ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযুক্তির ব্যবহারেও চমক দেখাবে রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৪ জুন ২০১৮

প্রযুক্তির ব্যবহারেও চমক দেখাবে রাশিয়া

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। ফুটবলে ইতোমধ্যে গোললাইন প্রযুক্তির ব্যবহার হলেও এবারই প্রথমবারের মতো মাঠে আরও নিখুঁত খেলা উপহার দেয়ার জন্য রেফারিদের জন্য ভিডিও এ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিং (ভিএআর) চালু হচ্ছে। নতুন এই প্রযুক্তি নিয়ে খুশি আন্তর্জাতিক রেফারি কমিটির প্রধান পিয়েরলুইজি, সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। তিনি বলেন, ‘আমরা ভিডিও এ্যাসিস্টেন্ট রেফারিং নিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছি। এমন একটা আয়োজনে যা মাঠের ফুটবলকে আরও নিখুঁত ও বিতর্কমুক্ত রাখবে। আমরা খুবই আনন্দিত। গত দুই বছরে এক হাজার খেলার ওপর চালানো পরীক্ষায় এটি সফল হয়েছে। ওই পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে ভিএআর সুনির্দিষ্টভাবে রেফারিদের সাহায্য করবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই প্রযুক্তি আরও স্বচ্ছ ও ন্যায্যতাভিত্তিক খেলা উপহার দিতে সাহায্য করবে যা আমরা চাই, সারাবিশ্বের অগণিত ফুটবলপ্রেমীও সেটাই চায়।’ নতুন এই ভিএআর মূলত ক্রিকেটের মতো ফুটবলের থার্ড আম্পায়ার। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো প্রচলন হওয়া গোললাইন প্রযুক্তির সাফল্যের এমন একটি সর্বজনীন আয়োজনে প্রযুক্তির আরও সাহায্য নেয়ার দাবি জানান ফুটবলভক্তরা। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল সিদ্ধান্ত নিতে রেফারিকে সাহায্য করবে। আর তাই নতুন প্রযুক্তির খোঁজে নামে ফিফা। প্রায় দুই বছর ধরে কয়েক শ’ ম্যাচে পরীক্ষা চালানোর পর এ বছরের মার্চে ভিডিও এ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) নামের প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রাশিয়াতেই প্রথমবারের মতো রেফারিকে সাহায্য করবে এই ভিএআর। প্রযুক্তিটি অনেকটা ক্রিকেটের থার্ড আম্পায়ারের মতোই। পর্দার সামনে একদল রেফারি বসে থাকেন। তারা ভিডিও ফুটেজ দেখে পরীক্ষা করে মাঠের রেফারিকে তথ্য জানান। মূল রেফারি তাদের কথার ওপর নির্ভর করতে পারেন, চাইলে নিজেও ভিডিও ফুটেজ পরখ করে দেখতে পারেন। ফুটেজ দেখে মূল রেফারির যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা-ই চূড়ান্ত। মূলত গোল, পেনাল্টির সিদ্ধান্ত, লালকার্ড দেখানো ও খেলোয়াড়কে শনাক্ত করার মতো ক্ষেত্রে ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০০ খেলায় এটি পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়েছে। ফিফা সভাপতির মতে এসব খেলায় ভিএআর ৯৩% থেকে ৯৯% ভাগ সফল। এই প্রযুক্তি জার্মানি, ইতালি এবং ইংল্যান্ডের ঘরোয়া কোন কোন লীগে ব্যবহার করা হয়। তারপরও দুনিয়াজুড়ে ফুটবল সমর্থক ও বিশেষজ্ঞরা এটির প্রচলন নিয়ে ব্যাপক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছেন। তাদের শঙ্কা ভিএআর প্রযুক্তি খেলাকে মন্থর করে দেবে। চলতি মৌসুমে ইংলিশ ফুটবলে এফএ কাপ ও কারাবাও কাপে ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহারের পর টটেনহ্যাম কোচ মরিচিও পচেত্তিনো এর সমালোচনা করেন। মজার বিষয় এবার মাঠের বাইরে থাকা কোচের জন্যও থাকবে প্রযুক্তি। যা ইলেকট্রনিক পারফর্মেন্স এ্যান্ড ট্র্যাকিং সিস্টেমস (ইপিটিএস) নামে পরিচিত। এ প্রযুক্তি দলের কোচকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে। দুই দলের কোচের জন্যই এ সুবিধা রাখা হবে। দুটি ক্যামেরার মাধ্যমে দুই দলের খেলোয়াড় ও বলের গতিবিধি ধারণ করা হবে। সেই ফুটেজ ও বিভিন্ন তথ্য ইপিটিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি পাঠানো হবে দুই দলের নির্ধারিত ফুটেজ বিশ্লেষক ও চিকিৎসক দলের কাছে। এ তথ্যগুলো দলের কোচ জানতে পারবেন। ম্যাচ চলাকালে বিশেষ কিংবা জরুরী সিদ্ধান্ত নিতে এ তথ্য ব্যবহার করবেন তারা। খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য ও গাতিবিধি ট্র্যাকিং ডিভাইসে প্রথমে সমর্থন না করলেও নীতিমালা বদলে এমন ডিভাইসের ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ফিফা। তৈরি করা হয় বিশেষ ফিটনেস ট্র্যাকার। ট্র্যাকারগুলো খেলোয়াড়দের বুকে ও পিঠে ব্যবহার করতে হবে। ডিভাইসগুলো রিয়েল টাইম খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য ও গতিবিধি ধারণ করতে সক্ষম। ঘরের দর্শকদের মাঠের অনুভূতি দিতে এবারের বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ সরাসরি ভার্চ্যুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) প্রযুক্তিতে এবং ফোরকে রেজুলুশনে স্ট্রিম করবে বিবিসি স্পোর্টস। যারা ভিআর হেডসেট পরে খেলা দেখবেন, তারা শব্দেও পাবেন মাঠের আবহ।
×