ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে পুনর্বাসন করা হবে এক লাখ

একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের আওতায় আসছে ভিক্ষুকরা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৫ জুলাই ২০১৮

 একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের আওতায় আসছে ভিক্ষুকরা

ওয়াজেদ হীরা ॥ শেখ হাসিনার উপহার ‘একটি বাড়ি একটি খামার, বদলাবে দিন তোমার আমার’ স্লোগানে এগিয়ে চলছে একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প। আর এই প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসনের জন্য ভিক্ষুকরা নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় একসঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচনের পাশাপাশি ভিক্ষুক পুনর্বাসন কাজ করা হবে। সারাদেশে এক লাখ ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি সরকারের গৃহীত সমবায় সমিতি ভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক পরিকল্পনা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এই প্রকল্পটির আওতায় গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোকে অর্থনৈতিক ইউনিট হিসেবে তৈরি করার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর উদ্যোগ নেয়। আর এখন এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ৬০ লাখ পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে দেশব্যাপী চলছে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্প। নতুন করে প্রকল্পে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কাজ অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। ফলে প্রকল্পে চতুর্থ সংশোধনী আনা হবে। দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ দেয়া হবে। এছাড়া ভিক্ষুকদের ক্ষুদ্র ব্যবসা, গরু-ছাগল কেনাসহ আয়বর্ধক কাজে ঋণ দেবে সরকার। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ভিক্ষুকদের প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে আবারও সংশোধনী আনা হবে। এই বিষয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সারাদেশের ভিক্ষুকদের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি অতি দরিদ্রপ্রবণ এলাকায় প্রকল্পের কাজের পরিধি আরও বিস্তার করা হবে। প্রকল্পটি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তৃণমূলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করা, তাদের সঞ্চয়ে উৎসাহ দেয়া, সদস্য সঞ্চয়ের বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থ বোনাস দেয়া, সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া। এছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনার জন্য পুঁজি গঠনে সহায়তা করা ও আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করাসহ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা। ইতোমধ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নীলফামারী জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ফলে ভিক্ষুকমুক্ত হয়েছে উপজেলাটি। ২০১৪ সালের ৫ জুলাই ‘ভিক্ষুকমুক্ত কিশোরীগঞ্জ উপজেলা’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, কিশোরীগঞ্জ উপজেলা ভিক্ষুকমুক্ত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সমিতির মাধ্যমে ভাগ করে ৯৭৯ ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করেছি। প্রকল্পের আওতায় স্থায়ী তহবিল গড়ে দিয়েছি। উপজেলা থেকে প্রাপ্ত একাধিক তথ্যে আরও জানা গেছে, নীলফামারী জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ভিক্ষুকদের প্রথমে চিহ্নিত করা হয়। এরপর মোট ১২টি সমিতিতে ভাগ করা হয়। প্রথমে উপজেলা প্রশাসন প্রত্যেকটি ভিক্ষুকের জন্য ৪ হাজার ৬শ’ টাকার তহবিল সংগ্রহ করে। এর সমপরিমাণ টাকা বোনাস হিসেবে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্প থেকে দেয়া হয় প্রত্যেক ভিক্ষুককে। ১২টি সমিতিতে ৩৬ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয় প্রকল্প থেকে বলেও জানা যায়। ঋণ গ্রহীতাদের ৮ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে নড়াইলেও একইভাবে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের কাজ করা হয়েছে। সেখানেও প্রায় আট শতাধিক ভিক্ষুককে নিয়ে কাজ হয়েছে বলে জানা যায়। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আকবর হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা দারিদ্র্য দূর করতে চাই। আর সে কারণেই ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া। ইতোমধ্যেই আমরা নীলফামারী নড়াইলে এই বিষয়ে কাজ করেছি এবং বেশ ভাল সাড়াও পেয়েছি। ওই দুই জেলায় কোনটিতে নয় শ’ কোনটিতে আট শতাধিক ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা গেছে। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে ভিক্ষুকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সমিতি থেকে ঋণ দেয়া হবে। একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা থেকে সৃষ্টি। এই প্রকল্প দারিদ্র্যবিমোচনে মানুষের নিজস্ব স্থায়ী পুঁজি তৈরি করে দেয়। আমরা সারাদেশে এক লাখ ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করতে চাই। ইতোমধ্যেই আমরা ৪৮ হাজার ভিক্ষুককে এই পুনর্বাসনের কর্মসূচীর আওতায় চিহ্নিত করেছি। তবে নড়াইল ও নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জে এ বিষয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন যেভাবে সহায়তা করেছে অন্যান্য সব জায়গায় তা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জের। এক্ষেত্রে কর্মসূচীর সফলতা এবং ভিক্ষুকমুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার জন্য স্থানীয়ভাবেও পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন। তবে আমরা সব জায়গায় যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি ভাল ফলই পাব। প্রকল্পের অন্যান্য কর্মকর্তাও জানিয়েছেন যে, ভিক্ষুকমুক্ত করার যে উদ্যোগ সেখানে ভিক্ষুকদেরও একটি সঞ্চয় জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যা স্থানীয়ভাবে প্রশাসন দেখাশুনা করবে। আর প্রকল্প সঞ্চয় দেখে অর্থায়ন করবে। কিন্তু অনেক জায়গায় সঞ্চয় করা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে জানা যায়। তবে এই সমস্যা মিটে যাবে বলেও কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করার এমন উদ্যোগ আলোর মুখ দেখলে শুধু ভিক্ষুক কমবে তাই নয় প্রতিটি ব্যক্তি হবে স্বাবলম্বীও।
×