ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার জেলায় ৫ মাদক কারবারি নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৪ জুলাই ২০১৮

 চার জেলায় ৫ মাদক কারবারি নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ চার জেলায় পাঁচ মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল, বগুড়া ও যশোরে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন নিহত হয়। এছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে দুই ইয়াবা কারবারির লাশ উদ্ধার করা হয়। মাদকবিরোধী এ অভিযানের সময় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও বিপুল মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার ভোরে এসব ঘটনা ঘটে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। কক্সবাজারের টেকনাফে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন রোহিঙ্গা। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় হ্নীলার লেদা পুরাতন রোহিঙ্গা শিবিরের পাশে পাহাড়ের ধার থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহতরা হচ্ছে টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হুদা মেম্বারের ভাই শামসুল হদা ও লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের বি ব্লকের বাসিন্দা ও শামসুল হুদার সহযোগী রোহিঙ্গা যুবক রহিম উল্লাহ। নিহত শামসুল হুদাও ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সকালে লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের পাশের পাহাড়িছড়ায় দুটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় কাঠুরিয়ারা। পরে টেকনাফ থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে। এক কাঠুরিয়া জানান, হ্নীলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল হুদার ভাই শামসুল হুদার লাশ গলাকাটা অবস্থায় ছিল। আর রোহিঙ্গা যুবক রহিম উল্লাহর লাশ ছিল বস্তাবন্দী। রোহিঙ্গা যুবক রহিম উল্লাহকে নিহত ইয়াবা ব্যবসায়ী শামসুল হুদার অস্থায়ী দেহরক্ষী হিসেবে জানত স্থানীয়রা। তবে শীর্ষ ইয়াবা সম্রাট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার নুরুল হুদা মেম্বার মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যায়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ইয়াবা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত চালাচ্ছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মোঃ আফজাল (৩৫) নামের এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে সদর উপজেলার বেগুনটাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, বিপুল ইয়াবা ও ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাবের ২ সদস্য আহত হয়েছে। টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার রবিউল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোরে র‌্যাব সদস্যরা বেগুনটাল গ্রামে অভিযান চালায়। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্রধারী কয়েক মাদক ব্যবসায়ী র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ শুরু করে। পরে র‌্যাব সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি করে। এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এ সময় র‌্যাবের ২ সদস্য আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, বিপুল ইয়াবা ও ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। বগুড়া ॥ বৃহস্পতিবার রাতে ভাটকান্দী ব্রিজের পূর্বপাশে দুই দল দুষ্কৃতকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে পুতু সরকার(৪২) নামে এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শূটারগান, একটি পাইপগান, ৮ রাউন্ড গুলি এবং ৫০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত পুতু সরকার বগুড়ার আলোচিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায় অভিযুক্ত মতিন ও তুফান সরকারের ভাই। তুফান সরকার এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং ওই ছাত্রীসহ তার মাকে ন্যাড়া করে দেয়ার মামলায় দেশব্যাপী অলোচিত। তুফান ‘কান্ডের পর মতিন বাহিনীর নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেরিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, পুতু সরকার বগুড়ার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে বগুড়া শহরের ভাটকান্দী ব্রিজের পূর্বপাশে দুই দল দুষ্কৃতকারীর সংঘর্ষের খবর পেয়ে বনানী ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তারিকুলের নেতৃত্বে সদর থানার একদল পুলিশ সেখানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুষ্কৃতকারীরা পুলিশের প্রতি গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, জরুরী বিভাগে উপস্থিত লোকজন নিহত ব্যক্তিকে শহরের চকসূত্রাপুরের পুতু মিয়া হিসেবে শনাক্ত করে। তার পিতার নাম মজিবর রহমান। তার বিরুদ্ধে সদর ও শিবগঞ্জ থানায় ৫টি মাদকের মামলা রয়েছে। সে বগুড়ার তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা ও গুলিসহ ২টি অস্ত্র পাওয়া যায়। যশোর ॥ চৌগাছায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রতন (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। সে চৌগাছা সদর ইউনিয়নের দিঘলসিংহা গ্রামের আবু বক্কারের ওরফে বাক্কার ছেলে। বৃহস্পতিবার রাতে চৌগাছা-যশোর সড়কের কয়ারপাড়া বাজারের পাশের একটি কালভার্টের কাছে এ ঘটনা ঘটে। চৌগাছা থানার ওসি খোন্দকার শামিম উদ্দিন জানান, রাত আড়াইটার দিকে তারা সংবাদ পান চৌগাছা-যশোর সড়কের কয়ারপাড়ায় দু’দল সন্ত্রাসীর মধ্যে ‘গোলাগুলি’ হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় সেখানে অজ্ঞাত একজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশটি উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় লাশের পাশ থেকে একটি ওয়ান শূটারগান, এক রাউন্ড গুলি ও এক প্যাকেট ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার সকালে নিহতের পিতা হাসপাতালে এসে তার লাশ শনাক্ত করেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত রতনের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলাসহ কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে। তবে নিহতের পিতা আবু বক্কর ও মা ফরিদা বেগম জানান, রতন মাগুরা জেলার এক ব্যক্তির নিকট টাকা পেত। বৃহস্পতিবার দুপুরে পাওনা টাকা দেয়া হবে বলে ওই ব্যক্তি তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিলে দুপুর আড়াইটার দিকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি থেকে বের হয়। সন্ধ্যায়ও ফিরে না এলে এবং তার মোবাইল ফোন রিসিভ না হওয়ায় আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাইনি। পরে শুক্রবার ভোরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে পূর্বপরিচিত একব্যক্তি মোবাইলে জানায়, হাসপাতালে রতনের মতো দেখতে একজনের লাশ রয়েছে। সেখানে গিয়ে আমরা তার লাশ শনাক্ত করি। তারা জানান, আগে মাদক ব্যবসা করলেও রতন ২/৩ বছর ধরে তা ছেড়ে দিয়েছে। তারা আরও জানান, স্থানীয়ভাবে তারা বিএনপি সমর্থক। তাদের দাবি এ কারণেই তাকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে।
×