ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘ঐতিহ্যবাহী জামদানি নক্সা’ গ্রন্থের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২ জুলাই ২০১৮

‘ঐতিহ্যবাহী জামদানি নক্সা’ গ্রন্থের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামদানি শুধু কাপড় নয়, বয়নশিল্পীর অনবদ্য এক সৃষ্টিকর্ম। তাই বস্ত্র হয়ে জামদানি হয়ে উঠেছে এদেশের সাংস্কৃতিক। পেয়েছে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি। আর বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় ঠাঁই পেয়েছেন জামদানির গৌরবগাথা। মেলে ধরা হয়েছে জামদানি কাপড়ের বুনন কৌশল। আলোকচিত্রের সঙ্গে লিখিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে মিহি সুতোয় বোনা কাপড়টির বিচিত্র নক্সা, বয়নসহ নানা বিষয়। গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত হওয়া গ্রন্থটির শিরোনাম ‘ট্র্যাডিশনাল জামদানি ডিজাইনস’ বা ‘ঐতিহ্যবাহী জামদানি নক্সা’। বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের তত্ত্বাবধানে জামদানি নিয়ে মৌলিক গবেষণার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রচিত গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে জাতীয় জাদুঘর। গবেষণাকর্মে আর্থিক সহযোগিতা করেছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। রবিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। আলোচনা করেন বইটির প্রধান গবেষক ডিজাইনার চন্দ্র শেখর সাহা, জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, গবেষণার প্রকল্প সমন্বয়ক শাহিদ হোসেন শামীম ও বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস। স্বাগত বক্তৃতা করেন জাদুঘরের কিপার শিহাব শাহরিয়ার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, জামদানি বয়নশিল্প আমাদের গর্ব ও ঐতিহ্যের অংশ। এটিকে জিইয়ে রাখা ও সমৃদ্ধ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। জামদানি বয়নশিল্পীরা তাদের দুই হাতের ছোঁয়ায় যে অসাধারণ শিল্পকর্ম তৈরি করেন তা এককথায় অসাধারণ অতুলনীয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জামদানির গুরুত্ব এবং এই শিল্পের কারিগরদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, জামদানি শিল্প বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং এর ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। অথচ জামদানি শিল্পীরা ভাল অবস্থায় নেই। মন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষি, বিদ্যুত ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেক্টরে ভর্তুকি প্রদান করছে। একইভাবে সরকারীভাবে জামদানি বয়নশিল্পীদের ভর্তুকি দেয়া যায় কিনা সেটা ভেবে দেখা হবে। সেই প্রেক্ষাপটে জামদানি বয়নশিল্পীদের সমস্যা নিরসন ও স্বার্থ সংরক্ষণ তথা জামদানি শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও বলেন, এ খাতে প্রয়োজনীয় গবেষণা কাজে সহযোগিতা প্রদান করবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেন, বিশে^র সবচেয়ে বিখ্যাত কাপড় মসলিন এ দেশে উৎপাদিত হয়েছে। জামদানি কাপড় ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা এ দেশের জন্য গর্বের বিষয়। এখানকার মসলিন ও জামদানি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় এই হাতে বোনা তাঁতশিল্প এখন সংকটের মুখে। সবার মিলিত উদ্যোগে একে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেই ঐতিহ্যকে বাঁচাতে হবে। পাশাপাশাশি এসব কাপড় বহির্বিশ্বে রফতানির মাধ্যমে এদেশের অর্থনীতিকেও এগিয়ে নিতে হবে। চন্দ্র শেখর সাহা বলেন, পরবর্তীতে জামদানি নিয়ে যারা গবেষণা করবে তাদের জন্য এটি আকর গ্রন্থ হিসেবে কাজ করবে। কারণ বইটিতে জামদানির অনেক পুরনো নক্সা পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাঁতিদের যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। শাহিদ হোসেন শামীম বলেন, বংশ পরম্পরায় জামদানি কারিগররা এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেক্ষেত্রে নতুন জামদানি শিল্পীদের ভিত্তি তৈরিতে সহযোগিতা করবে এই গ্রন্থটি। কারণ, এই বইয়ে জামদানির বয়নকৌশলের সঙ্গে পুনরুদ্ধারকৃত অনেক হারিয়ে যাওয়া নক্সা সংযুক্ত করা হয়েছে। বইটিতে জামদানির মৌলিক ৬৭টি নক্সা স্থান পেয়েছে। রয়েছে দেশ ও বিদেশ থেকে সংগৃহীত ২৬টি নক্সার ছবি, জামদানির বিভিন্ন নক্সার নাম ও ডিজাইন প্রভৃতি। এছাড়া গবেষণায় পাওয়া ৩৯০টি নক্সার মধ্যে বাছাই করে ১৯৬টি নক্সা বইটিতে স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি ২০৭ জন তাঁতির নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বরসহ নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৩ হাজার টাকা।
×