ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল ঝিনাইদহ

আওয়ামী লীগ চায় ঘাঁটি মজবুত করতে, বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে ॥ দিনাজপুর

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৯ জুলাই ২০১৮

আওয়ামী লীগ চায় ঘাঁটি মজবুত করতে, বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে ॥ দিনাজপুর

সাজেদুর রহমান শিলু, দিনাজপুর ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে দিনাজপুরের নির্বাচনী রাজনীতি। নির্বাচনকে সামনে রেখে দিনাজপুরের সব রাজনৈতিক দলই এখন ব্যস্ত নিজের ঘর গোছাতে। বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ঘন ঘন যাতায়াত শুরু করেছেন। নির্বাচন মৌসুমকে সামনে রেখে এলাকার মানুষের সঙ্গে কোন কোন প্রার্থী পুরনো সম্পর্ক নবায়ন করছেন, আবার অনেক নতুন প্রার্থী সম্পর্ক স্থাপনে এলাকার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো কাজ-কর্ম করে চলেছেন। প্রার্থীরা সাধারণ মানুষের কাছে ‘মাটির মানুষে’ পরিণত হয়েছেন। সকলেরই লক্ষ্য দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দিনাজপুরের ছয় আসনের মধ্যে ছয়টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় লাভ করেন। দিনাজপুর আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি এবং সাংগঠনিক অবস্থান বরাবরই সু-সংহত। কিন্তু অনেকদিন ধরে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে থাকায় দলের অভ্যন্তরে ক্যান্সারের মতো গেঁড়ে বসা কোন্দল-দ্বন্দ্ব ও আত্মঘাতী কার্যকলাপ সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অভিমত আওয়ামী সমর্থক এবং স্বাধীনতা পক্ষের সব সচেতন মানুষের। সময় থাকতে দলের অভ্যন্তরে থাকা এসব আত্মঘাতী অশুভ শক্তিকে যদি বিনাশ করা না যায়, তাহলে মাঠ ভর্তি আওয়ামী ফসল আসন্ন নির্বাচনে অন্যদের গোলায় গিয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) ॥ এই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই আসনটি বেশিরভাগ দখলে ছিল আওয়ামী লীগের। শুধু ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টিতে রয়েছে একক প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মনোরঞ্জনশীল গোপাল পর পর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রায় ১২ বছরের ক্ষমতায় থেকে মনোরঞ্জনশীল গোপাল এলাকায় রাস্তাঘাট পাকাকরণ, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, নতুন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা নির্মাণ এবং ভবনের উন্নয়ন, শিল্পকলার নতুন ভবন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ, গুচ্ছগ্রাম নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এছাড়াও তিনি বৃদ্ধাশ্রম ও গরিব-দুস্থদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতাল নির্মাণ করে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন। এছাড়াও এবারের বন্যায় মনোরঞ্জনশীল গোপালের ভূমিকা ছিল প্রশংসা করার মতো। আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের বিজয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তার ব্যক্তিগত ইমেজ এবং উন্নয়নের কারণে এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। সংসদ সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপাল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই এলাকায় যে ধরনের উন্নয়ন হয়েছে তা বিগত কোন সরকারের আমলে হয়নি। তাছাড়া এই এলাকার তৃণমূল মানুষের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকা মার্কার কোন বিকল্প নাই। এই মার্কার মনোনয়ন আমি পাব বলে আশা রাখছি এবং নেত্রী যদি তা করেন তাহলে জয়ের সম্ভাবনা শতভাগ। তবে মনোরঞ্জনশীল গোপাল ছাড়াও বীরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাকারিয়া জাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবু হুসেইন বিপু, সাবেক এমপি ও বর্তমান বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ হামিদুল ইসলামও মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু ও রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনজুরুল ইসলাম অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থান করায় দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তেমন কোন যোগাযোগ নেই। জোটগতভাবে নির্বাচন না হলে জাতীয় পার্টি প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুর জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহিনুর ইসলাম নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান। সাবেক এমপি মরহুম অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল কাফীর মৃত্যুর পর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ বীরগঞ্জ শাখার ২৫ বছরের উপজেলা আমির ও পৌর মেয়র আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ দলকে নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন। দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) ॥ সীমান্তবর্তী এই দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে শুধুমাত্র ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি এবং ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী ছাড়া বাকি সব নির্বাচনেই এই আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দখলে। বরাবরের মতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দখলে থাকার সম্ভাবনা থাকলেও আঘাত হানার চেষ্টা করছে বিএনপি। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি পর পর দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের পর পর তিনবারের সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথম নির্বাচন করতে এসেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক সেনা প্রধান লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নির্বাচিত হন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। নির্বাচিত হওয়ার পর গত দুই মেয়াদে দুই উপজেলার উন্নয়নের চিত্র পাল্টে দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে বিরল ও বোচাগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- সাধিত হয়েছে। তিনি রেললাইন সম্প্রসারণ, বিরল স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়কের সম্প্রসারণ, কৃষকদের চাষাবাদের স্বার্থে দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণ, স্কুল-কলেজ ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ, উপজেলা পরিষদের ভবন নির্মাণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়াসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ করেছেন। এছাড়া খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ার পর একটি পৌরসভা ও দুটি নতুন ইউনিয়ন গঠন করেছেন। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে জনগণের স্বার্থে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করেছেন। স্থানীয় কালিয়াগঞ্জ বনকে জাতীয় উদ্যানে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকায় তিনি দলমত ভেদে সকলের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিটি নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। শিক্ষা-দিক্ষা, অবকাঠামো সব ধরনের উন্নয়ন করেছি। এই আসনের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে রয়েছে আত্মার সম্পর্ক। এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। আর তাই এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জনগণের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত থাকলেও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন এই আসন থেকে ৪ বারের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়ের ছেলে ডাঃ মানবেন্দ্র রায় (মানব)। ডাঃ মানবেন্দ্র রায় জানান, যদি আওয়ামী লীগ থেকে তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে বাবার মতোই এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে কাজ করে যাবেন। নির্বাচিত হয়ে তিনি আধুনিক বিরল স্থলবন্দর নির্মাণ, স্টেডিয়াম নির্মাণসহ আধুনিক বিরল-বোচাগঞ্জ গঠনে কাজ করবেন বলে জানান তিনি। এই আসনের বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। গত বিরল পৌরসভা নির্বাচনে নেতাকর্মীরা দু’ভাবে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছিলেন। এই আসন থেকে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান, বোচাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক এবং বিরল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ন.ম বজলুর রশিদ। সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান স্থানীয় পর্যায়ের চেয়ে কেন্দ্রেই সময় দেন বেশি। তাছাড়া তিনি দিনাজপুর-২ আসনের চেয়ে দিনাজপুর-৩ আসনেই নির্বাচন করতে বেশি আগ্রহী। জাতীয় পার্টি সব আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই বরাবরের মতো জাতীয় পার্টির নেতা জীবন চৌধুরী ও বোচাগঞ্জ জাতীয় পার্টির সভাপতি এ্যাডভোকেট জুলফিকার আলীও দলের মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ প্রকাশ্যে রাজনীতির মাঠে না থাকলেও গোপনে তারা দলের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কোন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। দিনাজপুর-৩ (সদর উপজেলা) ॥ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৩ আসন। বিগত ৯ বছরে দিনাজপুর জেলার ১০ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়নে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। আসনটিতে স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ ৫ বার, বিএনপি ৩ বার ও জাতীয় পার্টি জয়লাভ করেছে একবার। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবালুর রহিম। যিনি বর্তমান জাতীয় সংসদের হুইপ। