ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমরা আরও ক্ষুধার্ত’

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১১ জুলাই ২০১৮

‘আমরা আরও ক্ষুধার্ত’

মিথুন আশরাফ ॥ সেমিফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের পর আবারও ফাইনালে খেলার সুযোগ আছে। এ জন্য আজ ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে হবে। তাহলেই ৫২ বছর ধরে যে ফাইনালে না খেলার অধরা স্বপ্ন আছে তা বাস্তবে রূপ নেবে। পারবে ইংল্যান্ড এবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে? ইংল্যান্ড ডিফেন্ডার এরিক দিয়ের শুধু ফাইনাল নয়, আরও বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছেন। শিরোপাও নিজেদের করে নিতে চান। আজ সেমিতে ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালও জিতে নিতে চান। চ্যাম্পিয়ন হতে চান। তাইতো দিয়ের বলেছেন, ‘আমরা আরও ক্ষুধার্ত।’ ইংল্যান্ড যে পথ পাড়ি দিয়েছে তা অনেক। ১৯৯০ সালের পর আবারও সেমিফাইনালে খেলছে। ২৮ বছর পর উঠেছে ‘শেষ চারে’। তাতেই ইংল্যান্ড ফুটবলারদের ক্ষুধা নিবারণ হওয়ার কথা। কিন্তু দিয়েরের মতে ক্ষুধা শেষ হয়ে যায়নি। ক্ষুধা মিটে যায়নি। ক্ষুধা আরও আছে। ১৯৬৬ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো যেহেতু ফাইনালে খেলার এবং ফাইনালে খেললে শিরোপা জেতার সুযোগ আছে, সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না দিয়ের। দিয়ের বলেছেন, ‘সুইডেনের সঙ্গে ম্যাচটি (কোয়ার্টার ফাইনাল) শেষ হতেই সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছি। সেমিফাইনাল ম্যাচটি নিয়েই সব ফোকাস রয়েছে। আমরা জানি অনেক ভাল করতে হবে টুর্নামেন্টে আরও সময় থাকতে হলে। আমরা প্রতিটি মিনিট। প্রতিটি ম্যাচকে আনন্দদায়ক করছি। যদি আমরা জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারি তাহলে আনন্দ আরও বাড়বে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের দারুণ সুযোগ আছে। আমরা জেতার দিকেই মনোযোগী। জিততেই মাঠে নামব। আমাদের সামনে আনন্দ উদযাপন করার সুযোগ আসতে পারে। তবে এ মুহূর্তে একটু চুপচাপ আছি আমরা। জানি সামনে কঠিন পরীক্ষা। বড় ম্যাচ আছে। ক্রোয়েশিয়া অনেক ভাল দল। আমরা জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত। আরও বড় কিছু প্রাপ্তির জন্য ক্ষুধার্ত।’ বিশ্বকাপ ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে খেলবে ইংল্যান্ড। ক্রোয়েশিয়া দ্বিতীয়বারের মতো সেমিতে খেলবে। ইংল্যান্ডের সামনে যেখানে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে খেলার সুযোগ ধরা দিয়েছে। সেখানে ক্রোয়েশিয়া প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দুই দল। ১৯৯০ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছেছে ইংল্যান্ড। সেবার সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল তারা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইংল্যান্ডের একমাত্র শিরোপা ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ জয়। গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে নকআউট পর্বে ওঠে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয়পর্বে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকাকে ও কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। ছয় গোল করে টুর্নামেন্টে গোলদাতাদের তালিকায় সবার ওপরে আছেন হ্যারি কেইন। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে তারচেয়ে বেশি গোল আছে শুধু ১০ গোল করা গ্যারি লিনেকারের। তবে এক জায়গায় পূর্বসূরিকে ঠিকই স্পর্শ করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক। বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ ছয় গোলের রেকর্ড ছিল সাবেক স্ট্রাইকার লিনেকারের। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে এই কীর্তি গড়েন তিনি। ৩২ বছর পর কেইনের সামনে এখন রেকর্ডটা এককভাবে নিজের করে নেয়ার হাতছানি। চলতি টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের করা ১১টি গোলের আটটিই এসেছে পেনাল্টিসহ সেট পিস থেকে। এক বিশ্বকাপে সেট পিস থেকে এরচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড নেই কোন দলের। ১৯৬৬ সালে পর্তুগালও সেট পিস থেকে আটটি গোল করেছিল। রেকর্ডটা এককভাবে নিজেদের করে নেয়ার সুযোগ রয়েছে কেইন-রাহিম স্টার্লিংদের। ১৯৬৬ সালে নিজেদের একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ের আসরে সর্বোচ্চ ১১টি গোল করেছিল ইংল্যান্ড। এরই মধ্যে বিশ্বকাপের এক আসরে নিজেদের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা। সেমিফাইনালে রেকর্ডটা নতুন করে লেখার সুযোগ থাকছে তাদের সামনে। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা নিজের শেষ ৩০টি ম্যাচে হারের মুখ দেখেননি মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসন। যে কোন ইংলিশ খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড এটি। ১৯৯১ সালে যুগোসøাভিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার পর ছয়টি বিশ্বকাপের পাঁচটিতেই খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ সালে বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের অভিষেকেই শেষ চারে পা রেখেছিল তারা। ঐ আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে সেমিফাইনালে হারের পর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলায় হল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পায়। এটাই বিশ্বমঞ্চে দেশটির সেরা পারফর্মেন্স। চলতি রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত অপরাজিত ক্রোয়েশিয়া। ‘ডি’ গ্রুপে তিন ম্যাচই জিতে পুরো নয় পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বে পা রাখে দালিচের দল। প্রতিপক্ষের জালে সাতবার বল জড়ানোর বিপরীতে নিজেরা হজম করেছে মোটে একটি। দুই গোল করে চলতি আসরে ক্রোয়েশিয়ার সেরা গোলদাতা অধিনায়ক লুকা মডরিচ। গ্রুপপর্বে দারুণ পারফর্ম করা ক্রোয়েশিয়ার নকআউট পর্বটা এখন পর্যন্ত সহজ হয়নি। শেষ ষোলোয় টাইব্রেকারে ডেনমার্ককে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়া বাধা পেরোতেও দরকার পড়েছে পেনাল্টি শূটআউটের। বিশ্বকাপে এর আগে কখনই ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়নি ক্রোয়েশিয়া। আন্তর্জাতিক কোন টুর্নামেন্টে দুই দলের একমাত্র দেখাটা হয়েছিল ২০০৪ সালের ইউরোয়। সেবার ৪-২ গোলে ইংলিশদের পরাস্ত করে ক্রোয়েটরা। সবমিলিয়ে দুই দলের দেখা হয়েছে সাতবার। চার জয় নিয়ে এগিয়ে আছে থ্রি লায়ন্স। ক্রোয়েশিয়ার জয় দুটি। এবারও ক্রোয়েশিয়াকে হারানোর দিকেই মনোযোগী ডিফেন্ডার এরিক দিয়ের।
×