ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একলা লড়াইয়ে কারমেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১ জুলাই ২০১৮

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একলা লড়াইয়ে কারমেন

মেক্সিকোতে রবিবারের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ১৩০ জনের বেশি প্রার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। এ রকম একজন প্রার্থী নিহত হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তার বিধবা স্ত্রী। নিজেই নেমেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় একজন প্রার্থীকে হামলার ভিডিও। মারিও চ্যাভেজ, মেক্সিকোর একটি শহরের মেয়র পদের প্রার্থী। দুবার তার ওপর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিল। তারা আমাকে বহুবার খুন করতে চেয়েছে। আমি শুনেছি তারা এই ক্যাম্পেন শেষ হওয়ার আগেই আমাকে মেরে ফেলার জন্য ঘাতকদের ভাড়া করেছে। এই প্রার্থী তার নিজের জন্য দেহরক্ষী চেয়ে আবেদন করেছেন কিন্তু এখনও মেলেনি। তিনি বলেন, আমার মনে হয় যেসব মানুষ ক্ষমতা হাতে পায়, তারা হয় অপরাধীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় নাহলে নিজেরাই অপরাধী সংগঠন গড়ে তোলে লোকজনকে আতঙ্কিত ও বাধ্য রাখার জন্য। তারা অনেকেই আমার বিপক্ষে কারণ তারা চায় না যে আমি মেয়র নির্বাচিত হই। আমার ভয় আছে কিন্তু এসব মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। তাই আমি লড়াই চালিয়ে যাবো। তারা সত্যিকার পরিবর্তন চায়। ৩৫ বছর বয়সী হোসে রেমেডিওস, আরেক শহরের মেয়র পদের প্রার্থী ছিলেন। ছয় সপ্তাহ আগে রাজনৈতিক এক সভা শেষে প্রকাশ্য দিনের আলোয় তাকে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী কারমেন ওর্তিয। স্বামীর মৃত্যুর পর বদলে গেছে তার জীবনের গতিধারা। তিনি আরও বলেন, ভয় দুই ধরনের হয়। এক ধরনের ভয় আপনাকে পঙ্গু করে দেবে, আরেকটি আপনাকে আগের চেয়েও বেশি দৃঢ়তা দেবে। প্রথমে ভেঙ্গে পড়লেও, সন্তানদের জন্য দৃঢ়তা পান কারমেন। আমার কাছে আমার স্বামী ছিল আমোদের ঘরের ভিত্তি। আমি তাকে বলতাম, তুমি কখনও ভেঙ্গে পড়লে আমাদের পুরো ঘর ভেঙ্গে পড়বে। তাকে মেরে ফেলার পর দুই তিনদিন আমি বিছানা থেকে উঠতেই পারিনি। কিন্তু একটা সময় আমারা বাচ্চারা এসে বলতে থাকে তারা ক্ষুধার্ত। তখন আমি আর পারিনি। আমাকে উঠে দাঁড়াতে হয়েছে। কারমেন এবং তার তিন শিশু সন্তানকে এখন সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষীরা সর্বদা অনুসরণ করে। যখন সে তাদের স্কুলে দিয়ে আসে কিংবা নিয়ে আসে। এমনকি সে যখন তার স্বামীর সমাধিস্থলে যায় তখনও। কারমেন নিজের স্বামীর জায়গায় লড়াই করতে মাঠে নেমেছেন। আমার নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হয়, কিন্তু কোন সন্দেহ নেই, আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম আরও দৃঢ়চেতা হিসেবে। কারণ আমি কখনও কল্পনাও করতে পারিনি আমাকে আমার স্বামীর ভূমিকাও পালন করতে হবে। কারমেন জনসভায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করছেন অধিকারের বিষয়ে। আমি এখানে আপনাদের কাছে এসেছি তার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে। নিরাপত্তা-হীনতার কারণে আমি ক্লান্ত এবং আমি জানি আপনারাও। আমরা আমাদের সমাজে শান্তি ও সহাবস্থান ফিরিয়ে আনতে চাই। তবে মনোবল শক্ত করে নির্বাচনের লড়াইয়ে নামলেও কারমেনের মন থেকে শঙ্কার মেঘ পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। এখন আমার সামনে আশঙ্কা কেবল একটি পিতার অবর্তমানে আমার সন্তানদের সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলা। কারমেন জানান, তার স্বামী একটি শান্তির ও নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। স্ত্রী হিসেবে প্রয়াত স্বামী যে কাজটি শুরু করেছিল সেই কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছেন একলা কারমেন। -বিবিসি অবলম্বনে।
×