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে পর পর দুইবার নির্বাচিত হয়ে তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলার উন্নয়নের চিত্র পাল্টে দিয়েছেন। সড়ক যোগাযোগ, রেল যোগাযোগ, ব্রিজ-কালভার্ট, বিদ্যুতায়ন, রাবার ড্যাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক উন্নয়ন, মসজিদ, মন্দির নির্মাণ, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে মানুষের মনে আস্থা অর্জন করতে ক্ষম হয়েছেন। হুইপ ইকবালুর রহিম বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নমূলক কর্মকা- অব্যাহত, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং বিএনপি, জাতীয় পার্টি থেকে নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য মানবপল্লী নামে পৃথক আবাসন ব্যবস্থা নির্মাণ, বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ ও সামাজিক কর্মকা-ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ওয়ার্ল্ড লিডারশিপ ফেডারেশন (ডব্লিউএলএফ) সোস্যাল ইনোভেটর ক্যাটাগরিতে এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এছাড়া জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী সমাবেশে লাখো মানুষের সমাগত ঘটিয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি। তিনি দিনাজপুর গোর-এ শহীদ বড় ময়দানকে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দানে রূপান্তরিত করেছেন। এ ঈদগাহ মাঠে ৬ লক্ষাধিক মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। যা দিনাজপুরের পরিচিতিকে আরও একধাপ উপরে নিয়ে গেছে। এ আসনে প্রতিটি বাড়িতে শতভাগ বিদ্যুত সংযোগ প্রদান সম্পন্ন করায় গ্রামগঞ্জে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইকবালুর রহিম আলোকিত মানুষ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন। শুধু একটি উপজেলাতেই তিনি গত ৯ বছরে প্রায় ১৬শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন। এলাকাবাসী ইকবালুর রহিমকে একজন স্বজ্জন এমপি হিসেবে মনে করেন। আগামী নির্বাচনেও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অন্য কোন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ ও উন্নয়নই আমার একমাত্র শক্তি। দিনাজপুর-৩ আসনটিতে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা। খালেদা জিয়ার বড় বোন সাবেক মন্ত্রী খুরশীদ জাহান হকের মৃত্যুর পর বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট হয়ে ওঠে। তার জের এখনও চলছে। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে মূল দলসহ অঙ্গ দলগুলো। দলের জেলা কার্যালয়ে প্রায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। দলীয় একটি সূত্র জানায়, দিনাজপুর সদর আসনে বিএনপির ব্যাপক কোন্দল নিরসনের জন্য দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজেই প্রার্থী হতে পারেন। খালেদা জিয়ার পরিবারও চান, তিনি দিনাজপুর সদর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। খালেদা জিয়া প্রার্থী না হলে নাম শোনা যাচ্ছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান মিন্টু, খালেদা জিয়ার বড় বোনের ছেলে শাহরিয়ার আকতার হক ডনের। জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেলও মনোনয়ন পাওয়ার আশায় রয়েছেন। দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) ॥ এ দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তবে এ আসনে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছে কোন্দল। আওয়ামী লীগের দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর ভিড়ে সুযোগ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন দলের আরেক নতুন মুখ। বিএনপির দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও নেই নতুন মুখ। তবে এ আসনে বিএনপির শরিক জাগপার এক নেতা মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। তবে জাতীয় পার্টির কোন আলোচিত প্রার্থী নেই এ আসনে। দিনাজপুর-৪ আসনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন মোট তিনজন। এদের মধ্যে একজন বর্তমান সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি এই এলাকায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে এবং পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে হুইপের দায়িত্ব পালনকারী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিজানুর রহমান মানু। এছাড়াও একই দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কাজ করছেন চিরিরবন্দর উপজেলা আ’লীগের উপদেষ্টা ও ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চীফ কনসালটেন্ট, চিরিরবন্দর আমেনা-বাকী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ এম আমজাদ হোসেন। একইসঙ্গে প্রচার চালাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামও। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী পুনরায় মনোনয়ন প্রাপ্তির প্রত্যাশা করছেন। তার পক্ষে নেতাকর্মীরা নিয়মিত দলীয় কর্মসূচী ছাড়াও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করায় সাধারণ জনগণ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তার প্রতি বেশ দুর্বল। তিনি মনোনয়ন পেলে পুনরায় জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে সাবেক হুইপ মিজানুর রহমান মানুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মনোনয়ন পেতে। এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ আখতারুজ্জামান মিয়া ও শিল্পপতি হাজিবুর রহমান। জাগপার কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ আলী খানও মনোনয়ন চান। চিরিরবন্দর উপজেরা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আফতাফ উদ্দিন মোল্লাও মনোনয়ন প্রত্যাশী। জাতীয় পার্টি থেকে খানসামা উপজেলা জাপার সদস্য সচিব আবদুল আলীম হাওলাদারের নাম শোনা যাচ্ছে। দিনাজপুর-৫ (পার্বতীপুর-ফুলবাড়ি) ॥ স্বাধীনতার পর থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি, তাপবিদ্যুত কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা, চার লাইনের রেলওয়ে জংশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আসনটিকে পরিচিতি এনে দিয়েছে সারাদেশে। তাছাড়া আসনটি থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান পরপর ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সাড়া ফেলেছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে। জনপ্রিয়তা থাকলেও বসে নেই এই এলাকার মাটি ও মানুষের নেতা দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তিনি দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি প্রতিমাসে ২-৩ বার নির্বাচনী এলাকায় সভা সমাবেশসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা- অব্যাহত রেখেছেন। শুরু হয়েছে নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম। বরাবরের মতো এবারও মনোনয়নের লড়াইয়ে শীর্ষে রয়েছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তবে মনোনয়নের আশায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জাকির, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক মাহমুদুন্নবী চৌধুরী, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাফেদ আশফাক তুহিন, পার্বতীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ এসএইচ সাজ্জাদ। তবে এ আসনে বিএনপিরও শক্তি কম নয়। তারাও এ আসনটি ফিরে পেতে কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেনÑ দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এজেডএম রেজওয়ানুল হক ও এরশাদ আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মনসুর আলী সরকার। এ ক্ষেত্রে এজেডএম রেজওয়ানুল হক বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন এমনটাই নিশ্চিত করেছেন তার অনুসারীরা। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী আব্দুল গফুর ও জাতীয় পার্টি নেতা সোলায়মান সামি মনোনয়ন পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন। তবে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন না করলে তাদের ভোট বিএনপির ঘরে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ-হাকিমপুর-ঘোড়াঘাট ও বিরামপুর) ॥ দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে বড় সংসদীয় আসনটি এটি। বর্তমানে এ আসনের আওয়ামী লীগের জাতীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও এ দলের নেতাকর্মীরা যেন নিজ দলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী। আওয়ামী লীগের এমপি থাকলেও ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। এর মূলে বর্তমান এমপি শিবলী সাদিক ছাড়াও অপর তিন সাবেক এমপি আজিজুল হক চৌধুরী, মনোনয়ন প্রত্যাশী নবাবগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান ও জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা রয়েছেন। শেষক্তো তিনজনই বর্তমান এমপির বিপক্ষে। তবে শিবলী সাদিকের দাবি, অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এই আসনে। আর তার বিপক্ষে যারা অবস্থা নিয়েছেন তারা মূলত মনোনয়ন পাওয়ার আশাতেই করছেন। অপরদিকে আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী মাত্র দুইজন। বিগত ১৯৯১ ও ২০০১ সালে এখানে জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচিত হলেও এবার আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দিতে চায় না বিএনপি। দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান মিন্টু ও চিকিৎসক নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন। বিএনপির পাশাপাশি জোটগতভাবে এখানে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলাম। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে জেলা জাপার সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সাংসদ শিবলী সাদিক বহুল পরিচিত পর্যটন কেন্দ্র ‘স্বপ্নপূরী’র পৈত্রিক সূত্রে একাংশের মালিক। এছাড়াও তার সংস্কৃতিমনা বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজু ছিলেন ওই আসনের সংসদ সদস্য। শিবলী সাদিক নবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি। এক সময়ে তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে ৮৬ হাজার পরিবারকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি রাস্তাঘাট-ভবন নির্মাণসহ শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করেছেন এই তরুণ সাংসদ। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও রয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, দ্রুতই দলের মধ্যে বিদ্যমান কোন্দল-দ্বন্দ্ব নিরসন করতে পারলে নৌকার বিজয়ী আবারও ঘরে আসবে।
×