ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারদায় ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার যুদ্ধে পাশে আছি ॥ রাজনাথ সিং

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৫ জুলাই ২০১৮

  মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার  যুদ্ধে পাশে আছি ॥ রাজনাথ সিং

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ অস্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসী শক্তির মোকাবেলায় সবসময় হাতে হাত মিলিয়ে চলেছে। আমাদের অংশীদারিত্ব আমাদের জনগণের সমৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের মৌলবাদ এবং চরমপন্থার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যও কাজ করছে। শুধু ভারত ও বাংলাদেশ নয়, সমগ্র অঞ্চলে মৌলবাদ এবং চরমপন্থার বিস্তার একটি গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার এবং তার সরকারের শূন্য সহনশীলতা নীতির প্রশংসা করে ভারত। ঘৃণা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসের মতাদর্শ থেকে জনগণ ও সমাজকে রক্ষার অভিন্ন অঙ্গীকার থেকে আমাদের এই সহযোগিতার উৎপত্তি। আমরা এই যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে আছি। রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ভবন এবং আইটি সেন্টারের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিংকে সঙ্গে নিয়ে একাডেমি প্রাঙ্গণে নতুন এই ভবনের উদ্বোধন করেন। রাজনাথ সিং বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ অভিন্ন ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, পরিবার ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ এক বিশেষ সম্পর্ক বহন করে। উভয় দেশ একটি সমন্বিত বাহিনী হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করেছে, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে পারস্পরিক আস্থার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আমাদের সৈনিকরা একসঙ্গে রক্ত দিয়েছে। আমাদের এই বন্ধন ভ্রাতৃত্বের ও চিরন্তন এবং সময়ের পরীক্ষায় তা অটল থাকবে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে আমরা বাংলাদেশের ৮৬১ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য গান্ধীনগরের গুজরাটে ফরেনসিক সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি, গাজিয়াবাদের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং মেঘালয়ের নর্থ ইস্টার্ন পুলিশ একাডেমিতে নানা বিশেষায়িত পাঠ্যক্রমের ৩০০টি বিশেষায়িত প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমি এবং বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির মধ্যে সম্পাদিত সহযোগিতা স্মারকের মাধ্যমে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থী বিনিময় এবং সহযোগিতা ও পারস্পরিক আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পারস্পরিক স্বার্থের ওপর দাঁড়িয়ে আছে যা উভয় দেশের জন্য লাভজনক। রাজনাথ সিং আরও বলেন, সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়, ইতিহাস সৃষ্টিতেও অবদান রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল যখন দখলদার বাহিনী এই প্রতিষ্ঠান আক্রমণ করে ২৪ জন পুলিশ জওয়ান ও বেসামরিক কর্মচারী তৎকালীন প্রিন্সিপাল এমএ খালেকের নেতৃত্বে লড়াই করে প্রাণ বিসর্জন দেন। এই পুলিশ একাডেমিতে ২০১৫ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যে মৈত্রী ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তা উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য এবং বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে আরও পেশাদার হিসেবে গড়ে তুলবে। মৈত্রী ভবন উদ্বোধন শেষে সারদা পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল (অতিরিক্ত আইজিপি) মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান এবং হায়দ্রাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমির ডিরেক্টর রানী ডলি বর্মনের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ নাজিবুর রহমান এনডিসি। এ সময় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র সচিব ছাড়াও, ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের অর্থায়নে এই ভবনটি নির্মিত হয়। বর্তমানে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ২৮ হাজার বর্গফুটের এই ভবনটির নির্মাণকাজ ৫৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
×