ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াইফাই প্রকল্পে প্রশিক্ষণের সুফল

তথ্যপ্রযুক্তিতে অবদান রাখতে শুরু করেছেন ৩০ হাজার নারী উদ্যোক্তা

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২০ জুন ২০১৮

 তথ্যপ্রযুক্তিতে অবদান রাখতে শুরু করেছেন ৩০ হাজার নারী উদ্যোক্তা

ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ৩০ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে ‘উইমেন এ্যান্ড আইসিটি ফ্রন্টিয়ার ইনিশিয়েটিভ’ (ওয়াইফাই) প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারা এ বছর দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবদান রাখতে শুরু করবেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন সহজ হবে। ২০২১ সালের আগেই এই সেক্টর হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় খাত। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘উইমেন এ্যান্ড আইসিটি ফ্রন্টিয়ার ইনিশিয়েটিভ’ (ওয়াইফাই) প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও জীবনের সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০ হাজার নারীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উচ্চতর পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী ৩ বছরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২ লাখ ৬০ হাজার নারীকে টেকসই নারী উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে ‘মোবাইল ট্রেনিং বাস’ চালু করা হয়েছে। ‘ন্যাশনাল হাইস্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্টের’ আওতায় নারীদের জন্য প্রোগ্রামিং কনটেস্ট চালু করা হয়। নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তিতে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে এ সব কার্যক্রম আরও ফলপ্রসূ ও টেকসই হবে। ফলে নারীরা সমাজ উন্নয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। বর্তমানে নারীরা ই-কমার্স ও এফ-কমার্সে এগিয়ে এসেছে। তারা তাদের মেধার স্বাক্ষরও রাখছে। এবার ওয়াইফাই কার্যক্রমের মাধ্যমে এ দেশের উদ্যোমী নারীরা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও সরকারের সহযোগিতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশ পুরোপুরি তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম্পিউটার দিলেই দক্ষ জনবল সৃষ্টি হবে না। এজন্য দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন হবে। প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা হবে। এ বছরের মধ্যে দেশে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদের প্রয়োজন হবে। সরকার বিপুলসংখ্যক তথ্যপ্রযুক্তি তৈরি করতে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। নতুন করে আরও কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে এক লাখ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার টার্গেট রয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ হাজার তরুণ-তরুণীকে ফার্স্ট ট্রাক ফিউচার লিডারের (এফটিএফএল) প্রশিক্ষণ, ১০ হাজার জনকে টপআপ আইটি এবং ২০ হাজার জনকে ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শুরু করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দেশে ১৩টি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলোতে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ প্রয়োজন হবে। সূত্র জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি হবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। এই খাত থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একই সময়ে ২০ লাখে বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরি করা হবে। এই ২০ লাখ পেশাজীবী জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য সারাদেশে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়েছে। দেশের গ্রামাঞ্চল থেকেও যেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা কাজ করতে পারেন এমন অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কানেক্টিভিটি বা যোগাযোগের মাধ্যম ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল উন্নয়ন করা সম্ভব না। ইতোমধ্যে দেশের অনেক অঞ্চলে কানেক্টিভিটি তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে দেশের সব ইউনিয়ন কানেক্টিভিটির আওতায় চলে আসবে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আইসিটি বিষয়ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে একজন শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে বের হবেন। ইনফো-৩ প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ প্রান্তিক পর্যায়ের দফতরে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ প্রদান, ১৫ হাজার প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, ডিসি ও ইউএনও অফিসে কম্পিউটার ল্যাব, ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেন্টার, ১০ হাজার গ্রোথ সেন্টারে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স ও রেগুলেটরি ল্যাব, সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব ও ভিএলএস ল্যাব স্থাপনসহ গ্রামপর্যায়ে ই-কমার্স চালু করা হচ্ছে। প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারে একটি করে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স প্রতিষ্ঠা করা হলে গ্রামের মানুষ নিজ বাড়িতে বসেই ব্যবসা-বাণিজ্য, নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এতে গ্রামীণ জনপদের মানুষের দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও ডিজিটাল বৈষম্য রোধ সম্ভব হবে। ১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
×