ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘১৯৬৬-এর নায়কদের ছাড়িয়ে যাবে হ্যারিরা’

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১০ জুলাই ২০১৮

‘১৯৬৬-এর নায়কদের ছাড়িয়ে যাবে হ্যারিরা’

রুমেল খান ॥ বলা হয়ে থাকে ফুটবলে অধিনায়ক কেবল নামেই অধিনায়ক, আসলে তিনি খেটে খাওয়া শ্রমিক ছাড়া কিছুই নন! আসল অধিনায়ক যদি কাউকে বলতে হয়, তাহলে তিনি হচ্ছেন কোচ। তার দিক-নির্দেশনায়, পরিচালনায়-পরিকল্পনায় দলের জয় বা ড্র নির্ধারিত হয়। ফুটবল দলকে যদি একটা জাহাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে সে জাহাজের ক্যাপ্টেন হচ্ছেন কোচ। শিপ ক্যাপ্টেন এবং ফুটবল কোচের মধ্যে আরেকটি মিল আছে। জাহাজডুবি হলে দায়ী করা হয় ক্যাপ্টেনকে, তেমনি দলের ভরাডুবি ঘটলে বা সাফল্য না পেলে বলিরপাঁঠা বানানো হয় এ কোচ মহাশয়কেই! এবারের চলমান রাশিয়া বিশ্বকাপে এখনও টিকে আছে ‘ফুটবলের জনক’ খ্যাত ইংল্যান্ড। এর মূল কৃতিত্ব হ্যারি কেন, রাহিম স্টার্লিং, ডেলে আলীদের নয়। আসল ক্রেডিট দলের হেড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের। তার সঠিক দিক-নির্দেশনা মেনেই সফলভাবে দীর্ঘ ২৮ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে এসেছে তারা। আগামী বুধবার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে তারা দ্বিতীয় সেমিতে মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়ার। এই ম্যাচেও যদি কাঙ্খিত জয় কুড়িয়ে নিতে পারে তারা, তাহলে দীর্ঘ ৫২ বছর পর আবারও (দ্বিতীয়বারের মতো) ফাইনালে নাম লেখাতে পারবে তারা। আর ফাইনালে উঠতে পারলে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের নায়কদেরও জনপ্রিয়তার বিচারে ছাড়িয়ে যাবে বর্তমান দলের খেলোয়াড়রা, এমনটাই দৃঢ়বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন কোচ সাউথগেট। ইংল্যান্ড এবারের বিশ্বকাপে ছিল ‘জি’ গ্রুপে। নিজেদের প্রথম খেলায় তারা ২-১ গোলে হারায় তিউনিসিয়াকে। দ্বিতীয় ম্যাচে পানামাকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দেয় তারা। এই ম্যাচ জিতে নকআউট পর্বে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় তৃতীয় ম্যাচে তারকা ফরোয়ার্ড হ্যারি কেনসহ কয়েক ফুটবলারকে বিশ্রাম দেন সাউথগেট। এর ফল অবশ্য নেতিবাচকই হয়। কেননা বেলজিয়ামের কাছে ম্যাচটা হেরে যায় ইংল্যান্ড, ০-১ গোলে। গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে ইংল্যান্ড ওঠে দ্বিতীয় রাউন্ডে। সেখানে তারা টাইব্রেকারে ৪-৩ (১-১) গোলে হারায় কলম্বিয়াকে। ২০০৬ আসরের পর আবারও ওঠে কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানে তারা সুইডেনকে ২-০ গোলে হারিয়ে নাম লেখায় শেষ চারে। প্রতি ম্যাচেই সাউথগেট দলকে ভিন্ন ধাঁচে খেলিয়ে এবং দলের জয়ে প্রশংসিত হন। তথাকথিত ইংলিশ স্টাইল পরিহার করে নতুন স্টাইলে খেলান। আগের ৪-৪-২ ফর্মেশনে না খেলিয়ে দলকে খেলান ৩-৫-২ ফর্মেশনে। