ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা

মানসিক অসুস্থতা নিয়ে মিথ্যা সনদ দিলে জেল ও জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৭ জুলাই ২০১৮

 মানসিক অসুস্থতা নিয়ে মিথ্যা সনদ দিলে জেল ও জরিমানা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মানসিক অসুস্থতা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা সনদ দিলে জেল-জরিমানার বিধান রেখে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন, ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ সংক্রান্ত অপরাধে জড়িত (মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় পেশাজীবী হিসেবে নিয়োজিত) ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদন্ড ও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিসভা ডিজিটাল কমার্স খাত সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধের জন্য ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা, ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নারী বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ফাইনালে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম সাংবাদিকদের এ অনুমোদনের কথা জানান। সচিব বলেন, ১৯২১ সালের একটি আইন ছিল ‘দ্য লোনেসি এ্যাক্ট’। এটিকে বাংলায় ও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত নাগরিকদের মর্যাদা সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিতকরণ, পুনর্বাসন ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে আইনটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে ৩ জানুয়ারি এ আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। আইনে ৩১টি ধারা রয়েছে জানিয়ে জিয়াউল আলম বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সব কার্যক্রম পরিচালনা, সম্প্রসারণ, উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব সরকারের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় পেশাজীবী হিসেবে নিয়োজিত কোন ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কিত বিষয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা সার্টিফিকেট দিলে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদন্ড বা এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। ‘এছাড়া অভিভাবক বা ব্যবস্থাপক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা বা সম্পত্তির তালিকা প্রণয়ন বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে অবহেলা বা আদালতের কোন নির্দেশ বাস্তবায়ন না করলে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। কোন ব্যক্তি এ আইনের অন্য কোন বিধান বা এর অধীনে প্রণীত কোন বিধি লঙ্ঘন বা লঙ্ঘনে সহযোগিতা বা প্ররোচনা বা প্রতিপালনের বিষয়াদি বা সরকারের কোন আদেশ বা নির্দেশ প্রতিপালন না করা বা প্রতিপালন না করতে সহযোগিতা করা বা বাধা দিলে তিনি সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা ছয় মাসের কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। খসড়া আইনে মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা প্রদান এবং এ সংক্রান্ত সংক্ষুব্ধতার ক্ষেত্রে প্রতিকারের লক্ষ্যে মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ মনিটরিং কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসাবিষয়ক হাসপাতাল স্থাপন, পরিচালনা ও মানসম্মত সেবা প্রদান সংক্রান্ত বিধানের উল্লেখ রয়েছে খসড়া আইনে। এছাড়া মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির অভিভাবক, নিয়োগ ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিভাবকহীন ও আত্মীয় পরিচয়হীন মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসন-সংক্রান্ত বিষয়াদি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোন ব্যক্তির মানসিক অবস্থার বিচারিক অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত বিধানও খসড়া আইনে রয়েছে। মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে অপরাধ আমলে নেয়া এবং বিচার পদ্ধতি সম্পর্কে খসড়া আইনে একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ডিজিটাল কমার্স খাত সংশ্লিষ্ট ঝুঁঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধের জন্য ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা, ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ডিজিটাল কমার্স সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল গঠন করা হবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। ডিজিটাল কমার্সে পরিধি এবং ডিজিটাল জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা মাধ্যম, মোবাইল এ্যাপস ইত্যাদি ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ায় বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশে শিল্প বিকাশ, রফতানি উন্নয়ন, আইসিটিসহ সংশ্লিষ্ট খাতে অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এই নীতিমালা করা হচ্ছে। ডিজিটাল কমার্স সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নীতিমালায় ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি রাখা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল লেনদেন সহজ ও নিরাপদ করার বিষয়টি নীতিমালায় বর্ণনা করা হয়েছে। পাইরেসি, হ্যাকিংসহ ডিজিটাল কমার্স খাত সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল কমার্সে যারা অংশগ্রহণকারী ক্রেতা-বিক্রেতার ভয়ভীতি দূর করে এই খাতে তাদের আস্থা অর্জনের জন্য প্রচারের পদক্ষেপ নেয়া হবে। নারী ক্রিকেট দলকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন ॥ নারী বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ফাইনালে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অভিনন্দন জানানো হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রমিলা টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ফাইনালে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে টি-২০ বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করায় মন্ত্রিসভা জাতীয় নারী দলকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে। আইনমন্ত্রীর বোনের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক ॥ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, একটি শোক প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে। সেটি হচ্ছে, আইনমন্ত্রীর বড় বোন সায়মা হক রবিবার ইন্তেকাল করেছেন। তিনি কিডনি ফেইলিউর জনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা গভীর শোক প্রকাশ করেছে। বিদায়ী অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরীকে মন্ত্রিসভার ধন্যবাদ ॥ জিয়াউল আলম আরও বলেন, অর্থ বিভাগের সচিব মুসলিম চৌধুরী সরকরী চাকরি থেকে বিদায় নিয়ে বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন। এটি ছিল তার শেষ মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিতি। এই উপলক্ষে মন্ত্রিসভা তাকে একটি ধন্যবাদ প্রস্তাব জ্ঞাপন করেছে।
×