ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ প্রবাসে দেশের ইমেজ ও আমাদের দায়

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১ জুলাই ২০১৮

সিডনির মেলব্যাগ ॥ প্রবাসে দেশের ইমেজ ও আমাদের দায়

একটি দেশ যখন মাথা তুলে দাঁড়ায় তখন তার জাতিসত্তার উচিত দেশকে ভালবেসে আরও বড় করে তোলা। আমরাই বোধকরি একমাত্র জাতি, যারা তা মানি না। আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বিশ্বস্বীকৃত। কোটি মানুষের পরিশ্রম আর মেধাকে শক্তি করে এ কাজ সম্পন্ন করছেন শেখ হাসিনা। অথচ আজ তাঁর দুশমনরাই কিলবিল করছে চারদিকে। তাঁর শত্রুই বাড়ছে দিনকে দিন। তিনি তাঁর পিতার আরাধ্য কাজ ও স্বপ্নকে বাস্তনে রূপ দিতে গিয়ে কত মানুষের যে চোখের শুল আর অকারণ দুশমনে পরিণত হয়েছেন ভাবলেই অবাক হতে হয়। আমাদের দেশের মানুষের মনে কি আছে স্বয়ং ঈশ্বরও জানেন না। দেশ তারুণ্য আর নতুন শক্তি যখন জাগছে তার সাথেই আছে ভয়াবহ এক বাস্তবতা। আমাদের এই সিডনিতে এখন বাংলাদেশের মানুষ গিজগিজ করে। আগে যেখানে কালে ভদ্রে দেখা মিলত সেখানে এখন সব জায়গায় পাই তাদের। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা এক বাংলাদেশি ভুবনে আমাদের পরিচয় ও অস্তিত্ব যখন ডানা মেলছে তখন একদল লোক চেষ্টা করে যাচ্ছে সবকিছু গুবলেট করার। ক’দিন আগে এক যুবক হয়ে উঠল সংবাদ শিরোনাম। কেন? না কোন ভাল কাজে না। নেহাৎ এক অপচেষ্টা আর তার মনের বিকারে। সেই পুরনো রোগ। জঙ্গীবাদ। বাংলাদেশের মানুষ তো এমন ছিল না। আমাদের নব্বই শতাংশ মানুষ মনেপ্রাণে ধার্মিক হলেও তারা শান্তিপ্রিয়। আমি হলপ করে বলতে পারি নাশকতা বা উগ্রতা আমাদের সঙ্গে যায় না। আমরা তেমন বলশালী না আবার আমাদের মন মননেও তা নেই। মূলত ভীরু জাতির এমন উগ্রতা তাই মানা কঠিন। এই যুবকটি নিশ্চয়ই ভাল জীবন আর সুন্দর কিছুর আশায় দেশ ছেড়ে এসেছিল। সে জানত সে কোন দেশে কেন এসেছে। এই দেশ ও সমাজকে আমরা নিন্দা করার অধিকার রাখি না। কেননা তারা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আনেনি। আমরা যারা নানা কারণে এসেছি এটা আমাদের পছন্দ। বললে অনেকে রাগ করবেন বটে কিন্তু বাস্তবতা কি? কেন এই ছেলেটা মধ্যপ্রাচ্যে যায়নি? কেন তার কথিত আদর্শ সমাজ বেছে নেয়নি বেঁচে থাকার জন্য? সে তো জানতই এসব দেশ ও সমাজ উদার আর মুক্ত। এখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা শিশুকাল থেকে যৌনতা জেনে বড় হয়। তাদের কাছে পুরুষ নারী এগুলো বিষয় না। যে বাচ্চা বুদ্ধি খোলার আগে মা বাবার সঙ্গে দোকানে যায় সে দেখে সুপার মলে জামা প্যান্ট সবজি আনাজ বা ওষুধের সঙ্গেই রাখা আছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী। তার বাবা-মা অন্তর্বাস কেনে এক দোকান থেকে। বাহারি সব অন্তর্বাসে ভরা দোকানে চোখ ধাঁধানো সব মনোহারি জিনিস। এদেশে কিছুদিন আগে গণভোটে সমকামীদের বিয়ে বৈধতা পেয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এর ঘোর বিরোধী। এটি প্রকৃতি বা ঈশ্বরের নিয়ম বিরোধী। আমি আমার না সূচক ভোট দিলেও হ্যাঁ ভোটই জয়ী হয়েছে। এখন এমন পরিবেশ পাবলিক মানে সরকারী স্কুলগুলোতে এসব বিষয়ে উদার ও সহনশীল হওয়ার পাঠ দেয়া হবে। আরও আছে। সামনে নাকি কোন ফর্মে লিঙ্গ কি তা উল্লেখ করা লাগবে না। কারণ এতে সমকামীরা নাখোশ। তাদের কি বলে ডাকা হবে? মিসেস না মিস? এসব সমাজে একজন বাংলাদেশী যুবক কেন এসে ভাববে জীবন