ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কর্মী নিয়োগে গ্রীসের আগ্রহ প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৭ জুলাই ২০১৮

   বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কর্মী নিয়োগে গ্রীসের আগ্রহ প্রকাশ

ফিরোজ মান্না ॥ গ্রীস বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কর্মী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সম্প্রীতি গ্রীসের এথেন্সে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল আন্দ্রেয়াসের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদারের এক বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানানো হয়। বর্তমানে দেশটিতে কৃষি, গার্মেন্টস ও রেস্টুরেন্টে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী কাজ করছেন। বৈঠকে গ্রীসের কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া, বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য কী কী ধরণের কাজের সুযোগ আছে এবং ভবিষ্যতে সেখানে আরও কর্মী নিয়োগের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। তবে দেশটি দক্ষ কর্মী নিয়োগের ওপর জোর দিয়েছে। গ্রীসের সেক্রেটারি জেনারেল আন্দ্রেয়াস প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদারকে আশ্বস্ত করে বলেন, তার দেশ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগে আগ্রহী। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে। কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় কমাতে হবে। এথেন্সে অবস্থিত গ্রীসের শ্রম মন্ত্রণালয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব গ্রীসের লেবার, সোশ্যাল সিকিউরিটি এ্যান্ড সলিডারিটি মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল আন্দ্রেয়াস নেফালুদিসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গ্রীস প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের কল্যাণের বিষয়ে গ্রীক সরকার সর্বোতভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। বৈধ প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীরা গ্রীক নাগরিকদের মতই বেতন ভাতা ও অন্যান্য সমান সুযোগসুবিধা ভোগ করে আসছেন বলে সেক্রেটারি জেনারেল আন্দ্রেয়াস নেফালুদিস জানান। কর্মীদের কল্যাণ ও কাজের সুযোগ সুবিধা বিষয়ক দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠক হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার বাংলাদেশে ৭০ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মীদের বিভিন্ন পেশায় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী তৈরির কথা জানান। বিশেষ করে গার্মেন্টস, কেয়ার-গিভিং, হাউস-কিপিংসহ বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এসব প্রশিক্ষণ সেন্টারে। এ বিষয়ে গ্রীক সেক্রেটারি জেনারেল আগ্রহ দেখান। ভবিষ্যতে আইনানুযায়ী সুযোগ সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। গ্রীসের পর্যটন, রেস্টুরেন্ট, গার্মেন্টস, কৃষি, কেয়ার গিভিং ও হাউসকিপিং সেক্টরে বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব গ্রীসের সেক্রেটারি জেনারেলকে অবহিত করেন, বাংলাদেশ থেকে চাহিদা অনুসারে দক্ষ কর্মী নেয়া শুরু হলে এটি গ্রীসের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে দুই দেশই উপকৃত হবে। বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে ৬ মাসের জন্য বৈধভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশী কর্মীরা। এতে কর্মীরা খুব একটা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে না। এ ছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের ও মৌসুমি কর্মীদের মেয়াদ ৬ মাসের জায়গায় ২ বছর করার অনুরোধ জানান। নতুন শ্রমবাজারে সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করা হলে তা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্স প্রবাহের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেক্রেটারি জেনারেল বিষয়গুলো বিবেচনার আশ্বাস দেন। সূত্র জানিয়েছে, গ্রীসে বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৫ হাজার বাংলাদেশী কাজ করছেন। অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়লেও বাংলাদেশী কর্মীরা দেশ ছেড়ে যায়নি। ধীরে ধীরে গ্রীসের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পর আবার বাংলাদেশীদের দিন ফিরেছে। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি- সব কিছুতেই ভাল করছেন। তবে গ্রীস প্রবাসী ফারুক হোসেন বলেন, ‘স্বপ্নের গ্রীস’ এখন আর নেই। আগে গ্রীসে আসার জন্য অনেকেই পাগল ছিলেন। এখন গ্রীসের অবস্থা কিছুটা ফিরলেও কর্মীরা অতটা আগ্রহী নন। দেশটিতে বেশ কয়েকটি সেক্টরে কাজ রয়েছে। তবে ওই সব কাজ করতে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন রযেছে। যারা দক্ষ তারা ভাল করছেন।
×