ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লিটনের প্রচারে গণজোয়ার, সেনা মোতায়েন চান বুলবুল

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২০ জুলাই ২০১৮

লিটনের প্রচারে গণজোয়ার, সেনা মোতায়েন চান বুলবুল

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে প্রচার শুরুর দিনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন পরিচ্ছন্নভাবে ১৪ দফার ইশতেহার ঘোষণা করে ভোটের মাঠে নামায় গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইশতেহারহীন প্রচারে নেমেছেন বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আর ৯ দিন পরেই সিটি ভোট, অথচ এখনও কোন ইশতেহার নেই বুলবুলের। নগরী নিয়ে তার কোন পরিকল্পনাও নেই। এ ক্ষেত্রে খায়রুজ্জামান লিটনের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা নগরবাসীর মধ্যে আশা জাগালেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে বুলবুলের প্রচারে। নগরবাসীর বক্তব্য, আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নগর উন্নয়নে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। নগরীকে সাজানোর কথা বলেছেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকার সমস্যার সমাধানের স্বপ্ন দেখছেন। তবে বিএনপি প্রার্থীর ভবিষ্যত পরিকল্পনায় নাই। ভোটাররা বলছেন, সুনির্দিষ্ট ইশতেহার ঘোষণা করায় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তার অবস্থান পরিষ্কার করলেও এখনও অন্ধকারে রয়েছেন বুলবুল। বুলবুলের পক্ষ থেকে আপাতত ইশতেহারের কোন পরিকল্পনা নাই বলে জানা গেছে। এ কারণে ভোটের মাঠে এবার শুরু থেকেই সোচ্চার হয়েছেন সাধারণ ভোটার। ভোটের মাঠেও ভোটারদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন বুলবুল। ভোটারদের প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় নির্বাচন নিয়েই ভাবছেন বুলবুল। আগামী পরিবকল্পনা নিয়ে তার কোন চিন্তা নেই। তার বক্তব্য তিনি শুধু সুযোগ চান। জনগণ ভোট দিলে চলমান উন্নয়ন ধরে রাখবেন। এজন্য লিখিত কোন ইশতেহারের দরকার নেই বলেও বলছেন তিনি। ইতোমধ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিবেশকে ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ বলে আখ্যায়িত করে সেনাবাহিনী মোতায়নের দাবি জানিয়েছেন বুলবুল। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দাবি করেছেন নির্বাচনে কালো টাকা প্রতিরোধে পদক্ষেপ। লিটন বলেন, ‘কালো টাকা কাদের আছে। কালো টাকার মালিকরা কাদের সঙ্গে আছে, কাদের কালো টাকা নিয়ে রাজশাহীতে জালাও পোড়াও করে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা এবং হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেশের রাজনীতিকে অন্যদিকে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, সরকারের পতন ঘটিয়ে অন্যভাবে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল, মানুষ তা জানে। লিটন বলেন, ‘রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কেন্দ্র করে সম্প্রতি মোটা অঙ্কের কালো টাকা লেনদেন হয়েছে। সেই কালো টাকা যেন ভোটের মাঠে বা ভোটারদের মাঝে দিতে না পারে এটি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। শুরু থেকেই ভোটের মাঠে লিটন শক্ত অবস্থানে থাকলেও বুলবুল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন- এটিই প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সুযোগ পেলে নগরীর চেহারা বদলে দেবেন এমন প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন বুলবুল। শুরু থেকেই নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতারা লিটনের পাশে থেকে কাজ করছেন। ভোটের মাঠে বেশ সক্রিয় আওয়ামী সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠনগুলো। বিভিন্ন আঞ্চলিক সমিতিও অংশ নিচ্ছে নৌকার প্রচারে। আচরণবিধি বাধা হওয়ায় লিটনের পাশে থাকছেন না দলের স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। তবে নিজ নিজ এলাকায় থেকে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন সংসদ সদস্যরা। বাড়িয়েছেন যোগাযোগ। সব মিলিয়ে শক্তিশালী নির্বাচনী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে লিটনের। যদিও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জানান দিচ্ছে ভোটের মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীর সরব উপস্থিতি। দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু শুরু থেকেই বুলবুলের পাশে। এখন ভোটের মাঠে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে পোশাক শিল্প, চামড়া শিল্প, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক দ্রুত বাস্তবায়ন করে লক্ষাধিক মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। এ অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, রাজশাহী জুট মিল সংস্কার ও সম্প্রসারণ এবং ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানা ও রাজশাহী টেক্সটাইল মিল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করার উদ্যোগ নেবেন। এক কথায় রাজশাহীকে আবারও বদলে দেবেন। লিটন বলেন, সদ্য সাবেক মেয়র (বুলবুল) কোন উন্নয়নই করতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, তিনি (লিটন) যা করে গিয়েছিলেন, তাও ধরে রাখতে পারেননি। মেয়রের ব্যর্থতার কারণে রাজশাহীর নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা আর আগের ভুল করবে না, দল-মত নির্বিশেষে নৌকায় ভোট দেবে। তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে ২০৫০ সাল নাগাদ রাজশাহীকে তিনি বিশ্বের অন্যতম সিটিতে পরিণত করবেন। অন্যান্য নাগরিক সেবা আরও জনবান্ধব ও প্রসারিত করবেন। যদিও তিনি লিখিত কোন ইশতেহার দেননি- তাই বুলবুলের এমন আকাশকুসুম কথা বিশ^াস করছেন না ভোটাররা। লিটনের প্রচারে গণজোয়ার ॥ বৃহস্পতিবারেও সকাল থেকে ভোটের মাঠে থেকে গণসংযোগ চালিয়েছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। রাজশাহীর উন্নয়নের স্বার্থে নৌকায় ভোট চেয়ে বৃহস্পতিবার তিনি মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন। খায়রুজ্জামান লিটনের গণসংযোগ ও পথসভায় সাধারণ মানুষের ঢল নামে। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। বেলা ১১টায় মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের দাশপুকুর মোড় থেকে গণসংযোগ শুরু করেন খায়রুজ্জামান লিটন। এরপর দাশপুকুর বউ বাজার, পূর্বপাড়া, বহরমপুর ও বন্ধগেট এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি। পাড়া-মহল্লার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে রাজশাহীর উন্নয়নের স্বার্থে স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট চান এবং উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দেন। খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘শান্তি-সম্প্রীতির শহর রাজশাহীতে সৌর্হাদ্য ও সম্প্রীতির মাধ্যমেই নির্বাচনের দিন পর্যন্ত পার করতে চাই। সেজন্য আমি সেনা মোতায়নের পক্ষপাতি নই। সেনা মোতায়েন দাবি বুলবুলের ॥ নির্বাচনে নির্বিঘেœ ভোটাররা উপস্থিত হয়ে যাতে ভোট দিতে পারেন সেই নিশ্চয়তার জন্য ভোটের সাতদিন আগে সেনা মোতায়েন করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড় থেকে গণসংযোগের সময় সাংবাদিকদের কাছে এই দাবি জানান তিনি। বুলবুল বলেন, সাধারণ ভোটাদের আওয়ামী লীগের লোকজন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মাইকিং করতে বাধা প্রদান করছে। নির্বাচনী প্রচারে কর্মীদের বাধা এবং গালিগালাজ করছে। এই অবস্থায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাই নয় অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বিএনপির সকল কাজে বাধা দিচ্ছে। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কালো টাকা ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বুলবুল। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন। গয়েশ^র বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নাই। বড় বড় ফেস্টুন অপসারণের নির্দেশ ॥ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্ধারিত মাপের চেয়ে বড় আকারের ব্যানার-ফেস্টুনের ছড়াছড়ি রাজশাহীতে। কেউ কম, কেউ বেশি কিন্তু প্রায় সব প্রার্থীই এমন ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে নিজের প্রতীকের প্রচার চালাচ্ছেন। তবে এসব ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণের জন্য ইসি নির্দেশ দিয়েছে। এ নিয়ে প্রার্থীদের ২৪ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে এসব ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নেয়ার চিঠি প্রার্থীদের দেয়া হয়।
×