তার মতো করে চলবে? মূলত এ হচ্ছে মগজধোলাইয়ের বিষয়। মগজধোলাই হয়ে যাওয়া এসব যুবকরা জানে না তারা আসলে কি চায়। তাদের জীবন ও চাওয়ার যে তফাৎ সেটাই এখন আতঙ্কের। একটি সভ্য ও উন্নত দেশের সমাজ জীবন বা আইন বিচার কিংবা শাস্তি বিষয়ে অর্বাচীন এ যুবক বড়জোর কয়েকটা তাজা প্রাণ কেড়ে নেয়া ছাড়া কিছুই করতে পারত না। ভাগ্যিস সে তা পারেনি। খবরে দেখলাম আমাদের সরকারও তৎপর। সঙ্গে সঙ্গে দেশে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সন্দেহ নেই পুরা পরিবারই ছিল এই প্রক্রিয়ায় জড়িত। যার মানে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ও গোষ্ঠী আমাদের দেশ ও তারুণ্যকে ধ্বংস করতে চাইছে আর সে প্রক্রিয়া রুখে দেয়ায় শেখ হাসিনা হচ্ছেন দুশমন। এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। কারণ এই যুবকটি ঢালাওভাবে আমাদের জাতি ও দেশের মুখে কলঙ্ক মেখে দিয়েছে। অতি কষ্টে অনেক শ্রমে দেশ যখন তার মুখ উজ্জ্বল করছে যখন বাংলাদেশ তার একদা পার্ট পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের চাইতে বহুদূর এগিয়ে তখন এমন ধরনের হটকারিতা কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। আমি নিশ্চিতভাবে জানি বাংলাদেশের কোন সুস্থ প্রবাসী এসব প্রক্রিয়ায় জড়িত নেই। তারা এসবের ধার ধারে না। বরং বাংলাদেশের তারুণ্য ও বেশিরভাগ মানুষই চায় নিরাপদ জীবন। তাদের জীবনে নানা আনন্দ আর বেদনায় তারা দেশ ও প্রবাসে সেতু বন্ধন করে বেঁচে থাকে। এসব উটকো ঝামেলা নেয়ার সময় তাদের নেই। প্রবাসে এবং দেশে সন্তানদের মেলামেশা সঙ্গ আর জীবন বিষয়ে জানা তাই জরুরী। নাহলে এমন সব বিপদ এসে পড়বে তখন আর কেউ বাঁচাতে পারবে না। আগেই বলেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগ্রাম করে চলেছেন। তাঁর নেতৃত্ব আর বিশালতা আওয়ামী লীগকে সম্মান ও সিংহাসন এনে দিলেও দলের ভেতর নানা ঝামেলা আর কর্মী নেতাদের মধ্যে আছে বিভ্রান্তি। এই সিডনিতেও তাদের ভেতর প্রগতিশীলতার চর্চা কম। যারা করেন তারা করেন। আরেক দল আওয়ামী লীগে নাম লিখিয়ে রেখে আছে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। অথচ বাংলাদেশের নাম সুনাম ও মর্যাদার প্রশ্নে তাদের অভিভাবকত্ব কাজে আসতে পারে। তাদের উচিত দলাদলি বন্ধ করে জনগোষ্ঠীতে শুদ্ধতার চর্চা ও প্রগতিশীলতা নিশ্চিত করা। সঙ্গে যেসব মানুষ প্রবাসে শিল্প সংস্কৃতি কিংবা উদারতার চর্চা করেন তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। এভাবে ঘরে এক আর বাইরে আরেক হলে চলবে না। দুনিয়ায় মাত্র পা রাখছি আমরা। মাত্রই আমাদের ইমেজ বড় হচ্ছে। এখন এমন অপরাধ প্রবণতা কিংবা এমন জঙ্গীবাদ মানা যায় না। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি আর সম্মান বজায় রাখার দায় সবার। এটা কারও একার কাজ না। কমিউনিটির সচেতনতা আর ঐক্যবদ্ধতাই এর উত্তর। রাজনৈতিক হিংসা দ্বেষ বা দলাদলির বাইরে আমরা সবাই বাংলাদেশী। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহঙ্কার। আমাদের চেতনায় আছে অসাম্প্রদায়িকতা। ঐতিহ্যে আছে বাঙালীয়ানা। এগুলো থেকে সরে এসে পোশাক খাবার কিংবা আচরণে উগ্র হলে তো দানবরা হাত বাড়াবেই। সব জাতির মতো আমাদেরও মানতে হবে ধর্ম, বিশ্বাস আর আচরণ এক দেশবোধ আরেক বিষয়। তাহলেই আমরা বাংলাদেশ ও তার প্রগতিশীল ভাবমূর্তি বজায় রেখে দেশকে সামনে যেতে সাহায্য করতে পারব।
×