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দলের দায়িত্ব নেন ৪৭ বছর বয়সী এই কোচ। তার অধীনে ইংল্যান্ড এ পর্যন্ত ২৩ ম্যাচ খেলে এর ১৩টিতেই জিতেছে। ৭টিতে ড্র করার বিপরীতে হেরেছে মাত্র ৩ ম্যাচে। এ পরিসংখ্যানেই স্পষ্টÑ দলটিকে বেশ ভালভাবেই গড়ে নিয়েছেন গ্যারেথ। তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন তারই সহকারী স্টিভ হল্যান্ড। গ্যারেথের সঙ্গে আগেও একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে স্টিভের। ২০১৩ সালে গ্যারেথ যখন ইংল্যান্ড অ-২১ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন, তখন তার সহকারী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন স্টিভও। তা সেই স্টিভ এবার কি বললেন তার সতীর্থ গ্যারেথকে নিয়ে? ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি গ্যারেথ হচ্ছেন জোসে মরিনহো, রাফায়েল বেনিতেজ এবং এন্টোনিও কন্টের মতো সমমানের কোচ। আমি এ পর্যন্ত যত কোচের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের মধ্যে গ্যারেথকেই সেরা মনে হয়েছে। গ্যারেথ অনেক মেধাবী, সৃষ্টিশীল এবং পরিশ্রমী। আশা করি এবারের বিশ্বকাপে তিনি ইংল্যান্ডকে কাক্সিক্ষত সাফল্য এনে দেবেন।’ অবশ্য বিনয়ী সাউথগেট এসব প্রশংসার ভাগ নিতে নারাজ। তিনি বরং বলছেন, ‘১৯৬৬ বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড জিতেছিল ববি চার্লটন এবং ববি মুরের মতো গ্রেট খেলোয়াড়দের কল্যাণে। তারাই আমাদের প্রেরণার উৎস। আমরা যদি এবারের বিশ্বকাপ জিততে পারি, তাহলে তাদের জনপ্রিয়তাকেও ছাড়িয়ে যাবে আমার শিষ্যরা, এমনটাই মনে হয় আমার।’ ফুটবলের জনক খ্যাত ইংল্যান্ডের পারফর্মেন্স খুব একটা উজ্জ্বল নয়। প্রথম তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকলেও তারা ‘অহংকার’ করে অংশ নেয়নি। ১৯৫০ সালে প্রথমবারের মতো খেলে ইংরেজরা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১-০ গোলে অপ্রত্যাশিত হেরে বিদায় নেয় প্রথম রাউন্ড থেকেই। কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে ১৯৬২, ১৯৮৬, ২০০২ ও ২০০৬ সালে। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় ১৯৮২ ও ১৯৯৮ সালে। বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি ১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ১৯৯৪ সালে। ফুটবলের জনক বলে খ্যাত ইংল্যান্ডকে অনায়াসেই বিশ্ব ফুটবলের ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। ২০ বিশ্বকাপের মধ্যে ১৪টিতে মূলপর্বে অংশ নিয়ে মাত্র দু’বার সেমিফাইনাল খেলতে পেরেছে, আর শিরোপা জিততে পেরেছে মাত্র একবার (১৯৬৬ সালে, পশ্চিম জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে)। তারও সেই ফাইনালে তাদের জিওফ হার্স্টের একটি গোল ছিল ত্রুটিপূর্ণ। ১৯৯০ আসরে হয়েছিল চতুর্থ। সর্বশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপ আসরে তাদের পারফর্মেন্স ছিল জঘন্য। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল তাদের। তবে এবার সেই ব্যর্থতার কথা ভুলে গিয়ে শিরোপা জেতার জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী ‘দ্য থ্রি লায়ন্স’ খ্যাত ইংল্যান্ড। সে লক্ষ্যে এবার তারা বদ্ধপরিকর। পারবেন কি সাউথগেট?
×