথে ইভিএমের মাধ্যমে ‘মক ভোটিং’ এর আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। কিভাবে ইভিমের মাধ্যমে ভোটপ্রদান করতে হয় এ সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হয় মক ভোটিংয়ে। নগরীর ৪ নং ওয়ার্ডের আম্বরখানা গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের দুই বুথেই সোমবার ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এই দুটি বুথে পুরুষ ভোটার ২৫৫৬ ও নারী ভোটার ১৯৫৭। স্বল্প সময় ও সহজে ভোট দিতে পারায় ইভিএম নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শনিবার ‘মক ভোটিং’য়ে অংশ নেয়া ভোটাররা। এই ওয়ার্ডের একজন ভোটার আলমগীর হোসেন বলেন, আমি মক ভোটিং এ ভোট দিয়েছি। ভোট দেয়ার ১ ঘণ্টা পর আরেকবার ভোট দিতে চাই। দ্বিতীয়বার ভোট প্রদানের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতেই ইভিএম মেশিন আমাকে জানিয়ে দেয় ‘আপনার ভোট দেয়া হয়েছে’। ফলে এই পদ্ধতিতে ভোট কারচুপি বা জাল ভোট দেয়ার কোন সুযোগ নেই। একই ওয়ার্ডে অন্য একজন ভোটার জানান, আমার আঙ্গুলের ছাপ অন্য কারও সঙ্গে মিলবে না। তাই আমার ভোট আমি না দিলে আর কেউ দিতে পারবে না। ভোটারদের এমন উচ্ছ্বাস সত্ত্বেও ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ নিয়ে ডিজিটাল কারচুপির আশঙ্কা করছেন বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।
×