ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণিল উৎসবে পর্দা নামল রাশিয়া বিশ্বকাপের

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৬ জুলাই ২০১৮

বর্ণিল উৎসবে পর্দা নামল রাশিয়া বিশ্বকাপের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মহাযজ্ঞে শেষবারের মতো রবিবার ফুটবলে বুঁদ হয়ে ছিল পুরো বিশ্ব। সারাবিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ। প্রথমবার আয়োজন করা রাশিয়া আলোকরাশির খেলা, নাচে-গানে সেই উৎসবের শুরু করেছিল। শেষের উৎসবেও রাজধানী মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ছিল রঙের খেলা, ছিল নাচ-গান আর মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে। ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল ম্যাচ দেখতে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক দেশের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনসহ আরও ১১ দেশের সরকারপ্রধান কিংবা সরকারের উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি। ৩২ দলকে নিয়ে শুরু হয়েছিল ৩১ দিন আগে ২১তম বিশ্বকাপ আসর। ফাইনালের আগে বিশ্বকাপে ৬৩ ম্যাচ হয়েছে, এর মধ্যে টিকে গেছে মাত্র দুটি দল। আজ ৩২তম দিনে অবশেষে যেই শিরোপা দখলের জন্য দলগুলো খেলেছেন তার মধ্যে দুটি দলের শিরোপা লড়াই ছিল ৬৪তম ম্যাচ। ২২ মিনিটের সমাপনী উৎসবের পর ম্যাচ শেষেই নেমেছে ৩২ দিনের এই মহাযজ্ঞের পর্দা। সমাপনীতে ছিল রাশিয়ার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ব্যাপক প্রদর্শনী। লুঝনিকি স্টেডিয়াম- সেখানেই শুরু, শেষও সেখানে। দারুণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা বিশ্বকাপের পর্দা নেমেছে রবিবার। ফাইনাল লড়াইয়ে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। অতিথি হিসেবে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্রেবারসহ মোট ১০টি দেশের সরকারপ্রধান উপস্থিত ছিলেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। আরও কিছু দেশের সরকার পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরও দেখা গেছে। কিংবদন্তি সাবেক ফুটবলারদেরও মেলা ছিল। ম্যাচ শুরুর ৩০ মিনিট আগে বর্ণিল উৎসবের শুরু হয়। প্রথমেই এক ঝাঁক রাশিয়ান তরুণ-তরুণী ভ্রাম্যমাণ ডিজিটাল ডিসপ্লে হাতে মাঠে প্রবেশ করেন। অস্থায়ীভাবে তৈরি করা মঞ্চের পাশে নাচ-গানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ডিসপ্লে-তে দেখানো হয় বিশ্বকাপ ম্যাচের বিভিন্ন মুহূর্ত। এরপর অনুষ্ঠান মাতাতে আসেন আমেরিকার মেগাস্টার উইল স্মিথ। যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিনেতা ও র‌্যাপার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল গান ‘লিভ ইট আপ’ গেয়েছেন সহশিল্পীদের নিয়ে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও ছিলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের আরেক শিল্পী নিকি জ্যাম এবং কসোভোর গায়ক ও গীতিকার ইরা ইস্তোরেফি সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এবার সমাপনী অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হচ্ছেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল আকর্ষণ ইংল্যান্ডের গ্লোবাল মিউজিক আইকন রবি উইলিয়ামস অনুপস্থিত ছিলেন। কারণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার এক পর্যায়ে ক্যামেরার দিকে তিনি মধ্যমা আঙ্গুল প্রদর্শন করেন। এরপর মাঠে দেখা যায় ২০০২ বিশ্বকাপবিজয়ী ব্রাজিলের অন্যতম সদস্য রোনাল্ডিনহোকে। তিনি সহশিল্পীদের গানে বাজিয়েছেন ড্রামস। তার উপস্থিতিতে মেতে ওঠে উপস্থিত বিপুল দর্শকরা। এই গানের সময় রাশিয়া বিশ্বকাপের মাস্কট ‘জাবিভাকা’-কেও দেখা গেছে। পুরো সমাপনী উৎসবেই ছিল রাশিয়ান নৃত্যশিল্পী, গায়ক-গায়িকাদের উপস্থিতি। এমনকি মাঠের ভেতরে চারপাশে রাশিয়ান নারীদের দেখা গেছে ফুটবল নিয়ে কসরত করতে। রং-বেরঙের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়েও উপস্থিত ছিলেন মাঠের ভেতর অনেকে। শেষের দিকে মাঠে আসে রাশিয়া বিশ্বকাপের ট্রফি। সেটা হাতে নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান অধিনায়ক ফিলিপ লাম। এরপরই শেষ হয়ে যায় ২২ মিনিটের সমাপনী উৎসব। উৎসব হয়েছে মস্কো শহরের বিভিন্ন জায়গাতেও। ক্রেমলিন, রেড স্কয়ারের মতো জায়গাগুলোতে ভিড় করে নাচ-গানে মেতে ছিলেন ফুটবল ভক্তরা। পুরো মাস জুড়ে চলা ফুটবল মেলা ক্ষান্ত হবার আগে পুরোটা মন ভরে উপভোগ করেছেন রাশিয়ানরা। তারা মনে করেন রাশিয়ার জন্য এটা অনেক বড় একটা আসর। বিভিন্ন দেশের অতিথিদের আতিথেয়তা দিয়েও তারা গর্বিত। সফলভাবে কোন ধরনের বড় রকমের বিতর্কিত বা অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সফলভাবে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন শেষ করেছে রাশিয়া। ১১ শহরের ১২ ভেন্যুতে মোট ৩২ দিনে ৬৪ ম্যাচের পর শেষ হলো বিশ্বকাপ। মাঠের নৈপুণ্যে নজর কাড়ার পাশাপাশি স্বাগতিক রাশিয়া এবারের আসরের আগে ছিল অনেক আলোচিত। এমনকি বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিপুল সমর্থকদের মেইনটেইন করা, নিñিদ্র নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে রাশিয়া। এই সুযোগে কূটনৈতিক তৎপরতায়ও দারুণ কার্যক্রম চালিয়েছে ক্রেমলিন। চিরাচরিত নিয়মেই আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি থমাস বাখ নিমন্ত্রিত ছিলেন। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো ছিলেন। এছাড়া সমাপনী অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ডিপিআরকে ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রি রিয়ং ন্যাম, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, গ্যাবন, ফিলিস্তিন, সুদান, মলদোভা ও কাতারের সরকার প্রধান উপস্থিত ছিলেন। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে নতুন করে রঙের ছোপ পড়েছিল, সেজেছিল বর্ণিল সাজে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেভাবে রাশিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল অনেকটা সে আদলেই সাজানো হয়েছিল সমাপনী অনুষ্ঠান। আধুনিক প্রযুক্তি এবং রাশিয়ার সমাজ, সংস্কৃতি ও রূপকথার সমাহারে সমাপনী উৎসবের মাধ্যমে পর্দা নামার বারতা জানানো হয়।
×