ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ফের ছাত্রলীগের হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৩ জুলাই ২০১৮

রাবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ফের ছাত্রলীগের হামলা

রাবি সংবাদদাতা ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পতাকা মিছিলের সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। সোমবার বিকেল সোয়া ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠি, রড, হাতুড়ি ও ছুরি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। এতে একজন গুরুতর আহত হয়। আহত ওই শিক্ষার্থীর নাম তরিকুল ইসলাম তারেক। তিনি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তাকে সাংবাদিকরা উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে। তারেকের পায়ে ও মাথায় গুরুতর জখম হয়। এ ছাড়াও আরও তিনজন আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার বিকেল সোয়া ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজার থেকে পতাকা মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকের দিকে এগোতে থাকে আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি প্রধান ফটকের সামনে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। আন্দোলনকারীদের পতাকা কেড়ে নিয়ে ছাত্রলীগের ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী লোহার রড, বাঁশের লাঠি, হাতুড়ি ও ছুরি দিয়ে হামলা করে। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম তারেককে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। তারেক ছাড়াও হামলায় আরও তিনজন আহত হয়। এ সময় পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে ছিল বলে অভিযোগ করে প্রত্যক্ষদর্শীরা। কোটা সংস্কার রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা এ সময় আমাদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমাদের চারজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে তারেক নামের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, কোটা আন্দোলনের নামে জামায়াত-শিবির কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন ঘটাতে না পারে এ জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছিলাম। তারা মিছিল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করলে তাদের সঙ্গে আমাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু কথিত কোটা আন্দোলনকারীরা বিনোদপুর থেকে লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগদের ধাওয়া করতে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি। এর আগে সোমবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় কমিটির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল পালনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী থাকলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নেয়ায় আন্দোলনকারীরা দাঁড়াতে পারেননি। এ সময় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। তবে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বেরোবিতে কোটাবিরোধী বিক্ষোভে ছাত্রলীগের বাধা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর থেকে জানান, সরকারী চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়ন ও নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সোমবার দুপুরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ ও পতাকা মিছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে প- হয়েছে। এর আগে সকাল থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসেল চত্বরে সমবেত হয়ে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ঘিরে রাখে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও কোটাবিরোধীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ চতুর্দিকে বেষ্টনী তৈরি করে অবস্থান নেবার কারণে আন্দোলনকারীরা শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত বিক্ষোভ ও পতাকা মিছিল বের করতে পারেনি। পরে আন্দোলনকারীদের নেতা ওয়াদুদ জানান, অব্যাহত হুমকি ধমকির কারণে আমরা কর্মসূচী পালন করতে পারিনি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছে, তারা কাউকে হুমকি দেয়নি। রংপুর কারমাইকেল কলেজ, সরকারী বেগম রোকেয়া কলেজ ও সরকারী রংপুর কলেজে কোটাবিরোধী কোন কর্মসূচী পালিত হয়নি।
×