ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে শেখ হাসিনা ধরলা সেতু আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩ জুন ২০১৮

কুড়িগ্রামে শেখ হাসিনা ধরলা সেতু আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে ‘শেখ হাসিনা ধরলা সেতু’ আজ রবিবার উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল দশটায় গণভবন থেকে ফুলবাড়ী উপজেলার আছিয়ার বাজার এলাকায় ব্রিজের পূর্ব অংশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ব্রিজটির শুভ উদ্বোধন করবেন। ব্রিজ উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার সকালে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত যুগ্ম সচিব রইচ উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল আলম, তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশীদ, পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম, ডিডিএলজি রফিকুল ইসলাম সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু ম-ল, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জাফর আলী, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু প্রমুখ। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল সর্বসাধারণের সুবিধার্থে সেতুটি চলাচলের জন্য সাময়িকভাবে খুলে দেয়া হয়। রবিবার সেতুটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর ওপর ৯৫০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নামকরণ ‘শেখ হাসিনা ধরলা সেতু’ হিসেবে উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলবাড়ী উপজেলায় ধরলা নদীর উপর ৯৫০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার মধ্যবর্তী কুলাঘাট নামক স্থানে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে সেটি একনেকে অনুমোদন হয়। এটি নির্মাণে এলজিইডি ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে। নির্মাণে ব্যয় হয় ২০৬ কোটি ৮৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা। ৯৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ডাবল লেন সেতুর প্রস্থ ৯ দশমিক ৮০ মিটার, ক্যারেজওয়ে ৭ দশমিক ৩০ মিটার ও সেতুর উভয় পাশের্^ ১ মিটার চওড়া ফুটপাথ রয়েছে। পিসি গার্ডার নির্মিত সেতুটিতে মোট স্প্যান রয়েছে ১৯টি। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার। ১৮টি পিয়ার ও ২৪০টি পাইল রয়েছে সেতুটিতে। নৌ-চলাচলের জন্য ন্যূনতম নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়েছে ৭ দশমিক ৬২ মিটার। রাতে নিরাপদে চলাচলের জন্য সেতুটিতে বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। ২ হাজার ৯১৯ সংযোগ সড়কের মধ্যে কুড়িগ্রাম প্রান্তে ৮৯২ মিটার এবং লালমনিরহাট জেলা প্রান্তে ২ হাজার ২৭ মিটার। এছাড়াও উভয় জেলায় নদী শাসনের জন্য ফুলবাড়ী অংশে ১ হাজার ২৫৬ মিটার এবং লালমনিরহাট অংশে ২ হাজার ২৩৮ মিটার নদী শাসনের আওতায় আনা হয়েছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য ১৩ হাজার ৮৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এতে ফুলবাড়ী অংশে ১০ হাজার ৫৬৮ একর এবং লালমনিরহাট অংশে ৩ হাজার ৮৮ একর। এই সেতু নির্মাণের ফলে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, মূল সেতুতে নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১৩১ কোটি ৫৮ লাখ, সংযোগ সড়ক তৈরিতে ১৩ কোটি ৯ লাখ, নদী শাসনে ৪৩ কোটি ৫০ লাখ এবং ভূমি অধিগ্রহণে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সিমপ্লেক্স ও নাভানা কনস্ট্রাকশন গ্রুপ গত ডিসেম্বর মাসেই ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করে। এই সেতটিু নির্মাণের ফলে জেলার কৃষিভিত্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, এতদিন ধরলা নদীর কারণে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলা থেকে ফুলবাড়ী উপজেলা বিচ্ছিন্ন ছিল। সেতুটি নির্মাণের ফলে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী, নাগেশ^রী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ স্বল্প সময়ে বিভাগীয় শহর রংপুর যাতায়াত করতে পারবে। গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ ফেরিঘাট ও ফেরি সার্ভিস ॥ স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, মুন্সীগঞ্জের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ ফেরিঘাট ও ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন হচ্ছে আজ রবিবার। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ রবিবার সকালে মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া ফেরিঘাট ও ফেরি সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্য দিয়ে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের খুলে দেয়া হবে মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া ফেরি সার্ভিস। মেঘনা নদীতে এই ফেরি সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে জেলা সদর থেকে গজারিয়া উপজেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে দূরত্ব কমে আসবে। জেলা সদর থেকে গজারিয়া উপজেলায় যেতে হলে ৭০ কিলোমিটার সড়ক পথ পাড়ি দিতে হতো। ফেরি সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে মাত্র ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদর থেকে গজারিয়ায় পৌঁছানো হবে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের ফেরিঘাট ও ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া নব-নির্মিত ফেরিঘাট এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে সেখানে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে সাজসজ্জার কাজ শেষ। এর আগে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী এই রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করার জন্য নৌমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই এর কার্যক্রম শুরু হয়। মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া ফেরিঘাট ও ফেরি সার্ভিস চালু হলে এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার বিকল্প সংযোগ হিসেবে বিবেচিত হবে। গজারিয়ায় ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকা-, বাস্তবায়নাধীন শিল্পপার্ক, গার্মেন্টস এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রের বিষয়গুলো বিবেচনায় এ ফেরি সার্ভিস চালু করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে মংলা ও পায়রা বন্দরের যোগাযোগের প্রবেশদ্বার হবে গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ নৌ-ফেরি সার্ভিস রুট। এ রুটের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার এবং ফেরি পারাপারে সময় লাগবে ৩০ মিনিট। এরই মধ্যে মুন্সীগঞ্জ ও গজারিয়া ফেরিঘাটে দুটি পন্টুন স্থাপন করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃক নির্মিত ‘স্বর্ণচাপা’ মিনি ইউটিলিটি টাইপ ফেরি দিয়ে মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া রুটে এ সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ রুটে যানবাহন সংখ্যা বাড়লে ফেরির সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হবে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তবে মুন্সীগঞ্জ থেকে ফেরি ঘাট ও ভবেরচর থেকে ফেরি ঘাট এই দু’পাশের রাস্তার বেহাল দশার কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই ফেরি সার্ভিস ব্যবস্থা বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যতদ্রুত সম্ভব রাস্তা ঘাট সংস্কারের মধ্য দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করার দাবি সকলের। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সায়েলা ফারজানা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৩ জুন রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি সার্ভিসের উদ্ধোধন করবেন। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর ৪ তারিখ থেকেই স্বাভাবিকভাবে যানবাহন ও জনসাধারণ নিয়ে ফেরি চলাচল করতে পারবে।
×