ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্লাইট সঙ্কটে বিমানের রিয়াদ-কুয়েত-দোহা রুট সাময়িক বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৯ জুলাই ২০১৮

 ফ্লাইট সঙ্কটে বিমানের রিয়াদ-কুয়েত-দোহা রুট সাময়িক বন্ধ

আজাদ সুলায়মান ॥ উড়োজাহাজ সঙ্কটে সাময়িক বন্ধ হচ্ছে বিমানের সবচেয়ে লাভজনক রুট রিয়াদ, কুয়েত ও দোহা। হজের জন্য সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় উড়োজাহাজ লিজে না পাওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে বিমানের চার দশকের প্রতিষ্ঠিত এসব রুট। বিমান বলছে- হজকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এ রুট সাময়িক বন্ধ করা হচ্ছে। হজের পর আবার চালু হবে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাময়িক বন্ধ করা হলেও এর মাসুল গুনতে হবে স্থায়ীভাবে। কেননা, চারদশক ধরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এসব রুট লাভজনক করা হয়েছিল। বলতে গেলে বিমানের সবচেয়ে বেশি রাজস্বের উৎস রিয়াদের মতো রুট বন্ধ করায় যে ক্ষতি হবে তা সহজে পূরণীয় নয়। এমনিতে নানা কারণে বিমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে যাত্রীরা। সেখানে এসব রুট বন্ধ করে দেয়ার মানেই হলো বিমানের সর্বনাশ করা। বিমানের দায়িত্বে থাকা এত জ্ঞানীগুণী পন্ডিত; কেউ তা এখনও আঁচ করতে পারছে না। তারা এটাকে খুবই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে দেখছেন। জানতে চাইলে বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মুহিবুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক ফ্যাক্টর কাজ করছে। নিঃসন্দেহে এসব রুট বন্ধ করা হলে ক্ষতি হবে। যদিও বিমানের দায় মন্ত্রণালয়ের, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিমান একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এটা চালায় বিমান ম্যানেজমেন্ট। সব সিদ্ধান্ত তাদেরই। তারপরও এসব ফ্যাক্টর দেখছি। বিমান সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৪ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট শুরু। তার আগের দিন ১৩ জুলাই থেকে রিয়াদ রুট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরবর্তী ধাপে বন্ধের তালিকায় রয়েছে কুয়েত ও দোহা রুট। এসব রুট বন্ধ করার ঘোষণায় ইতোমধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। রিয়াদে বর্তমানে সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট অপারেট করছে বিমান। ৪১৯ সিটের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর উড়োজাহাজ ভরেই এ রুটে যাত্রী যাতায়াত করে। অধিকাংশই টিকেটই অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়। সৌদি আরব প্রবাসী প্রায় ১৮ লাখ বাংলাদেশীর অর্ধেকেরই বসবাস এই রিয়াদে। তাদের বেশিরভাগেরই পছন্দের বাহন বিমান। বিমানের অনেক নেতিবাচক সমালোচনার মাঝেও সারাবছরই এই রুটের যাত্রীতে ফ্লাইট থাকে ভরপুুর। এমন একটি নির্ভরযোগ্য রুট হঠাৎ বন্ধের ঘোষণায় চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে রিয়াদ প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে। কদিন ধরেই সেখানে চলছে বিমানের সমালোচনা। সঙ্কট শুধু এখানেই সীমিত নয়। বিমানের ফ্লাইট সিডিউলর্ ্ক্ষা করতে না পারায় দুদিন আগে রিয়াদ এয়ারপোর্ট থেকে বিমানের কাউন্টার বের করে দিয়েছে। এয়ারপোর্টের বাইরে ৪৫ ডিগ্রী তপ্ত রোদের মাঝে খোলা আকাশের নিচে বিমানের কাউন্টারে শত শত যাত্রীকে চেকইন করতে দেখা গেছে। চরম দুর্দশা ও ভোগান্তির শিকার হন তারা। এ সম্পর্কে রিয়াদ ম্যানেজার আমিন নিজেও বিস্মিত। তিনি সেখানকার একটি টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, এটা মেনে নেয়ার মতো নয়। এয়ারপোর্টের বাইরে বিমানের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে জনকণ্ঠকে ফোন করে যাত্রী বশির বলেছেন, শুধু বিমানের ব্যর্থতার জন্যই আজ প্রবাসে এত ন্যক্কারজনক পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। এমন তপ্ত রোদের মাঝে শিশুবাচ্চা নিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়িয়ে চেকইন করতে বাধ্য করা হয় আমাদের। অথচ আমাদের চেয়ে কম যাত্রী থাকার পরও এমিরেটস যাত্রীদের এয়ারপোর্টের ভেতরেই কাউন্টার রাখা হয়। শুধু বিমানের বেলায় কেন এমন দুর্দশা ? এটা তো দেখারও কেউ নেই। মামুন নামের অপর এক যাত্রী জানান, যেদিনই বিমান সিডিউল রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় সেদিনই রিয়াদ এয়ারপোর্টের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয় বিমানের চেকইন কাউন্টার। এটা তো নতুন উৎপাত। এসব দেখার তো কেউ নেই। আমরা কার কাছে জানাব এই দুঃখের কথা। এ বিষয়ে রিয়াদ প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ছাত্তার জানিয়েছে, এখানকার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের এত অপকর্মের পরও রিয়াদ রুটটা যুগ যুগ ধরেই লাভজনক। এমন একটি লাভজনক রুট কলমের এক খোঁচায় বন্ধ করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যারা এই সর্বানাশা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের কি একটুও চিন্তাভাবনা করার দরকার ছিল না ? এই রুট একবার বন্ধ করা হলে আগামী দুই বছরেও সেটা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। যাদের মগজে এতটুকু জ্ঞান নেই তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার মতো যোগ্য লোক কি নেই বাংলাদেশে। এ সম্পর্কে বিমানের পরিকল্পনা বিভাগের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছে, এখনও চেষ্টা চলছে দুটো বোয়িং ৭৭৭ লিজে নেয়ার। হজ চলাকালীন অন্তত একটা হলেও যোগ দিতে পারে। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না রিয়াদ, কুয়েত ও দোহা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত। বিমানের এই সঙ্কটের জন্য দায়ী মূলত নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা, অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতা। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরীর মতে- বিমানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়ে গেছে আগের মতোই। বেসরকারী এয়ারলাইন্স নগদ টাকা নিয়ে গিয়ে বাজার থেকে ব্যাগ ভরে সওদা কিনে নিয়ে আসার মতো তড়িত গতিতে উড়োজাহাজ লিজে নেয়া ও ক্রয় করতে পারে। বিমান সেটা পারে না। পারবে কি করে। লিজে নেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালকের পদ শূন্য রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। সিদ্ধান্তটা নেবে কে? তারপরও যারা দায়িত্বে রয়েছে তাদেরও সেই সৎসাহস ও নৈতিকতা নেই। নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নেই্ একজনেরও। তাদের কাছ থেকে রিয়াদের মতো রুট বন্ধ হওয়াই কি আর না হওয়ারই কি ? তাদের কোন টার্গেট নেই, দায়বদ্ধতা নেই। তারা চাকরি করেন নয়টা-পাঁচটায় রুটিনমাফিক। কারণ তারা ভাল করেই জানেন- বিমান লাভ হলো নাকি লস হলো এজন্য তাদেরকে কোন জবাবদিহিতা করতে হবে না। বিমানের মূল সমস্যা এখানেই।
×