ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সবার দৃষ্টি কাজানের মাঠে;###;রাত আটটায় মুখোমুখি উরুগুয়ে-ফ্রান্স, নেইমার হ্যাজার্ডদের লড়াই রাত বারোটায়

আজ মহারণ ব্রাজিল বেলজিয়াম

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৬ জুলাই ২০১৮

আজ মহারণ ব্রাজিল বেলজিয়াম

জাহিদুল আলম জয় ॥ সব আলোচনা, আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে শুধুই ব্রাজিল-বেলজিয়াম মহারণ। কোয়ার্টার ফাইনালের এই ম্যাচটিকে অনেকে ফাইনালের আগে ‘ফাইনাল’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। হাইভোল্টেজ ম্যাচটি মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১২টায়। কাজানের কাজান এ্যারানায় ম্যাচটি জিততে মুখিয়ে আছে দু’দলই। যারাই জিতবে তাদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি শিরোপা জয়ের পথটাও মসৃণ হবে। কাজানে ধ্রুপদী লড়াইয়ের আগে রাত ৮টায় শেষ আটের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ও একবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। নিঝনি নভগোরোডের ম্যাচটিতেও সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হতে চলেছে। ফরাসীরা যেমন পরাশক্তি আর্জেন্টিনাকে বিদায় করে এসেছে তেমনি উরুগুইয়ানরা দেশের বিমান ধরিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, বার্নাডো সিলভাদের। মানসিকভাবে উজ্জীবিত দু’দেশই তাই সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নে বিভোর। কাজান এ্যারানা পরাশক্তিদের জন্য এবার মরণফাঁদ। এই মাঠেই গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে হেরে বিদায় নিয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে দেশে ফিরতে হয়েছে রানার্সআপ আর্জেন্টিনাকে। এবার সেখানেই কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছেন নেইমার, কুটিনহোরা। ফেবারিটের হিসেবে এখন শুধু ব্রাজিলই টিকে আছে। ধীরে ধীরে সেলেসাও ফুটবলাররা নিজেদের মুনশিয়ানা দেখিয়ে চলেছে। এ কারণে অনেকেই আশাবাদী ম্যাচটিতে উতরে যাবে কোচ টিটের দল। তবে ছেড়ে কথা বলবে না বেলজিকরাও। দেশটির সোনালি প্রজন্ম এবার বিশ্বজয়ের স্বপ্ন বুনছে। তারাও জানে, ব্রাজিল বাধা পেরুতে পারলে স্বপ্ন পূরণের খুব কাছাকাছি চলে যাওয়া যাবে। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মত, এই ম্যাচের বিজয়ী দলেরই এবার বিশ্বমুকুট পরার সম্ভাবনা বেশি। কোয়ার্টার ফাইনালের চারটি ম্যাচের মধ্যে বেলজিয়াম-ব্র্রাজিল মহারণেই দিকেই চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে গোটা দুনিয়া। এই নিয়ে টানা সাতটি বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলছে ব্রাজিল। এর মধ্যে দুইবার বিদায় নিয়েছে ২০০৬ সালে ফ্রান্স ও ২০১০ সালে হল্যান্ডের কাছে হেরে। মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে আরেকটি পরিসংখ্যান চোখ রাঙাচ্ছে ব্রাজিলকে। সবশেষ তিনটি বিশ্বকাপেই ইউরোপিয়ান দলের কাছে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ২০০৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্স, ২০১০ সালে হল্যান্ড ও ২০১৪ নিজ দেশে জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হয়ে। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পারফর্মেন্সের হিসেবে ব্রাজিল ও বেলজিয়ামই সেরা দুই দল। অথচ মুখেমুখি হয়ে যাওয়ায় একটিকে সেমির আগেই বিদায় নিতে হবে। এ কারণে অতীত ইতিহাস ও পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবছে না কেউ। এরপরও কাগজে কলমে এগিয়ে পেলের দেশ। এ পর্যন্ত ব্রাজিল-বেলজিয়াম মুখোমুখি হয়েছে চারবার। তাতে ব্রাজিলের তিন জয়ের বিপরীতে বেলজিয়ামের জয় একটিতে। বিশ্বকাপে এর আগে একবারের দেখায় জিতেছে সাম্বা ছন্দের দেশ। ২০০২ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে শেষ ষোলোতে বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল লুই ফিলিপ সোলারির দল। ১৬ বছর আগে ১৭ জুন অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছিলেন দুই সুপারস্টার রিভাল্ডো ও রোনাল্ডো। তবে উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচটির আগে এসব পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবছে না কোনো দলই। মাঠের খেলায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করার আশা তাদের। