ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে

অনেক অভিজাত ক্লাবের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মাদক বিক্রির অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১১ জুলাই ২০১৮

অনেক অভিজাত ক্লাবের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মাদক বিক্রির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর অনেক ক্লাবের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মাদক আমদানি, শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালানের মাধ্যমে মাদক এনে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে কাজ চলছে। প্রমাণের ভিত্তিতে সেসব ক্লাবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। একই সঙ্গে গত তিন মাসে প্রায় ৮০ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য আটক করার তথ্য জানায় সংস্থাটি। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর উত্তরা ক্লাবে অভিযান ও শুল্ক গোয়েন্দার চলমান কার্যক্রম বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্থাটি। অধিদফতরের মহাপরিচালক আরও বলেন, অবৈধভাবে মাদক আমদানি, শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কাস্টমস ও মাদক আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে সে যে হোক না কেন আইনগত ব্যবস্থা নিতে শৈথিল্য দেখানো হবে না। রাজধানীর কোন কোন ক্লাবে অবৈধ মদ ও মাদকদ্রব্য আছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম বলেন, অনেক অভিজাত ক্লাবে অবৈধ মদ ও মাদকদ্রব্য আছে, এমন অভিযোগ আছে। যা এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না। সবার অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগ মোতাবেক তদন্তও হচ্ছে। আমাদের জনবল কম, তাই কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে এটা সবার মনে রাখতে হবে, যে যত বড়ই হোক, আইনের উর্ধে কেউ নয়। এটাও সত্যি যে, অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযানে যাব না। কারণ অভিযানে গেলে আমাদের শক্ত প্রমাণ লাগে। তাই যারা অভিযোগ দিচ্ছে তাদের বলছি, আপনারা চোখ রাখুন এবং যৌক্তিক প্রমাণ সংগ্রহ করুন। আরেক প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, চোরাচালান ও অবৈধ মাদকদ্রব্য বহনকারীর সংখ্যা বেশি। তাই ঘুরে ফিরে তাদেরই দেখা যাচ্ছে এবং তারাই বেশি ধরা পড়ছে। তবে এটা সত্যি নয় যে, অন্তরালে থাকা ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তাদেরও ধরা হচ্ছে। তবে তাদের সংখ্যা খুব কম। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে চলমান কার্যক্রম জোরদার করা হবে বলে জানানো হয়। এর আগে সোমবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার অভিজাত ক্লাব উত্তরা ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ৫ কোটি টাকার বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, হুইস্কি, ভদকা ও বিয়ার উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা। শুল্ক গোয়েন্দা জানায়, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে গোপন সংবাদ থাকায় এ দফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে বিভিন্ন সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত টিম উত্তরা ক্লাবে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য জব্দ করে। উত্তরা ক্লাব দীর্ঘদিন ধরে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ ও মাদকদ্রব্য অবাধে বিক্রয় করছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে একটি টিম উত্তরা ক্লাবে অবস্থান নেয়। অভিযানের শুরুতে ক্লাব কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা না করায় বিকেল ৫টার দিকে ক্লাবের তালা ভেঙ্গে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৩ হাজার ৪৫ বোতল বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, হুইস্কি, ভদকা ও ২ হাজার ৫০০ ক্যান বিয়ার জব্দ করা হয়। উত্তরা ক্লাবে এত মদের বোতল আসল কিভাবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিজি বলেন, হতে পারে তারা ডিপ্লোম্যাটিক বন্ডেড সুবিধার মাধ্যমে এগুলো এনেছে অথবা চোরাচালানের মাধ্যমে। কিন্তু যেভাবেই এনে থাকুক না কেন দীর্ঘক্ষণ সময় দেয়ার পরও তারা এগুলোর স্বপক্ষে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এছাড়া আমরা তদন্ত করে দেখলাম দীর্ঘদিন ধরে তারা কোন মদই আমদানি করেনি। এগুলো কীভাবে এলো তা আমরা তদন্ত করে বলতে পারব। দেশব্যাপী মাদকে বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এ ক্ষেত্রে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয় সবার সহযোগিতা কামনা করেন। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কেনা নামি দামি গাড়ি নিয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, রাস্তায় একটি গাড়িতে আঁচড় লাগলে মালিক ক্ষেপে যায়, অথচ আমাদের সাম্প্রতিক অভিযানে দেখছি মানুষ রাস্তায় গাড়ি ফেলে যাচ্ছে। যারা শুল্কমুক্ত সুবিধায়, শুল্ক ফাঁকি কিংবা কম শুল্ক পরিশোধ করে গাড়ি কিনছেন এমন কয়েকটি গাড়ি আটকের কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে। তবে শুল্ক ফাঁকি দেয়া হলে সেক্ষেত্রে যথাযথ শুল্ক পরিশোধ করে তা ব্যবহারের আহ্বানও জানান। ক্রিসেন্ট লেদার কর্তৃক ১১০৪ কোটি টাকারি মানিলন্ডারিং মামলা নিয়ে অধিদফতর কাজ করছে বলেও জানান মহাপরিচালক। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিরর বিপরীতে এই মানিলন্ডারিং হয়েছে বলে সংস্থাটি মনে করছে।
×