ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলার প্রজাতি রক্ষায়...

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৭ জুলাই ২০১৮

 কলার প্রজাতি রক্ষায়...

মানুষের খাওয়ার উপযোগী কলার প্রজাতি সংরক্ষণের চাবিকাঠি যার মধ্যে নিহিত আছে বলে মনে করা হয়; এমন এক ধরনের বন্য কলা বিলুপ্তির পথে থাকা ফলের তালিকায় স্থান পেয়েছে। আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারেই কেবল এই কলার গাছ দেখা যায়। সেখানে বনের মধ্যে এ ধরনের পূর্ণবয়স্ক কলাগাছ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ প্রজাতির কলাগাছ সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, কলাকে ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ রাখার গোপন চাবিকাঠি এর মধ্যেই নিহিত। সারা পৃথিবীতে যে ধরনের কলা মানুষ বেশি খেয়ে থাকে, তা ক্যাভেন্ডিশ নামে পরিচিত। কিন্তু এগুলো উদ্ভিজ্জ কীটপতঙ্গের আক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে আছে । সে জন্যই এখন নতুন এক ধরনের কলা তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে; যা একইসঙ্গে খেতে সুস্বাদু হবে এবং পানামা ডিজিজ থেকে বেঁচে থাকার মতো যথেষ্ট রোগপ্রতিরোধী হবে। ‘মাদাগাস্কান কলা’ আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপে উৎপন্ন হয় এবং এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। ব্রিটেনের কিউ রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনসের সিনিয়র বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা রিচার্ড এ্যালেন বলেন, প্রজাতিটির মধ্যে প্রকৃতিগতভাবেই খরা কিংবা রোগ মোকাবেলা করার সহ্যশক্তি রয়েছে। পানামা ডিজিজ নেই, সুতরাং সম্ভবত এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জিনগত সুবিধা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই কলার ওপর বিশদ গবেষণা করার আগ পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এটি সংরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা গবেষণাও করতে পারছি না। বিজ্ঞানীরা মাদাগাস্কারে এই গাছের অনুসন্ধান করেন এবং দেখতে পান এগুলো ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে আইইউসিএন; অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার তাদের সর্বশেষ লাল তালিকাতে এই ফলটিকে অন্তর্ভুক্ত করায় কলার ফলনের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়টি আলোচনায় আসবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। কিউ মাদাগাস্কার কনজারভেশন সেন্টারের ডক্টর হেলেন রালিমানানা বলেন, বন্য প্রজাতির কলা সংরক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে বিশাল বীজ থাকে এবং যার মাধ্যমে কলা চাষের উন্নতির জন্য একটি জিন খুঁজে বের করা সম্ভব হতে পারে। এই কলা যদি সংরক্ষণ করা যায় তাহলে বীজ সংরক্ষণ করা যাবে এবং গাছের জিনগত বৈশিষ্ট্য বোঝা সম্ভব হবে। মাদাগাস্কান কলার ভেতরেই বীজ তৈরি হয়; তার মানে এটি খাওয়ার জন্য ঠিক সুবিধার নয়। মিশ্র প্রজননের মাধ্যমে নতুন ধরনের কলা উৎপন্ন করা সম্ভব । যেটি হবে একই সঙ্গে খাবার যোগ্য এবং টেকসই। বনের প্রান্তে যে বেড়ে উঠছে এই কলা সেখানে আবহাওয়া সংক্রান্ত নানা সমস্যা, আগুন কিংবা বন কেটে ফেলা ইত্যাদি কারণেও সঙ্কটে পড়ে এর চাষাবাদ। সাধারণত একটি কলাগাছে রোগ দেখা দিলে তা দ্রুত সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কেউ কেউ হয়ত প্রশ্ন করবেন, দোকানে তো কলা কিনতে পাওয়া যাচ্ছে এখনও, তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো, বর্তমানের চিত্র এটি হলেও কিন্তু ভবিষ্যতে হয়ত তা থাকবে না। ক্যাভেন্ডিশ কলায় রোগবালাইয়ের উপদ্রব এশিয়াতে বর্তমানে সীমাবদ্ধ; তবে এটি যদি আমেরিকাতে ছড়িয়ে পড়ে তা হলে কলা উৎপাদনে নেতিবাচক ফল দেখা যাবে। এটা ঘটেছিল ১৯৫০ সালে যখন গ্রস মাইকেল নামে এক ধরনের কলার ক্ষেত্রে পানামা ডিজিজ বা ফাঙ্গাসের কারণে কলার ফলন নষ্ট হয় এবং এর অভাব দেখা দেয়। তখন এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ‘ইয়েস উই হ্যাভ নো বানানাস’ গানটি লেখা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এরপর গ্রস মাইকেল কলার স্থানে আসে ক্যাভেন্ডিশ কলা। ডেভনশায়ারের ষষ্ঠ ডিউক উইলিয়াম ক্যাভেন্ডিশ কলার নামকরণ করেন। -বিবিসি অবলম্বনে
×