ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদ্রাসা ডিজির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩ জুন ২০১৮

মাদ্রাসা ডিজির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বেয়াই জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে গোপন বৈঠকসহ মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালকের জামায়াত কানেকশনের ঘটনা তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এদিকে জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীরকে পাঠানো নির্দেশের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। ইতোমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীরকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন এবং কমিটি কর্তৃক দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে মঙ্গলবার জনকণ্ঠ পত্রিকায় ‘জামায়াত নেতার সঙ্গে মহাপরিচালকের রহস্যজনক গোপন বৈঠক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই তোলপাড় শুরু হয়। বিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জনকণ্ঠের ওই প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে সোমবার মহাপরিচালকের অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দিয়ে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর বেয়াই নানা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে বৈঠকের তথ্য। জনপ্রিয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলার আসামিও ওই জামায়াত নেতা। ঘটনাকে ‘মিটিং’ বলতে রাজি না হলেও আলোচনার কথা জনকণ্ঠের কাছে স্বীকারও করেছেন মহাপরিচালক। কি আলোচনা হয়েছে তা সাংবাদিকদের খুঁজে বের করার পরামর্শও দেন মহাপরিচালক। বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বোরাক টাওয়ারে অবস্থিত অধিদফতের মহাপরিচালক তার নিজ অফিস কক্ষে বৈঠক করেন। বৈঠক চলে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। এরপর শনিবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে মহাপরিচালকের জামায়াত কানেকশনসহ প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক জামায়াতী তৎপরতার তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের আস্তানা গড়ে তুলতে নানাভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের গোয়েন্দা শাখার সাবেক সদস্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে। ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম থেকে শুরু করে অধিদফতরে জামায়াত সিন্ডিকেট গঠন করা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মকর্তাদের অপমান অপদস্থ থেকে শুরু করে কোনটিই বাদ রাখেননি তিনি। তার প্রত্যক্ষ মদদে মিরপুর শাহআলী ফাজিল কামিল মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত শিক্ষক জামায়াত নেতা আফজাল হোসেনকে দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমন তথ্য বেরিয়ে আসার পর টনক নড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা বিশেষ একটি গোষ্ঠীর কয়েক কর্মকর্তা চান মহাপরিচালকে রক্ষা করতে। এজন্য তারা দুদিন ধরে তার হয়ে বিভিন্ন স্থানে টোলিফোনও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্দেশের পর বিশেষ গ্রুপের কেউ প্রকাশ্যে মহাপরিচালকের পক্ষে কথা বলার সাহস পাবেন না বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর বেয়াই জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে গোপন বৈঠকসহ মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালকের জামায়াত কানেশনের ঘটনা তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থাও। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই মহাপরিচালকের জামায়াতী কানেকশনসহ অন্যান্য কর্মকা- খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেয়ার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও বলেছেন, পত্রিকার প্রতিবেদনে মহাপরিচালকের যে রাজনৈতিক বৈঠকের কথা বলা হয়েছে। এটা তদন্তের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাই সঠিক প্রতিষ্ঠান। আমরা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেব। কোন ছাড় দেয়া হবেনা। এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, অবশ্যই গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি দেখছে। দেরি হবে না। দ্রুতই তদন্ত হবে ও ব্যবস্থা হবে। এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সব পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়নের দাবি জানিয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার ও মহাসচিব সাহেদুল খবীর চৌধুরী সমিতির পক্ষে ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের এ দাবি তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে তারা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ন্যায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের নিয়োগবিধি প্রণয়ন করার দাবি জানিয়েছেন। সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, মাদ্রাসা অধিদফতরের প্রতিষ্ঠাকাল থেেেকই আমি এর মহাপরিচালকসহ সব পদে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়নের পক্ষে কথা বলে এসেছি। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সাক্ষাতকালে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত লিখিত দাবিনামায়ও মাদ্রাসা অধিদফতরের বিষয়টিও ছিল। আজ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন নবগঠিত একটি অধিদফতরের কী অবস্থা! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদ্রাসার উন্নতিকল্পে আলাদা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন যদি ব্যক্তির অদক্ষতায় এর সুফল ভোগ না করা যায় তার দায় কে নেবে?
×