ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালায় দুই নাটকের মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২০ জুলাই ২০১৮

শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালায় দুই নাটকের মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিনভর তাপদহের পর বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায় স্বস্তি খুঁজেছেন শিল্পরসিকরা। সংস্কৃতি অনুরাগী দর্শকরা নাটক দেখে কাটিয়েছেন কিছুটা সুন্দর সময়। বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার দুই মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে আলোচিত দুই নাটক। নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে নাট্যদল পালাকারের নাটক ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’। অন্যদিকে নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে পরিবেশিত হয়েছে ঢাকা থিয়েটারের প্রযোজনা ‘পঞ্চনারী আখ্যান’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছিন্নপত্র’ অবলম্বনে বাংলার মাটি বাংলার জল নাটকটি রচনা করেছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। নির্দেশনা দিয়েছেন আতাউর রহমান। প্রযোজনাটির সময়কাল বিস্তৃত হয়েছে ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত। এ সময়কালটি রবীন্দ্রনাথের জীবন-সাধনা পর্ব নামে পরিচিত। এই সময় তিনি তৎকালীন পূর্ববাংলায় অবস্থান করেছিলেন। কাছ থেকে দেখেছিলেন এই অঞ্চলের মানুষ ও বৈচিত্র্যময় প্রকৃতিকে। এসবের চমৎকার চিত্র রয়েছে সেই সময়ে রচিত তাঁর সমস্ত রচনাকর্মে, বিশেষত ‘ছিন্নপত্রে’। বিলেত ফেরত যুবক রবীন্দ্রনাথ। ১৮৮৯ সালে পা রাখলেন আজকের বাংলাদেশের শিলাইদহে। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র রবীন্দ্রনাথকে ঘিরেই এগিয়েছে প্রযোজনাটির কাহিনী। উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের ভাতিজি ইন্দিরা দেবীর চরিত্রটিও। সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন পূর্ববাংলা তথা শিলাইদহ, শাহজাদপুরের বিচিত্র মানুষ এবং তাদের জীবনচিত্র উঠে এসেছে বিশ্বকবির সূত্র ধরে। পারিবারিক আবহে গড়ে ওঠা তাঁর সাহিত্যচর্চা নতুন রূপ পেল এখানে এসে। বাংলার মাটি বাংলার জল রবীন্দ্রনাথকে এবং তার সাহিত্যচর্চাকে প্রভাবিত করতে থাকে। তাইতো এই জনপদ থেকে বিদায় বেলায় তিনি বলে ওঠেন, ‘এখান থেকে যা আমি নিয়ে গেলাম, তা আমার সারা জীবনের সঞ্চয় হয়ে রইল।’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন শামীম সাগর, নাহিদা শারমিন শর্মী, শাহানা বাপ্পি, সেলিম হায়দার, ফাহমিদা মল্লিক শিশির, ইভা খান, কাজী ফয়সল, মোহাম্মদ আলী পারভেজ, নূরী শাহ, শাহরিয়ার খান রিন্টু, অনিকেত পাল ও আমিনুর রহমান মুকুল। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন অনিকেত পাল বাবু। আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন নাসিরুল হক খোকন। পোষাক পরিকল্পনায় লুসি তৃপ্তি গোমেজ তুলে এনেছেন সেই রবীন্দ্র-যুগকে। ঢাকা থিয়েটারের ৩৭তম প্রযোজনা পঞ্চনারী আখ্যান। হারুন রশীদ রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। নাটকে একক চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী রোজী সিদ্দিকী। অনবদ্য অভিনয়ে মেলে ধরেছেন বঞ্চনার শিকার পাঁচজন পৃথক নারী জীবনচিত্র। পঞ্চনারী আখ্যান নাটকের মূল উপজীব্য সমাজে নারীর অধিকার। সৃষ্টির সূচনা থেকে নারীর দাবি একটাই-কেবল নারী নয়, তার পরিচিতি হোক মানুষ হিসেবে। বিত্তহীন, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত শ্রেণী থেকে শুরু করে পেশাগত সব অবস্থানেই নারী সহস্র্র বছর ধরে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় অন্যায়, বিভেদ আর বৈষম্যের শিকার হয়ে যাপন করছে মানবেতন জীবন। নিপীড়ন আর নির্যাতনের যাঁতাকলে কোন না কোনভাবে পিষ্ট হচ্ছে প্রতিটি নারী। এ বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে নারীকে। বৈষম্যের হাহাকারকে অতিক্রম করে তারা পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে নিজেকে অনুভব করতে পারবে-এমন বার্তাই উচ্চারিত হয়েছে পঞ্চনারী আখ্যান নাটকে।
×