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে দল দু’টির অবস্থান পিঠাপিঠি। ব্রাজিলের দুই আর বেলজিয়ামের তিন। দুই হলুদ কার্ডের কারণে বাঁচামরার ম্যাচে খেলতে পারছেন না ব্রাজিলের প্রাণভোমরা কাসেমিরো। থাইয়ের ইনজুরি কাটিয়ে ডগলাস কোস্টাও ফিরতে পারেন কিনা সংশয় আছে। তবে মার্সেলোর ফিরে আসা অনেকটাই নিশ্চিত। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ফিরলে ব্রাজিলের খেলার গতি ও আক্রমণ আরও বাড়বে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে মূল স্পটলাইট থাকবে নেইমারের দিকেই। শেষ ষোলোতে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে মেলে ধরেন পিএসজি তারকা। চোটের কারণে শুরুর দিকে জড়সড়ো থাকলেও নেইমারই এখন ব্রাজিলের তরুপের তাস। ম্যাচটি সামনে রেখে ব্রাজিল কোচ টিটে বলেন, কাসেমিরোর না থাকাটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। ও এমন একজন ফুটবলার যে আক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে, প্রতিপক্ষের আক্রমণ নস্যাতও করতে পারে। তবে আমাদের ভালমানের বিকল্প আছে। আশা করছি ছেলেরা সেরাটা দিয়ে বিশ্বকাপের আরও কাছে পৌঁছে যাবে। ছেড়ে কথা বলবেনা বেলজিয়ামও। দলটির কোচ রবার্টো মার্টিনেজ শিষ্যদের পারফরমেন্সে আস্থা রেখে ব্রাজিলকে সতর্ক করে দিয়েছেন। দলীয় শক্তিকে আরও বৃদ্ধি করার তাগিদেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তারকা মিডফিল্ডার মারোনে ফেলাইনিকে মূল একাদশে ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। জাপানের বিরুদ্ধে হারতে বসা ম্যাচের ৬৫ মিনিটে ফেলাইনি ও চাডলি মাঠে নামার পর অন্য রকম উদ্দীপনা ফিরে পায় বেলজিকরা। বদলি হিসেবে নেমে ফেলাইনি ও চাডলি দু’জনেই গোল করেন। এ কারণেই ব্রাজিলের বিপক্ষে মূল একাদশে ফেলাইনির খেলার শতভাগ সম্ভাবনা আছে। মার্টিনেজ এ প্রসঙ্গে বলেন, একজন কোচ হিসেবে এই দলে আমার সামনে অনেক উপায় খোলা আছে। কিন্তু আমি ভালভাবেই জানি আমাকে কি করতে হবে। আমাদের শক্তির প্রয়োজন। এটা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য স্বপ্নের ম্যাচ। তারা এই ধরনের ম্যাচ খেলার জন্য জন্ম নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা জয়ের জন্যই মাঠে নামব। তবে ব্রাজিলকে সম্মান করতেই হবে। বেলজিয়াম-ব্রাজিল ম্যাচের আগে আরও একটি হাইভোল্টেজ ম্যাচ মাঠে গড়াবে। সেখানে লড়বে উরুগুয়ে ও ফ্রান্স। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ফরাসীরা উজ্জীবিত থাকলেও ম্যাচটিতে উরুগুয়েকেই ফেবারিট হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিসংখ্যানেও এগিয়ে সুয়ারেজ, কাভানিরা। বর্তমানে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ফ্রান্স (৭) উরুগুয়ের (১৪) চেয়ে এগিয়ে থাকলেও মাঠের লড়াইয়ে পিছিয়ে তারা। এ পর্যন্ত দু’দলের আটবারের দেখায় উরুগুয়ের তিন জয়ের বিপরীতে ফ্রান্স জিতেছে একটিতে। চারটি ম্যাচ ড্র হয়। বিশ্বকাপে তিনবারের মুখোমুখিতে উরুগুয়ের জয় একটিতে। বাকি দুই ম্যাচ অমীমাংসিত থাকে। ম্যাচের আগে ফরাসী কোচ দিদিয়ের দেশম বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য শিরোপা জয়। এজন্য আমাদের তিনটি ম্যাচই জিততে হবে। তাই প্রতিটি ম্যাচই আমাদের কাছে ফাইনাল। কোনটিই আমাদের কাছে কোয়ার্টার ফাইনাল বা সেমিফাইনাল নয়। প্রতিপক্ষ উরুগুয়ের প্রশংসা করার পাশাপাশি সতর্কও দেশম। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক বলেন, উরুগুয়ে দলটা দুর্দান্ত। আক্রমণাত্মক ও পরিকল্পনামাফিক ফুটবল খেলে তারা। এবারের আসরে সেরা পারফরমেন্সই করছে দলটি। তাদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক। আমরা মাঠে নেমে সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করব। যাতে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়। এই ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ধসিয়ে দেয়া কিলিয়ান এমবাপেকে আটকানোর ছক কষে মাঠে নামছে উরুগুয়ে। আর পর্তুগালের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করা এডিনসন কাভানি খেলতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে।
×