ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তা

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১ জুলাই ২০১৮

শিক্ষায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তা

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতিই উন্নতি লাভ করতে পারে না। বাস্তবতা হচ্ছে, এই মেরুদণ্ড তৈরি হয় প্রাথমিক শিক্ষা বা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এই প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে সময়োপযোগী এক পদক্ষেপের কথা শুক্রবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মানোন্নয়নে সহজ শর্তে বড় অঙ্কের ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর (পিইডিপি-৪) আওতায় আগামী ৫ বছরে ৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেবে সংস্থাটি। বাংলাদেশী মুদ্রায় এই সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। এছাড়া পরিসংখ্যানের গুণগত মানোন্নয়নেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) প্রকল্পের আওতায় দেড় কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত আলাদা চুক্তি সই হয়েছে। উল্লেখ্য, বিশ^ব্যাংক ১৯৯৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে, যা সব শিশুর প্রাইমারী স্কুলে ভর্তির লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়েছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সব শিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী সেই লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে। এ কথা সত্য যে, মানসম্পন্ন শিক্ষা উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ের সংখ্যা সাম্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে। উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশ হওয়ার যে ভিশন বাংলাদেশের রয়েছে, প্রাইমারী শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে নজর দেয়ার মাধ্যমে তা আরও দৃশ্যমান হবে। জানা গেছে, পিইডিপি-৪ কর্মসূচীর আওতায় আগামী পাঁচ বছরে প্রাইমারীতে এক লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়ন করা হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান প্রায় চার লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। উন্নয়ন করা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর ব্যবস্থাও। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রথম হতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমান পাঠ্যসূচীর সংশোধন এবং সব বিদ্যালয়ে যোগ্যতাভিত্তিক টিচিং লারনিং শিক্ষা উপকরণ প্রদান ও নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে। যে কোন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে কতটুকু ন্যায় নীতিবান, আদর্শবান, চরিত্রবান হবে কিংবা দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে তাঁর প্রাথমিক জীবনের শিক্ষার ওপর। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব তাই অপরিসীম। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে কি করা উচিত, এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র, সমাজ এবং শিক্ষকের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সমস্যা এবং তা উত্তরণে কিইবা করণীয় সে সব বিষয় নিয়ে আলোকপাত করাই এই পদক্ষেপের মুখ্য উদ্দেশ্য। আমরা জানি, এক দশক আগেও বাংলাদেশে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীর হার ছিল খুব কম এবং মেয়েদের হার ছিল আরও কম। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ যেমন সময়মতো বই বিতরণ, বিনা বেতনে শিক্ষা, ফ্রি টিফিনের ব্যবস্থা, বাল্য বিবাহ রোধসহ নানা শিক্ষাবান্ধব পদক্ষেপের কারণে স্কুলগামী ছেলেমেয়ের সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি শিক্ষার হারও প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতেও তা সহায়ক হবে। সময়ের হাত ধরে শিক্ষা ও বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা এর বাইরে নয়। ফলে অভিজ্ঞতা অর্জনের চেয়ে অর্থ উপার্জনের দিকে ঝোঁক বেশি মনে হচ্ছে। সে কারণে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মেধাশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। এই বাণিজ্যিক মনোভাব সার্বজনীন জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে বাধা। এই অবস্থার অবসান জরুরী। এই ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করব, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই অর্থ সঠিক পথে পরিচালিত হবে। শিক্ষার্থীরা একটি অভিজ্ঞতালব্ধ ও বাস্তবসম্মত আধুনিক শিক্ষা লাভ করবে এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
×