ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোন কেন্দ্রেই বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি;###;দু’একটিতে কাউন্সিলর প্রার্থী ও সমর্থকদের ধস্তাধস্তি

নৌকার বিশাল জয় ॥ স্মরণকালের শান্তিপূর্ণ ভোট গাজীপুরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৭ জুন ২০১৮

নৌকার বিশাল জয় ॥ স্মরণকালের শান্তিপূর্ণ ভোট গাজীপুরে

গাফফার খান চৌধুরী/মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম গাজীপুর থেকে ॥ গাজীপুরের নগর পিতা হিসেবে জনগণের রায় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থীকে পেছনে ফেলে অবিস্মরণীয় জয়ের পথে রয়েছেন। রাত ২টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পেয়েছেন ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৪ ভোট। অপর দিকে বিএনপি প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ১ লাখ ৭০ হাজার ১৮৫ ভোট। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুজনের ভোটের ব্যবধান রয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ২০৯ ভোট। ভোটের হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নিশ্চিত জয়ের পথেই রয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মোট কেন্দ্র রয়েছে ৪২৫টি। এর মধ্যে অনিয়মের অভিযোগে ৯ কেন্দ্রে ভোট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে আর কোন কেন্দ্রে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এদিকে দিন শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সকাল আটটায় ভোট শুরু হওয়ার সঙ্গে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় কেন্দ্রগুলোতে। ভোটারদের চাপে অনেক কেন্দ্রে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের চাপ এতটাই বেশি ছিল যে, কর্তৃপক্ষকে থেমে থেমে ভোট নিতে হয়েছে। পাঁচটি কেন্দ্রে ভোটারদের চাপের কারণে ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে কয়েক মিনিটের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। সকালে নারী আর নতুন ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব কেন্দ্রে নারী ভোটারের পাশাপাশি পুরুষ ভোটারদেরও ঢল নামে। ভোটাররা জানিয়েছেন এমন স্বচ্ছ এবং উদ্বেগ, উৎকণ্ঠাহীন পরিবেশে ভোটগ্রহণ গাজীপুরবাসী আগে কখনও দেখেনি। কোন কেন্দ্রেই বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দু-একটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। বেলা চারটায় ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু হয়। এর মধ্যে ছয়টি কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়। সন্ধ্যার আগে এই ছয়টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে দুটির ফল ঘোষণা করা হয়। দুটি কেন্দ্রেই মেয়র পদে আওয়ামী লীরেগর প্রার্থী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন। ইসিতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ॥ এদিকে গাজীপুর সিটি নির্বাচন চলাকালে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের আলাদা প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে বেঠক শেষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাংবাদিকদের বলেন, এখনও পর্যন্ত যে তথ্য আছে তাতে ২১টি কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়েছে পুলিশ, জ্যাকেট পরা ডিবি পুলিশ এবং সাদা পোশাক পরা পুলিশের নেতৃত্বে। আমাদের এজেন্টদের প্রথমে একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ডিবি পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়, বলে চলেন কথা আছে। অনেক জায়গায় আমাদের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানকার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে জ্যাকেট পরা ডিবি পুলিশ রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। খুলনা সিটি নির্বাচনের মতো গাজীপুর সিটি নির্বাচনের শুরু থেকেই সেখানকার পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি। ইসির মোবাইল টিম, মনিটরিং টিম থেকে আমরা কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। প্রিসাইডিং, রিটার্নিং অফিসার যদি পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, সেই যুদ্ধ করার মতো ক্ষমতাতো আমাদের হাতে নেই। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন সরকার যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে সাজানো নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ইসিতে গিয়ে অভিযোগ করে টেলিফোনে বিএনপির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা জানতে পারি যে সোমবার রাতে বিএনপির কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অরাজকতা সৃষ্টির জন্য টেলিফোনে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে ফজলুল হক মিলন ও মেজর (অব) মিজানের কণ্ঠ রয়েছে বলে আমরা বুঝতে পেরেছি। ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছিল। তিনি বলেন, সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ আছে। এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করার মতো অবস্থা এখনও তৈরি হয়নি। গাজীপুর ভোটে ইসি সন্তুষ্টি ॥ এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, নিজস্ব পর্যবেক্ষকের মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে ভোটগ্রহণ উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে বলে জেনেছি। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে বলেন, একটা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলররা নির্বাচন করেন। তাদের দ্বন্দ্বের কারণে হয়তো ৯ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আগেই কর্মকর্তাদের বলেছিল কোন প্রকার অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। তাই ৯ কেন্দ্রে অনিয়ম বরদাস্ত করা হয়নি। তিনি জানান গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনের ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ৯ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪১৬টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ সিটিতে যে ভোটগ্রহণ হয়েছে তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন ভবনে গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ।
×