ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে গেছে রাতের ঢাকা

আলোকোজ্জ্বল দিনের মতোই- সেহ্রি পর্যন্ত কেনাকাটা

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১০ জুন ২০১৮

আলোকোজ্জ্বল দিনের মতোই- সেহ্রি পর্যন্ত কেনাকাটা

মোরসালিন মিজান ॥ সকাল হতেই দোকানের সামনে ক্রেতা। কোন কোন বিপণিবিতান খোলার আগেই ভিড়। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। অথচ কী আশ্চর্য! সারাদিনেও কেনাকাটা শেষ হচ্ছে না। বরং রাতের ঢাকা আরও আলোকোজ্জ্বল। বহু মানুষ ইফতারের পর ঘর থেকে বের হচ্ছেন। কার কী পছন্দ, মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে খোঁজাখুঁজি। কোন কোন মার্কেট খোলা থাকছে সেহরি পর্যন্ত। এভাবে ঈদ সামনে রেখে বদলে গেছে রাতের রাজধানী। আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দারুণ জমে উঠেছে কেনাকাটা। শুরুটা হয়েছিল সেই প্রথম রমজান থেকে। শেষ হয়নি। শেষ হতে চায় না। বরং যারা বাকি ছিলেন তারাও কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়েছেন। ফলে সকাল থেকেই মার্কেট শপিংমলগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। মানুষ আর মানুষ। এত রোদ! গরমে গা ভিজে যাচ্ছে। তার পরও ঈদে নতুন জামা চাই। কিনতে ছোটাছুটি। তবে অনেকেই এ ছোটাছুটির মধ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস করেন না। ইফতার সেরে কেনাকাটার জন্য বের হচ্ছেন তারা। এ সময় রোদ থাকে না। যানজটটাও কমে আসে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঝক্কিহীন কেনাকাটা। কোন কোন এলাকায় রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকছে দোকানপাট। কোথাও কোথাও আবার সেহরি পর্যন্ত। মনেই হয় না রাতের বেলা। যেন চিরচেনা দিন। ক্লান্তিহীন উৎসব প্রস্তুতি। গত কয়েকদিন গভীর রাতে ঢাকার বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার কিছু আগে যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে দেখা যায়, দিনের চেহারা। রাত ১২টা বাজতে চলেছে। বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু ক্রেতা বিক্রেতা কারও মাঝে তাড়া দেখা গেল না। দিন না রাত সে নিয়ে কে ভাববে? ভাবার মতো কাউকে খুঁজে মুশকিল ছিল। অভিজাত শপিংমলের অধিকাংশ দোকান ছিল খোলা। এখানে বহু বিখ্যাত ব্র্যান্ডের শোরুম। পোশাকের শোরুমগুলোতে বেশি ভিড়। লারিব’র শোরুমে মেয়েরা পছন্দের জামা খুঁজ ছিলেন। কখন থেকে এই খোঁজাখুঁজি? জানতে চাইলে মানসুরা নামের এক তরুণী বললেন, সন্ধ্যার পর আমি ও আমার ছোট ভাই একসঙ্গে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। আরও দুটি মার্কেট হয়ে এখানে এসেছি। কোথাও জামা পছন্দ হয়নি। ঈদে এক্সক্লুসিভ জামা চাই। সেটি না পাওয়া পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি চলবে। অন্যসময় হলে এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতে পারতাম না। এখন ঈদ। কেউ বকবে না বলে জানান তিনি। ইয়োলো’র শোরুমে পাঞ্জাবির বড় সংগ্রহ। এখানে অপেক্ষাকৃত তরুণরা ভিড় করেছিলেন। কিন্তু এত রাতে কেন? জানতে চাইলে হাবিব নামের এক তরুণ বলেন, দিনের বেলায় অফিস থাকে। যানজট ঠেলতেও আর ইচ্ছে করে না। আমার বাসা মহাখলী। সেখান থেকে এখানে আসতে দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি লাগত। এখন মাত্র ৪০ মিনিটে এসেছি। যাওয়ার সময় আরও দ্রুত যেতে পারব। এসব সুবিধার কথা মাথায় রেখেই রাতের বেলায় শপিং বলে জানান তিনি। যমুনা ফিউচার পার্কের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত প্রায় চারদিন ধরে রাত ১টা পর্যন্ত খোলা থাকছে দোকানপাট। এর পরও যদি ক্রেতা পাওয়া যায় তারা দোকান চালু রাখবেন। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন বাধা নেই বলে জানা যায়। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের রাতের পরিবেশ আরও জমজমাট। গত কয়েকদিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দিনের মতোই উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রথম তলা থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত যত পোশাকের দোকান সব খোলা। বড় শোরুমগুলোতে মোটামুটি পা ফেলা যায়। ছোটগুলোতে গায়ে গা লাগা ভিড়। বিখ্যাত ব্র্যান্ড ইনফিনিটির শোরুমে কথা হয় হৃদি ও সায়মন দম্পতির সঙ্গে। সায়মন বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই চাকরি করি। দিনের বেলায় রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে যেতে হয়। তাই রাতে কেনাকাটা করতে আসা। হৃদি বলেন, রাতে শপিংমলে ভিড় কম থাকে। ভাল করে দেখে কেনা যায়। একটু বেড়ানোও যায়। রাতে কেনাকাটা করে ধানম-ির একটি রোস্তরাঁয় সেহরি করে বাসায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। বসুন্ধরা সিটির একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই শপিংমল এখন রাত দেড়টা থেকে ২টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। ক্রেতা থাকলে অনেকেই সেহরি পর্যন্ত দোকান খোলা রাখছেন। কেন জানতে চাইলে জুয়েল নামের এক দোকানি বলেন, রাতে দিনের মতো ভিড় হয় না। তবে যারা আসেন তারা ঘুরাঘুরি কম করেন। সবাই কেনায় মনোযোগী। এ কারণে দোকানমালিকরা রাতের কেনাকাটাকে উৎসাহিত করেন। আজ কালের পর সব দোকানই সেহরি পর্যন্ত খোলা থাকতে পারে বলে জানান তিনি। নিউ মার্কেট ও গাউছিয়া এলাকা সারা বছরই জমজমাট। তবে ঈদ উপলক্ষে ভিড় ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। সারাদিনের মতো রাতেও খোলা থাকে দোকানপাট। গত বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে নিউ মার্কেটে গিয়ে চোখ তো ছানাভরা। এখানে নারীদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন বয়সী নারীরা দল বেঁধে শপিং করছেন। রাত কত বেজেছে দেখার জন্য কেউ ঘড়ির দিকেও তাকাচ্ছেন না। এখানে শুধু পোশাক নয়, জুতা, প্রসাধনী, গৃহসজ্জা সামগ্রী, ঘরের পর্দা, চুলের ক্লিপসহ অনেককিছু বিক্রি হচ্ছে। তাই সব ধরনের দোকানপাট খোলা। ক্রেতারও কোন অভাব নেই। মিল্লাত নামের এক দোকানি বললেন, সকালে দোকান খুলতে হবে। তাই রাতে বন্ধ করি। তা না হলে দোকান একবার খুলে আর বন্ধ করতাম না। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে বলে জানান তিনি।
×