ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘মনে হয়েছিল আর ফুটবলই খেলতে পারব না’

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৩ জুলাই ২০১৮

‘মনে হয়েছিল আর ফুটবলই খেলতে পারব না’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আরও একবার ব্যথায় কাতর হতে হয়েছে নেইমারকে। ২০১৪ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে স্বপ্নপূরণ করতে ব্যর্থ হন। সেমিফাইনালে খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। চার বছর পর এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিল ছিল হট ফেবারিট। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নিতে হয় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। দারুণ একটি দল নিয়েও না পারার বেদনায় পুড়তে হয় নেইমারকে। বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় এতদিন নিশ্চুপ ছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ নিয়ে বলেননি কোন কথা। অবশেষে নীরবতা ভেঙ্গেছেন সময়ের অন্যতম সেরা তারকা। এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়ার পর বলের দিকে তাকাতে পারেননি তিনি। মনে হয়েছিল আর ফুটবলই খেলতে পারবেন না। তবে পরিবার, স্বজন ও বন্ধুদের পরশে বর্তমানে সব দুঃখ, কষ্ট ভুলতে পেরেছেন। বিশ্বকাপে ব্যর্থতা প্রসঙ্গে নেইমার বলেন, এ সময় আমার এমন অবস্থা হয়ে গিয়েছিল যে, বলতে শুধু বাকি ছিল আমি আর ফুটবল খেলতে পারব না। কিন্তু আমি কোন ফুটবলের দিকেই তাকাতে পারছিলাম না। বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোও আমি দেখার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলি। ব্রাজিলের প্রাইয়া গ্রান্ডে ‘নেইমার প্রাইয়া গ্র্যান্ড ইনস্টিটিউটে রেড বুল নেইমার জুনিয়র ফাইভ-এ সাইড টুর্নামেন্ট’ চলাকালে সেখানে এমন মন্তব্য করেন ২৬ বছর বয়সী নেইমার। ছয় বছর বয়সী ছেলে ড্যাভি লুক্কাকে নিয়ে একটি হাতা কাটা টি-শার্ট পরে উপস্থিত হওয়া নেইমারকে এ সময় বেশ নির্ভার মনে হয়। নেইমার বলেন, আমি শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। ওই ঘটনায় (বিশ্বকাপ থেকে বিদায়) আমি সত্যিই বিমর্ষ হয়ে পড়ি। তবে এখন দুঃখ বোধ কাটিয়ে উঠেছি। আমার ছেলে, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সবাই এখানে রয়েছে। তারা কেউ আমাকে মলিন অবস্থায় দেখতে চায় না। রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে স্পেনের সঙ্গে যোগাযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব গণমাধ্যমের জল্পনা কল্পনা। যে বা যারা এইসব রিপোর্ট লিখেছে আমার মনে হয়েছে তারা মামার কাছে মাসির গল্প বলছে। আমার জীবন সম্পর্কে আমার চেয়ে তারাই বেশি জানে। এ ধরনের প্রশ্নের তাই কোন উত্তর আমি দিতে চাই না। কারণ এ ধরনের কোন কিছুই ঘটছে না। গত বছর রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তিতে বার্সিলোনা থেকে পিএসজিতে যোগ দেয়া এই ব্রাজিলীয় তারকা মনে করেন, ক্লাব হোক কিংবা জাতীয় প্রত্যাশার দ্বৈত চাপ কাঁধের ওপর থাকবেই। এর ওজন পরিমাপ করা যায় না। নেইমার বলেন, আমি যখন ১৭, ১৮ বছর তখনও শুধু ব্রাজিল দল নয়, ক্লাব ফুটবলেও চাপ নিয়ে খেলেছি। সব সেরা খেলোয়াড়রাই এমন চাপ অনুভব করেন। এমন চাপ মোকাবেলা করার জন্য আমি নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছি। জানি, সমর্থকদের প্রত্যাশা মাফিক ফলাফল না পেলে এই চাপ আরও বাড়তে থাকে। বিশ্বকাপে ফাউলের কবলে পড়ার পর নেইমারের অতি নাটকীয় আচরণ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নেইমার বলেন, মানুষ খুব দ্রুত সমালোচনা শুরু করে। সেখানে একজন ফাউল করেন এবং অন্যজন ফাউলের শিকার হন। আমি বিশ্বকাপ খেলতে চাই, প্রতিপক্ষকে হারাতে। কারও লাথি খেতে নয়। আমাকে নিয়ে সমালোচনা ছিল অতিরঞ্জিত। কিন্তু আমি একজন খেলোয়াড়। এ ধরনের বিষয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত। একই সময়ে আমি খেলতে এবং রেফায়িং করতে পারব না। তবে আমার প্রত্যাশা মাফিক কিছু করার মতো সুযোগ সেখানে থাকে। গ্রুপপর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত নেইমার নামের প্রতি সুবিচার করেই খেলেন। তবে ‘ডাইভ’ দেয়ার দোষে সমালোচিত হন। এ নিয়ে নেইমারকে ঠাট্টা করে প্রচুর ‘ট্রল’ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নেইমারের এই ‘ডাইভিং’ বিতর্ক নিয়ে মজার কিছু প্রতিযোগিতাও হয়েছে কিছু দেশে। এসব নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়টি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, এগুলো রসিকতার চোখেই দেখেছি। এমনকি আমি নিজেই শিশুদের সঙ্গে এ নিয়ে মজা করে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছি। এসব সমালোচনার বিষয়ে নেইমার পাশে পাচ্ছেন দানি আলভেজকে। বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলারকে নিয়ে সমালোচনা বাড়াবাড়ি ছিল বলে মনে করেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। আলভেজ বলেন, নেইমার যা কিছু করে তাই সংবাদ হয়ে যায়। সে যদি আবেগতাড়িত হয় তারা সমালোচনা করে। সে যদি চুল রং করে তারা সমালোচনা করে। আমি এসব মানুষকে নেইমারের জায়গায় দেখতে চাই। আমাদের সেসব বিষয়ে নজর দিতে হবে যা আমাদের পরিণত করবে এবং যা আমাদের সত্যিকারের মানুষ হতে সহায়তা করবে। আর বাকি সবকিছুই তুচ্ছ বিষয়। যারা নেইমারকে জানে তারা তার অসাধারণ গুণাগুণের ব্যাপারটাও জানে। তারা জানে, সে কতটা স্পেশাল। আমি আবারও জোর দিয়ে বলছি, এমন খেলোয়াড়দের যত্ন নেয়া দরকার আমাদের।
×